চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন: তারকাদের প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি
বিডিএফএন টোয়েন্টিফোর.কম
জমে উঠেছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ১৭তম নির্বাচনের প্রস্তুতি পর্ব। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী ২৮ জানুয়ারি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে (বিএফডিসি) দিনভর অনুষ্ঠিত হবে শিল্পী সমিতির ২০২২-২০২৪ সালের দ্বিবার্ষিক এ নির্বাচন। এখন পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নেবে দুটি প্যানেল। একটি প্যানেলে রয়েছেন বরেণ্য অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন ও অভিনেত্রী নিপুণ। আরেকটি প্যানেলে আছেন বর্তমান কমিটির মিশা সওদাগর ও জায়েদ খান। সবাই এখন ব্যস্ত প্রচারে। দুই প্যানেল থেকেই দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি।
ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘আমি সভাপতি পদে নির্বাচন করছি। সবাই আমাকে ধরলেন, না করতে পারলাম না। চেষ্টা করে দেখি, এখানকার মানুষদের জন্য কিছু করা যায় কিনা। যে জায়গা থেকে আমি ইলিয়াস কাঞ্চন হয়েছি, নির্বাচিত হয়ে সেই জায়গার মানুষদের জন্য কিছু একটা করতে পারলে নিজের কাছেই ভালো লাগবে।’
মিশা সওদাগর বলেন, ‘আমার শ্রদ্ধেয় ইলিয়াস কাঞ্চন ভাইকে মোস্ট ওয়েলকাম। জিতলেও তার পাশে থাকব, হারলেও তার পাশে থাকব। আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে সেবা করা। নির্বাচনের ফল যাই হোক, পরাজিত হলেও বিজয়ীর গলায় মালা পরানো লোক আমি। শিল্পী সমিতি অলাভজনক এবং অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান, এখানে নির্বাচনের মাধ্যমে যারাই আসুক সেবা হিসেবেই নেতৃত্বটাকে দেখবেন বলে বিশ্বাস করি।’
সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী জায়েদ খান বলেন, ‘গত চার বছর আমরা ক্ষমতায় ছিলাম। এই চার বছরে আমরা কী করতে পেরেছি, সেটা শিল্পীরাই বলতে পারবেন। তবে এটুকু বলছি, এই শিল্পী সমিতির অবস্থা খুব ভালো ছিল না, কারো খুব একটা আগ্রহ ছিল না। গত চার বছরে আমরা শিল্পী সমিতিকে ফোকাসে আনতে পেরেছি, তা না হলে ইলিয়াস কাঞ্চন ভাইয়ের মতো সিনিয়র মানুষ নির্বাচনে অংশ নিতেন না। এটুকুকে আমরা আমাদের সফলতা হিসেবে দেখছি।’
নিপুণ বলেন, ‘যদি আমার প্যানেল জয়লাভ করে, আমরা প্রধানমন্ত্রীকে এফডিসিতে নিয়ে আসব। তিনি ছাড়া এফডিসিকে বাঁচানো সম্ভব নয়। ওনাকে স্বচক্ষে দেখাব। তার বাবার হাতে গড়া এফডিসি কী অবস্থায় আছে। আমার মনে হয় উনি যদি একবার আসেন, তা হলে এফডিসির চেহারা বদলে যাবে।’
ফেরদৌস বলেন, ‘সব সময় শিল্পীদের পাশে থাকার চেষ্টা করি। বর্তমান যে কমিটি আছে সেই কমিটিতে আমি ছিলাম না। শিল্পী সমিতি কোনো রাজনৈতিক সংগঠন নয়, লাভজনক প্রতিষ্ঠান নয়। শিল্পী সমিতি কারো ব্যবসার জায়গাও না। শিল্পীদের কল্যাণের জন্য এই সমিতি করা হয়েছে। কিন্তু দেখা গেছে, বর্তমান কমিটির অনেকে নিজের স্বার্থে সংগঠনকে ব্যবহার করছেন। অনেক শিল্পীকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভয় দেখানো হয়েছে বলে জেনেছি, যা আগে কখনো হয়নি। সমিতি ব্যবহার করা হয়েছে ব্যক্তিস্বার্থে। এবার আমাদের প্যানেলে জয়ী হলে প্রথম কাজ হবে শিল্পী সমিতির সঙ্গে অন্য যেসব সংগঠনের সমস্যা তৈরি হয়েছে তা নিরসন করা। সরকারি অনুদানের সিনেমাগুলো ঠিক সময়ে যেন মুক্তি দেওয়া যায় সে বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে। সব মিলিয়ে আমাদের অবস্থান থেকে যতটুকু সম্ভব করা হবে।’
নায়ক রিয়াজও এবারের চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে ইলিয়াস কাঞ্চন-নিপুণ প্যানেল থেকে সহ-সভাপতি পদে নির্বাচন করছেন। তিনি বলেন, ‘আমার একটাই কথা, শিল্পীদের প্রাপ্ত সম্মান রাখতে চাই। সম্মানের জায়গায় রাখতে চাই তাদের। শিল্পীরা একটু সম্মান ও ভালোবাসা চান। আর এই মুহূর্তে খুব প্রয়োজন সিনেমার উন্নয়ন। সেটাও চাই। সিনেমার উন্নয়ন হলে শিল্পীদের কাজ বাড়বে। সবাই মিলেমিশে কাজ করতে চাই। আরেকটি কথা, ৫ টাকা দান করে ৫০ টাকা বললে তো হবে না। এসব তো মানুষ বোঝে। এভাবে সমিতি চলতে পারে না। জয়ী হতে পারলে শিল্পীদের ভালোর জন্য সব করব।’
এদিকে বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে ১৮৪ জন শিল্পীর ভোটাধিকার বাতিল করেছিল বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সর্বশেষ সভাপতি মিশা সওদাগর ও সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান। তার পর থেকেই চলছিল আইনি লড়াই। তাদের পক্ষে ১৮ জন আদালতে মামলা করেছিলেন। ১১ জানুয়ারি শিল্পীদের পক্ষে সেই মামলার রায় এসেছে বলে জানিয়েছেন মামলার বাদী রমিজ, সাদিয়া মির্জা ও খোকন পাশা। আদালত সমিতির কাছে জানতে চেয়েছেন, কেন বাতিল হওয়া ভোটার তালিকা অবৈধ হবে না? ভোটাধিকার ফেরত পাওয়ার খবরে এফডিসিতে হয়েছে আনন্দ মিছিল। সঙ্গে ছিল আনন্দাশ্রুও।