শিরোনাম

South east bank ad

১০০ বছরের মধ্যে বিরল স্থাপনা রামগতির আস-সালাম মসজিদ

 প্রকাশ: ২৯ জানুয়ারী ২০২২, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   ইসলাম ও জীবন

বিডিএফএন টোয়েন্টিফোর.কম

১০০ বছরের মধ্যে বিরল স্থাপনা রামগতির আস-সালাম মসজিদ লক্ষ্মীপুরের রামগতির চোখধাঁধানো আস-সালাম জামে মসজিদটি একবার দেখতে প্রতিদিনই ভিড় জমাচ্ছে মুসল্লি ও দর্শনার্থীরা।

গতকাল শুক্রবার (২৮ জানুয়ারি) রেকর্ড সংখ্যক মুসল্লি এ মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেছেন। দৃষ্টিনন্দন মসজিদটিতে এক ওয়াক্ত নামাজ পড়তে জেলা সদর, রামগঞ্জ, রায়পুর, কমলনগর উপজেলাসহ নোয়াখালী ও চাঁদপুরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ছুটে এসেছে সহস্রাধিক মুসল্লি।

এদিকে অপরূপ এ মসজিদের স্মৃতি ধরে রাখতে ডিএসএলআর ক্যামেরা বা মুঠোফোনে ছবি তোলেন অনেকে। নানা ভঙ্গিতে মসজিদের বিভিন্ন কারুকার্যের সঙ্গে দাঁড়িয়ে নিজেকে ক্যামেরায় বন্দি করতেই ব্যস্ত হয়ে পড়েন মুসল্লীরা। অন্যান্য ধর্মের লোকজনও মসজিদটির সৌন্দর্য উপভোগ করতে ছুটে যাচ্ছেন মাইলের পর মাইল। মসজিদটি আধুনিককালে দেশের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন এক স্থাপনা বলে দাবি করছেন দর্শনার্থীরা।

মুসল্লিরা জানিয়েছেন, গণমাধ্যম ও ফেসবুকে দেখে মসজিদটি দেখার জন্য কৌতূহল সৃষ্টি হয়। একই সঙ্গে মসজিদে এসে নামাজ পড়ার সুযোগও হয়েছে। মসজিদের প্রতিটি অংশই কারিগর নিপুণ হাতে সাজিয়েছেন। ভেতর থেকে যেমন বাইরে দেখা যায়, তেমনি বাইরে থেকেও ভেতরে নামাজের দৃশ্য চোখে পড়ে। দুটি দরজা থাকলেও একটি জানালাও দেখা যায়নি মসজিদে। এমন স্থাপনা এর আগে চোখে পড়েনি।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দৃষ্টিনন্দন মসজিদটি বৈদ্যুতিক বাতি ছাড়াই প্রাকৃতিক আলোয় সব সময় উজ্জ্বল ও ফরসা থাকে। বর্ষায় মেলে বৃষ্টির ছোঁয়া। আর এখন শীতে মুসল্লিরা উপভোগ করছেন কুয়াশা ও শীত। পূর্ণিমা রাতে চাঁদের আলো মুগ্ধতা ছড়ায় মসজিদের অন্দরে। দ্বিতল এ মসজিদে কোনো জানালা নেই। মসজিদটি নকশাই এমন চারদিক থেকে কোনো বাধা ছাড়াই আলো-বাতাস প্রবেশ করছে ভেতরে। তবে মুসল্লিদের প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য দুটি দৃষ্টিনন্দন দরজা রয়েছে। গরমে মসজিদকে শীতল রাখতে ভেতরে রয়েছে পানি সংরক্ষণের জন্য চারটি জলাধার। গ্রীষ্মকালে মসজিদকে শীতল রাখবে জলাধারগুলোতে স্থান পাওয়া শীতল পাথরগুলো।

মসজিদের খতিব মুফতি হামিদুর রহমান জানান, মসজিদের ভেতরে, নিচে ও দোতলায় প্রায় ৭০০ মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদ চালুর প্রথম জুমায় মাত্র দুই সারি মুসল্লি নিয়ে জামাত করতে হয়েছে। তবে এ জুমায় মুসল্লিদের উপচে পড়া ভিড় ছিল।

তিনি আরও জানান, প্রতিষ্ঠাতা এ মসজিদের প্রচারণা করতে চাচ্ছেন না। কিন্তু মুসল্লিদের মুখে মুখে মসজিদটির নাম ছড়িয়ে পড়ে। আল্লাহ চাইছেন মসজিদটির প্রচার ও প্রসার হোক। এ জন্য এক বছরের মাথার আল্লাহর রহমতে মসজিদের ভেতর ও বাইরে কানায় কানায় পূর্ণ ছিল মুসল্লি।

গতকাল শুক্রবার মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম শান্তুনু চৌধুরী। ক্যামেরায় বক্তব্য না দিলেও তিনি জানিয়েছেন, মসজিদটি দারুণ। বিপুলসংখ্যক মুসল্লি নামাজ পড়তে এসেছে। সবার সঙ্গে নামাজ আদায় করতে পেরে ভালো লেগেছে।

মসজিদের ইমাম ও মুয়াজিন জানান, ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে রামগতি উপজেলার চরপোড়াগাছে ইউনিয়নের শেখের কিল্লা এলাকায় আস-সালাম জামে মসজিদ ও ঈদগাহ সোসাইটি নির্মাণকাজ শুরু হয়। বাংলাদেশি স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান আর্কি গ্রাউন্ড লিমিটেডের স্থপতি নবী নেওয়াজ খান শমীন ও তার দল মসজিদটির নকশা তৈরি করে। ১০ হাজার ৮০০ বর্গফুটের দোতলা এ মসজিদের নির্মাণ ব্যয়ভার বহন করেছে রহিমা মমতাজ ও সাইফ সালাহউদ্দিন ট্রাস্ট। বিরতিহীন কাজের পর ২০২১ সালের শেষের দিকে মসজিদটি মুসল্লিদের ইবাদতের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

এ মসজিদকে ঘিরেই আস-সালাম হাফেজিয়া মাদরাসা গড়ে তোলা হয়েছে। এতে কোরআনে হাফেজ ও ইংরেজি শিক্ষার সমন্বয়ে একটি আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হচ্ছে। তাদের থাকার জন্য উন্নত মানের আবাসিক ব্যবস্থা রয়েছে।

এখানে উন্নত মানের খাবার পরিবেশন করা হয় বলে জানিয়েছেন অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা। তারা জানায়, বিনামূল্যে পোশাক দেওয়া হয় শিক্ষার্থীদের। মাদরাসায় এখন ৬০ জন ছেলে ও ৪০ জন মেয়ে কোরআনে হাফেজ হওয়ার জন্য পড়াশোনা করছে। তবে এখানে পড়তে টাকা নয়, মেধাই প্রধান নিয়ামক হবে। এ ছাড়া একটি বালিকা বিদ্যালয় ও একটি কলেজ স্থাপনকাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। মসজিদের দক্ষিণ পাশেই শিক্ষা কমপ্লেক্সের অধীনে প্রতিষ্ঠানগুলো সাজানো হয়েছে।

এদিকে দক্ষিণ পাশের শেষ মাথায় 'মমতা' নামে প্রতিষ্ঠাতা একটি বাংলো তৈরি করেছেন। বাংলোটিও দর্শনার্থীদের দেখার জন্য উন্মুক্ত রয়েছে। বাংলোটি ফুলসহ দৃষ্টিনন্দন বিভিন্ন প্রজাতির গাছ দিয়ে সাজানো। সব মিলিয়ে ট্রাস্টের এ উদ্যোগটিকে সবাই বলছেন অপরূপ সৌন্দর্যের বাগান।

ট্রাস্ট সূত্র জানায়, আস-সালাম জামে মসজিদটি গত ১০০ বছরের মধ্যে দেশের মধ্যে একটি বিরল স্থাপনা। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ আর জনহিতকর কাজের অংশ হিসেবে ট্রাস্টের এ উদ্যোগ। ২০২১ সালে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পরপরই ‘বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি’ পাওয়ার জন্য মসজিদটির তথ্যচিত্র সুইজারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড আর্কিটেকচার কনফারেন্সে পাঠানো হয়েছে।

BBS cable ad