শিরোনাম

South east bank ad

সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরে পণ্য হ্যান্ডলিংয়ে ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে

 প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   এনবিআর

করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। তবে এর মধ্যেও চালু ছিল কলকারখানা। স্বাভাবিক ছিল পণ্য সরবরাহ কার্যক্রম, যার প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের পণ্য হ্যান্ডলিংয়ে। যে কারণে সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরে পণ্য হ্যান্ডলিংয়ে ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। একই সঙ্গে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষও।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী, শেষ হওয়া ২০২০-২১ অর্থবছরে আমদানি-রফতানি পণ্য ভর্তি ও খালি কনটেইনার মিলে পরিবহন হয় ৩০ লাখ ৯৭ হাজার ২৩৬টি (প্রতিটি ২০ ফুট দীর্ঘ)। এর আগের অর্থবছরে ছিল ৩০ লাখ ৪ হাজার ১৪২টি। সে হিসাবে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ১০ শতাংশ। তবে খালি কনটেইনারের হিসাব এখান থেকে বাদ দিলে এ সংখ্যা আরো কম হবে।

চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান এ বিষয়ে বলেন, গত বছর মার্চে দেশে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পর সর্বাত্মক সাধারণ ছুটি ঘোষণা হয়। ভাটা পড়ে বন্দরের কার্যক্রমে। এবার সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় লকডাউনে বন্দরের কার্যক্রম ব্যাহত হতে দেয়া হয়নি। কভিড-১৯ পরিস্থিতিতে অন্যান্য সেবা বন্ধ হয়ে যায়। তবে চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে পণ্য ওঠানো-নামানোর কার্যক্রম পুরোদমে সচল রাখা হয়েছে। বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিরলস কাজ করে ব্যবহারকারীদের নিরবচ্ছিন্ন সেবা দিয়ে গেছেন। ধাপে ধাপে বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোতেও মনোযোগ ও পদক্ষেপ নিয়েছি।

এদিকে পণ্য হ্যান্ডলিং বৃদ্ধির পাশাপাশি রাজস্ব আহরণের পরিমাণও বেড়েছে। আয় বেড়েছে দেশের সবচেয়ে বড় রাজস্ব আহরণকারী সংস্থা চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষের। তবে বিদায়ী অর্থবছরের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য পূরণ করতে পারিনি কাস্টমস। এর পরেও আগের বছরের চেয়ে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে কাস্টমস।

চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, বিদায়ী অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে আমদানি হওয়া পণ্যের বিপরীতে ৫১ হাজার ৮০০ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে। এর আগের ২০১৯-২০ অর্থবছরে আদায়ের পরিমাণ ছিল ৪১ হাজার ৮৫৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। এ হিসাবে গেল অর্থবছরে রাজস্ব আহরণ বেড়েছে ৯ হাজার ৯৪৬ কোটি ১৪ লাখ টাকা। সেই হিসাবে রাজস্ব আহরণে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ২৪ শতাংশ।

চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার মোহাম্মদ ফখরুল আলম এ প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, বিদায়ী বছরে আমরা ৫১ হাজার ৮০০ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করেছি। তবে চূড়ান্ত হিসাবে এর সঙ্গে আরো প্রায় ২৮০ কোটি টাকার মতো যুক্ত হবে। আগের অর্থবছরের সঙ্গে বিবেচনা করলে এবার প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় করেছি।

কভিড পরিস্থিতিতে রাজস্ব বাড়ার কারণ ব্যাখ্যা করে এ কর্মকর্তা বলেন, জালিয়াতি বন্ধে কঠোর অবস্থানে থাকতে পারা এর অন্যতম কারণ। এছাড়া পণ্যের মিথ্যা ঘোষণা, ভুল এইচএস কোড দেখানো, কমার্শিয়াল প্রডাক্ট টেস্ট জালিয়াতি বন্ধে আইনগত পদক্ষেপ এমনকি ফৌজদারি মামলা পর্যন্ত গিয়েছি। আমদানিকারক, সিঅ্যান্ডএফের পাশাপাশি অনিয়মের প্রমাণ পেলে নিজ দপ্তরের কর্মকর্তাদেরও ছাড় দিইনি। এছাড়া আমদানি পর্যায়ে এলএনজি, ফার্নেস অয়েলের মতো কিছু পণ্যের আমদানি বৃদ্ধিও রাজস্ব বাড়ার একটি কারণ বলে মনে করেন তিনি।

বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, দেশে আমদানি-রফতানির ৯২ শতাংশের বেশি চট্টগ্রাম বন্দরে ব্যবহার করে সম্পন্ন হয়। হ্যান্ডলিং হয়ে থাকে ৯৮ শতাংশ কনটেইনার পণ্য। তবে সংক্রমণের শুরুর দিকে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম ব্যাপক হারে বাধাগ্রস্ত হয়। এতে সার্বিকভাবে প্রবৃদ্ধির হার আশানুরূপ হয়নি। আমদানি-রফতানি কার্যক্রমে করোনা পরিস্থিতির নেতিবাচক প্রভাব না পড়লে কনটেইনার পরিবহন আরো বাড়ত। পরিস্থিতির উন্নয়ন হলে কনটেইনার পরিবহনের হার সামনে আরো অনেক বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীরা বলছেন, কনটেইনার পরিবহনে প্রবৃদ্ধির হিসাব কষে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির চিত্র ধারণা করা যায়। কারণ কনটেইনারে আমদানি-রফতানি পণ্যের বেশির ভাগই হলো শিল্পের কাঁচামাল ও প্রস্তুত পণ্য। রফতানি পণ্যের প্রায় পুরোটাই পরিবহন হয় কনটেইনারে। সাধারণত কনটেইনারে করে পোশাক খাতসহ বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আমদানি হয়। আর রফতানি হয় তৈরি পোশাক, পাট ও পাটজাত পণ্য, হিমায়িত মাছ, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। ২০ ফুট লম্বা কনটেইনারে আমদানি হয় বেশি। আর রফতানি বেশি হয় ৪০ ফুট কনটেইনারে।

তবে চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে বাংলাদেশের যে সম্ভাবনা, তাতে কাঙ্ক্ষিত ফল পেতে সামগ্রিকভাবে বন্দরের আধুনিকায়ন নিশ্চিত করতে হবে বলে মনে করেন বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম। ওয়েল গ্রুপের এ পরিচালক বণিক বার্তাকে বলেন, দেশের জলসীমানায় প্রবেশ করে এখান থেকে একটি জাহাজ ফিরে যেতে এখনো অনেক সময় লাগে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে শক্তিশালী করতে দীর্ঘসূত্রতা যেকোনো মূল্যে কাটিয়ে উঠতে হবে।

BBS cable ad

এনবিআর এর আরও খবর: