শিরোনাম

South east bank ad

জমে উঠেছে গরম কাপড়ের বাজার

 প্রকাশ: ২৭ ডিসেম্বর ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   ক্রয়-বিক্রয়

বিডিএফএন টোয়েন্টিফোর.কম

অগ্রহায়ণ পেরিয়ে পৌষ মাসের ১১ দিন পেরিয়েছে। প্রকৃতি বদলেছে তার রূপ। দিনের তাপমাত্রা কমার পাশাপাশি রাতে শীতল হাওয়া কাঁপন ধরাচ্ছে শরীরে। শীত থেকে রক্ষা পেতে সবাই বাজারে ছুটছেন গরম কাপড়ের খোঁজে। তাতে জমে উঠেছে গরম কাপড়ের বেচাকেনা। পাইকারিতে বিক্রি বেড়েছে, খুচরাতেও ব্যস্ত সময় পার করছেন ব্যবসায়ীরা। বিক্রি বাড়ায় নতুন করে ব্যবসায় ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন তারা।

রাজধানীর ফুলবাড়িয়ার ঢাকা ট্রেড সেন্টার ও গুলিস্তান ট্রেড সেন্টারে অবস্থিত শীতবস্ত্রের অন্যতম বড় পাইকারি বাজার। পাশেই রয়েছে বঙ্গবাজার। গতকাল এসব এলাকার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি দোকানেই ভিড় আগের তুলনায় কয়েকগুণ বেড়েছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ছোট-বড় ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন গরম কাপড় সংগ্রহ করতে ভিড় করছেন মার্কেটগুলোতে। পাইকারদের সঙ্গে চলছে দর কষাকষি। অনেকে আবার চাহিদাপত্র ও টাকা পাঠিয়ে কুরিয়ারের মাধ্যমে পণ্য সংগ্রহ করছেন। দোকানের ভেতর ও গুদাম থেকে
বস্তায় বস্তায় শীতের কাপড় নামাতে ছোটাছুটি করছেন শ্রমিকরা।

গুলিস্তানের ঢাকা ট্রেড সেন্টারের ‘কমফোর্ট জোন’র স্বতাধিকারী দুলাল হোসেন বলেন, ‘সাধারণ সময়ে অক্টোবর-নভেম্বর থেকে গরম কাপড়ের পাইকারি ব্যবসা শুরু হয়ে যায়। এবার এক মাস দেরিতে বিক্রি শুরু হয়েছে। কিন্তু বিক্রি ভালো। ১৫ ডিসেম্বরের পর থেকে চাহিদা আরও বেড়েছে। বিগত ২ বছর শীতে বলতে গেলে ব্যবসায়ই হয়নি আমাদের। গত বছর বাধ্য হয়ে খুচরা বিক্রি করেছি। এবার ব্যবসা ভালো যাচ্ছে।’

এবার শীতের কাপড়ের মধ্যে ফুল হাতা গেঞ্জি, জ্যাকেট ও হুডির চাহিদা অনেক বেশি বলে জানান দুলাল। তিনি বলেন, ‘এখনকার ফ্যাশনে হুডির চল বেড়েছে। তা ছাড়া ঢাকায় তুলনামূলক শীত কম পড়ায় হুডির চাহিদা বেশি। কারণ এটি জ্যাকেটের চেয়ে পাতলা কাপড় দিয়ে তৈরি হয়। জ্যাকেট ও ফুল হাতা গেঞ্জির বিক্রিও ভালো। পাইকারিতে হুডির দাম ১৫০ থেকে ৩৫০ টাকা এবং একটু ভালো মানের হুডি ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। জ্যাকেট বিক্রি করছি ৫০০ থেকে ১৪০০ টাকা পর্যন্ত। ফুল হাতা গেঞ্জি ১০০ থেকে ৪৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছি।’

ঢাকা ট্রেড সেন্টার (উত্তর) মার্কেট সমিতির সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হুদা জানান, করোনার কারণে গত বছর বড় লোকসান গুনতে হয়েছে ব্যবসায়ীদের। এবার শীত সামনে রেখে নতুন করে আশার মুখ দেখছেন তারা। তবে কাপড়ের দাম বাড়তি থাকায় এবার দাম ১০ থেকে ১২ শতাংশ বেশি রয়েছে।

রাজধানীর বিসমিল্লাহ গার্মেন্টসের মালিক সিরাজুল ইসলাম জনি জানান, এবার সবচেয়ে বেশি চাহিদা ফুল হাতা গেঞ্জি ও হুডি জামার। জ্যাকেটের বিক্রিও ভালো। তবে করোনাকালে সব ধরনের কাপড়ের দাম বেড়েছে। আগে যে ফেব্রিক্সের প্রতি পাউন্ড ২৫ থেকে ৩০ টাকা ছিল, তা এখন ৯০ থেকে ১১৫ টাকা হয়েছে।

মাইশারা ওয়ান ব্র্যান্ডের স্বতাধিকারী নাসির ভূঁইয়াও বলেন, করোনার কারণে জ্যাকেট তৈরিতে ব্যবহৃত ইন্টারলক কাপড়সহ বোতাম, চেইন ও অন্যান্য সামগ্রীর দাম বেড়ে গেছে। সুতার দাম বেড়েছে। এতে একটি ব্লেজার বা জ্যাকেটের উৎপাদন খরচ ৭০ থেকে ১০০ টাকা বেড়ে গেছে। তাই খুচরাতেও দাম বেড়েছে।

একই সুরে কথা বলেন নিউ সুপার মার্কেটের টিএস ফ্যাশনের মালিক মো. সোহেল। তিনি জানান, গত বছর পাইকারিতে বাচ্চাদের জিরো সাইজের যে জ্যাকেট ৫০০ টাকায় কিনেছি, সেটি এবার ৬৫০ পর্যন্ত বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে। ফলে খুচরাতেও দাম বাড়াতে হয়েছে আমাদের। খুচরায় এখন হুডি জামা ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকা, জ্যাকেট ৭০০ থেকে ৫ হাজার টাকা ও ফুল হাতা মোটা গেঞ্জি ২৫০ থেকে ৫৫০ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি করছি।

ব্যবসায়ী ও প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর মতে, দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার শীতবস্ত্রের বাজার রয়েছে। এ বাজারে শীতবস্ত্রের তালিকায় আছে সোয়েটার, জ্যাকেট, কম্বল, চাদর, মাফলার, টুপি, শাল, জুতা ও মোজা। আমদানিকৃত কম্বলগুলোর বেশিরভাগই স্পেন, চীন, জাপান, কোরিয়া ও থাইল্যান্ড থেকে আনা হয়েছে। কাশ্মীরি শাল এবং চাদর আমদানি করা হয়েছে ভারত ও পাকিস্তান থেকে। এ ছাড়া কোরিয়া, চীন ও থাইল্যান্ড থেকে জ্যাকেট, সোয়েটারসহ বিভিন্ন শীতবস্ত্র আমদানি করা হয়েছে। দেশেও বর্তমান শীতের পোশাক তৈরি করে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।

দেশের বাজারে শীতের মৌসুমে পাঁচ থেকে সাত হাজার কোটি টাকার গরম কাপড়ের বাজার আছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন। তিনি বলেন, বিগত দুই বছরে ব্যবসা তলানিতে ঠেকেছে। কিন্তু এবার ব্যবসা তুলনামূলক ভালো। পাইকারিতে বিক্রি ভালো হচ্ছে, ফুটপাতেও বিক্রি বেশ ভালো। খুচরায় ধীরে হলেও বিক্রি বাড়ছে। ঠা-া আবহাওয়া বজায় থাকলে এবার অন্তত পাঁচ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হবে বলে আশা করছি আমরা।

গুলিস্তান ফুলবাড়িয়ার মোড়ের আশপাশের এলাকাজুড়ে অসংখ্য ফুটপাতের দোকান রয়েছে। বায়তুল মোকারমের সামনেও অনেক ছোট দোকান রয়েছে। এসব দোকানে পাওয়া যাচ্চে সব ধরনের শীতের কাপড়। সেই সঙ্গে পাওয়া যাচ্ছে হাত মোজা, পায়ের মোজাসহ বাহারি ডিজাইনের কানটুপি। এসব দোকানগুলোতেও ভিড় অনেকখানি বেড়েছে। শীত এখন ততটা না পড়ায় হাত মোজা, কানটুপির বিক্রি বাড়েনি। তার পরও অন্য গরম কাপড়ের ব্যবসা মোটামুটি ভালো যাচ্ছে বলে জানান তারা।

এদিকে কম্বলের পাইকারি ও খুচরা বাজারেও ব্যবসায়ীরা ভালো সময় পার করছেন। ফুলবাড়িয়াতে ঢাকা ট্রেড সেন্টার হচ্ছে রাজধানীর অন্যতম বৃহত্তম কম্বলের পাইকারি বাজার। এখানকার ‘তাহমিদ গার্মেন্টস’-এর মালিক ফরিদ ভূঁইয়া বলেন, বাজারে গোল্ডেন বিয়ার, মিনিস্টার, রয়েল শিট, সোলারন, উইনস্টারসহ অনেক ব্র্যান্ডের কম্বল পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে সিঙ্গেল পার্ট কম্বল ও ডাবল পার্ট কম্বল রয়েছে। দাম গত বছরের চেয়ে সামান্য বেড়েছে। এখানে মানভেদে কোরিয়া ও স্পেন থেকে আমদানিকৃত কম্বলের পিস এক হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা, চায়না কম্বল ৪২০ থেকে দেড় হাজার টাকা এবং বাংলা কম্বল প্রতিপিস ৯০ থেকে ২৫০ টাকা।

তবে এবার কম্বলের তুলনায় আধুনিক কমফোর্টারের চাহিদা বেশ বেড়েছে বলে জানান ‘মেসার্স আমেনা হাছান গার্মেন্টস’-এর স্বতাধিকারী সিরাজুল ইসলাম জনি। তিনি বলেন, কমফোর্টারের ডিজাইন ও ধরন অনেক আধুনিক হওয়ায় বর্তমানে এর চলন বেশি। আমদানিকৃত কমফোর্টারের চাহিদাও অনেক। কমফোর্টারের দাম পাইকারিতে ৮০০ থেকে শুরু করে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া আমদানিকৃত ভালো ব্র্যান্ডের কমফোর্টারের দাম আরেকটু বেশি। পাইকারিতে ব্যবসা ভালো যাচ্ছে। তবে ওমিক্রনের আতঙ্কে পাইকাররা একটু দাম কমেও পণ্য ছেড়ে দিচ্ছেন। হাতে রাখছেন না।

এখানকার দেশীয় গার্মেন্টসে উৎপাদিত কম্বলের পাইকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘আল-আমিন স্টোর’। প্রতিষ্ঠানের মালিক ফারুক হোসেন জনান, দেশি কম্বলের দাম তেমন বাড়েনি। বলতে গেলে একই রয়েছে। বিশ্বাস, মিনহাস, স্টেপ, বাংলালিংক ও বাংলা কম্বলের পিস পাইকারিতে ৯০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে। আর মাঝারি মানের গার্মেন্টসের কম্বলের দাম গুনতে হচ্ছে ২১০ থেকে ৩০০ টাকা পিস।

BBS cable ad

ক্রয়-বিক্রয় এর আরও খবর: