ওয়াজেদ মিয়ার মৃত্যুবার্ষিকী আজ

বিডিএফএন টোয়েন্টিফোর.কম

দেশবরেণ্য পরমাণু বিজ্ঞানী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বামী ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়ার ১৩তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ সোমবার। বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের অধিকারী এই বিজ্ঞানী ২০০৯ সালের ৯ মে ইন্তেকাল করেন। ১৯৪২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি রংপুরের লালদীঘির ফতেহপুর গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।

যথাযোগ্য মর্যাদায় দিনটি পালন উপলক্ষে ড. ওয়াজেদ মিয়ার পরিবার, পীরগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনগুলো, ড. ওয়াজেদ স্মৃতি সংসদ (ডিডব্লিউএসএস), ড. ওয়াজেদ ফাউন্ডেশন এবং বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় স্মৃতিচারণ, ফাতেহ পাঠ, কবর জিয়ারত, মিলাদ মাহফিল ও গরিবদের মাঝে খাবার বিতরণসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। পীরগঞ্জ উপজেলার লালদীঘি ফতেহপুর গ্রামে এবং রংপুর মহানগরীতে এসব কর্মসূচি পালিত হবে।

প্রয়াত পরমাণু বিজ্ঞানীর ভাতিজা, পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং পীরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আবু সালেহ মো. তাজিমুল ইসলাম শামীম জানান, সকালে ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়ার কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণের মাধ্যমে দিনটির কর্মসূচি শুরু হবে।

আব্দুল কাদের মিয়া ও ময়জুন নেসার চার পুত্র ও তিন কন্যার মধ্যে ওয়াজেদ মিয়া ছিলেন সবার ছোট। আজন্ম সৎ, নির্লোভ ও নিখাদ দেশপ্রেমিক এই পরমাণু বিজ্ঞানী ১৯৬৭ সালের ১৭ নভেম্বর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের এক পুত্র ও এক কন্যাসন্তান রয়েছে।

ওয়াজেদ মিয়া বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন। কর্মজীবনে তিনি মেধা, মনন ও সৃজনশীলতা দিয়ে দেশ, জাতি ও জনগণের কল্যাণে নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন। ১৯৫৮ সালে তিনি রাজশাহী সরকারি কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন। ১৯৬১ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক (সম্মান) পরীক্ষায় এবং ১৯৬২ সালে স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তিনি ফজলুল হক হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন। ছাত্রলীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ১৯৬১-৬২ শিক্ষা বছরের জন্য হল ছাত্র সংসদের সহসভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬২ সালে শিক্ষা কমিশনবিরোধী আন্দোলনে কারাবরণ করেন। ১৯৬৩ সালের ১ এপ্রিল তিনি তৎকালীন পাকিস্তান আণবিক শক্তি কমিশনের চাকরিতে যোগ দেন। ১৯৬৩-৬৪ শিক্ষা বছরে তিনি লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের ডিপ্লোমা অব ইম্পেরিয়াল কলেজ কোর্স কৃতিত্বের সঙ্গে সম্পন্ন করেন। ১৯৬৭ সালের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাজ্যের ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থ বিজ্ঞানে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করে দেশে ফিরলে তাকে ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে ঢাকার আণবিক শক্তি গবেষণা কেন্দ্রে পদায়ন করা হয়।

১৯৬৯ সালে ইতালির ট্রিয়েস্টের আন্তর্জাতিক তাত্ত্বিক পদার্থ বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র তাকে এসোসিয়েটশিপ প্রদান করে। তিনি ওই গবেষণা কেন্দ্রে গবেষণায় নিয়োজিত ছিলেন। ১৯৬৯ সালের নভেম্বর থেকে ১৯৭০ সালের অক্টোবর পর্যন্ত তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন শহরের ড্যারেসবেরি নিউক্লিয়ার ল্যাবরেটরিতে পোস্ট ডক্টরাল গবেষণায় নিয়োজিত ছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১২ মার্চ থেকে ২৪ আগস্ট পর্যন্ত তিনি তৎকালীন পশ্চিম জার্মানির কার্লসরবয়ে শহরের আণবিক গবেষণা কেন্দ্রে আণবিক রিঅ্যাক্টর বিজ্ঞানে উচ্চতর প্রশিক্ষণ লাভ করেন। ১৯৭৫ সালের ১ অক্টোবর থেকে ১৯৮২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিনি ভারতের আণবিক শক্তি কমিশনের দিল্লির ল্যাবরেটরিতে গবেষণায় নিয়োজিত ছিলেন। তিনি অনেক জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানবিষয়ক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। তার অনেক গবেষণামূলক ও বিজ্ঞানবিষয়ক প্রবন্ধ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পত্রপত্রিকা এবং সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।

ড. ওয়াজেদ মিয়া ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নৃশংস হত্যাকা-ের পর দীর্ঘ সাত বছর নির্বাসিত জীবন কাটান। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক স্তরের পদার্থ বিজ্ঞান, ফলিত পদার্থ বিজ্ঞান ও প্রকৌশলের ছাত্রদের জন্য দুটি গ্রন্থ রচনা করেন।

তার লেখা ৪৬৪ পৃষ্ঠার ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ’ শিরোনামের গ্রন্থটি ১৯৯৩ সালের জানুয়ারিতে এবং ৩২০ পৃষ্ঠার ‘বাংলাদেশের রাজনীতি ও সরকারের চালচিত্র’ শিরোনামের গ্রন্থটি ১৯৯৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড থেকে প্রকাশিত হয়।

১৯৭২ ও ১৯৭৩ সালের জন্য তিনি পরপর দুবার বাংলাদেশ আণবিক শক্তি বিজ্ঞানী সংঘের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৮৩, ১৯৮৪ ও ১৯৮৫ সালে তিনি পরপর তিনবার ওই বিজ্ঞানী সংঘের সভাপতি নির্বাচিত হন।