শিরোনাম

South east bank ad

সাংবাদিক তাপসের কৃষি উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প

 প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারী ২০২২, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   অটোমোবাইল

বিডিএফএন টোয়েন্টিফোর.কম

মফস্বল শহরে সাংবাদিকতা পেশায় নিজের ভাগ্য বদলাতে না পারলেও কৃষিতে নিজের ভাগ্য বদলাচ্ছেন মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ঢেপা গ্রামের রেজ আন উল বাসার তাপস। সাংবাদিকতাকে নিজের পেশা ও নেশা হিসেবে নিলেও কৃষক ও কৃষিতে আগ্রহ রয়েছে তার। নিজের জমিতে ফসল ফলানোর অনন্দকে বাস্তবায়ন করতে হয়ে উঠেছেন জেলার একজন কৃষি উদ্যােক্তা।

রেজ আন উল বাসার তাপস পেশায় একজন গণমাধ্যমকর্মী। তিনি এনটিভির মেহেরপুর জেলা প্রতিনিধি। সাংবাদিকতার পাশাপাশি বিভিন্ন কৃষি প্রোজেক্ট নিয়ে কাজ করছেন। কৃষি সংবাদ করতে তার অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করে। কৃষকদের সঙ্গে কথা বলা ও মাঠে ফসল দেখে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন জাগে মনে। মেধা ও মননকে কাজে লাগিয়ে ইতোমধ্যে কৃষিক্ষেত্রে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন তিনি। তার জমিতে শোভা পাচ্ছে পেঁপে, করলা, টমেটো, মিষ্টি কুমড়াসহ ফিলিপাইন জাতের গেন্ডারি ও ক্যাপসিকাম। বিভিন্ন ধরনের ফসল আবাদ করে নিজে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি এলাকার বেকার যুবকদের সফলতার স্বপ্ন দেখাচ্ছেন তিনি।

তাপসের পরামর্শে অনেকেই ঝুঁকছেন কৃষিতে। যুবকরা কৃষিতে অংশগ্রহণ করলে দেশে কৃষি বিপ্লব ঘটতে বেশি সময় লাগবে না। শুধু তাপস নয়, শিক্ষিত হয়ে বেকার বসে না থেকে কৃষিতে মনোনিবেশ করলে নিজ নিজ সংসারে যেমন উন্নতি ঘটবে তেমনি দেশে কৃষকদের মান বাড়বে বলেও তরুণদের কৃষি কাজে মনোনিবেশ করতে বলছেন কৃষি বিভাগ।

সাংবাদিক তাপস জানান, গণমাধ্যমে কাজ করতে গিয়ে অনেক কৃষকের জমিতে যেতে হয়। কৃষকদের সফলতার গল্প লিখতে গিয়ে নিজেই জড়িয়ে পড়ি কৃষিকাজে। প্রথমে পরীক্ষামূলকভাবে নিজের দুই বিঘা জমিতে হাইব্রিড জাতের পেঁপে আবাদ করে মোটা টাকা লাভ হয়। পরে ১২ বিঘা জমিতে পেঁপে চাষ করি। কয়েক বছর পর পেঁপে চাষের পাশাপাশি ৭ বিঘা জমিতে সিডলেস লেবু আর ৮ বিঘা জমিতে ফিলিপাইন (কালো) জাতের গেন্ডারি আবাদ করেছি।

বাজারে গেন্ডারির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাছাড়া জমি থেকেই পাইকাররা গেন্ডারি কিনে নিয়ে যায়। প্রতি বিঘা জমিতে গেন্ডারি চাষে গ্রায় ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। খরচ বাদে প্রতি বিঘায় লাভ হয় দেড় থেকে ২ লাখ টাকা। ফিলিপাইন জাতের গেন্ডারি খেতে মিষ্টি, রসালো ও নরম। গেন্ডারির গায়ের রঙ কালো হলেও ভেতরের রঙ সাদা। বাজারে প্রচলিত আখ থেকে ভিন্ন হওয়ায় ক্রেতাদের চাহিদা বেশি।

গেন্ডারি লম্বায় বড় হওয়ায় বাঁশের মাচা দিতে হয়। প্রতি পিস গেন্ডারি বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকা দরে। মেহেরপুরে আখের চাহিদা মিটিয়ে মাঠ থেকে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন পার্শ্ববর্তী জেলার ক্রেতারা। ভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা আসছেন পেঁপে ও সিডলেস লেবুও কিনতে।

তিনি বলেন, গেল বছর ব্ল্যাকবেরি তরমুজ আবাদ করেছিলাম ৩ বিঘা জমিতে। সেখান থেকেও ২ লাখ টাকা আয় হয়েছে। এ বছরও তরমুজ আবাদ করছি ৫ বিঘা জমিতে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সাংবাদিক তাপস তার ৫ বিঘা জমিতে সিডলেস লেবু চাষ করেছেন। শুধু লেবু কিংবা গেন্ডারি নয়, তিনি আবাদ করেছেন ২ বিঘা জমিতে করলা, ব্ল্যাকবেরি তরমুজ, রসুন, ক্যাপসিকাম, মসুর, গমসহ বিভিন্ন ফসল।

তাপসের জমিতে কাজ করেন অন্তত ১০ জন শ্রমিক। তাপসের সফলতা দেখে শ্রমিকদের অনেকেই জমি বর্গা নিয়ে আবাদ শুরু করেছেন। শ্রমিক নজরুল ইসলাম জানান, সাংবাদিক তাপসের গেন্ডারির জমিতে কাজ করতাম। তাপস আমাকে পরামর্শ দিয়েছেন গেন্ডারি চাষে। আমি এক বিঘা জমিতে গেন্ডারির আবাদ করেছি। তাপসের জমিতে কাজ শেষ করে আমি আমার জমির পরিচর্যা করি।
স্থানীয় যুবক রমিক জানায়, আমি লেখাপড়ার পাশাপশি তাপস ভাইয়ের কাজে কিছুটা সহযোগিতা করতাম। তিনি আমাকে সিডলেস লেবু চাষ করতে বলেন। আমি আমাদের ২ বিঘা জমিতে সিডলেস লেবুর বাগান করেছি। আশা করি লাভবান হবো।

শ্রমিক ইলিয়াস হোসেন বলেন, তাপস ভাইয়ের বিভিন্ন খেতে কাজ করি। আগাছা পরিষ্কার, পাতা কাটা, সার ও কীটনাশক ছিটায়। দিনে ৩০০ টাকা করে পাই। আমার মতো অনেকেই কাজ করে তাদের সংসার চালাচ্ছে।

মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক স্বপন কুমার খাঁ বলেন, মেহেরপুরের মাটিতে সব ধরনের ফসল উৎপাদনের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে সবজি ও ফল চাষের জন্য এ জেলার মাটি বেশি উপযোগী। কৃষকরা নতুন নতুন ফসল চাষ করতে চায়। জেলায় ৬০ হেক্টর জমিতে ফিলিপাইনের কালো জাতের গেন্ডারি চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে সাংবাদিক তাপস করেছেন ৮ বিঘা জমিতে। জেলায় সিডলেস লেবুর আবাদ হয়েছে ৩৬ হেক্টর এবং পেঁপে আবাদ হয়েছে ১৫০ হেক্টর জমিতে। ১২ বিঘা জমিতে পেঁপে আবাদ করেও লাভবান হয়েছেন তাপস।

তিনি আরও বলেন, তার একটি সিডলেস লেবুর বাগান রয়েছে। ইতোমধ্যে লেবু বাজারজাত করা শুরু করেছেন। আমরা আশা করি লেবুতেও সাংবাদিক তাপস মোটা টাকা লাভ করবেন। সাংবাদিক পেশায় থাকা একজন মানুষ কৃষিতে এত ভালো কিছু করবে এবং কৃষিকাজ করবেন এটা আমাদের খুব ভালো লেগেছে। তিনি জেলার একজন সফল কৃষক ও কৃষি উদ্যোক্তা। তাপসের মতো শিক্ষিত মানুষ কৃষিতে এলে মেহেরপুর জেলার কৃষি আরও সমৃদ্ধ হবে।

BBS cable ad

অটোমোবাইল এর আরও খবর: