শিরোনাম

South east bank ad

ইতিহাসের মহানায়কের অমরাত্মার প্রতি আমাদের বিনম্র অভিবাদন

 প্রকাশ: ০১ অগাস্ট ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   অটোমোবাইল


সেদিন ছিল শুক্রবার। শ্রাবণের শেষ দিন। বাতাস ভেজা। ঘড়ির কাঁটা তখনো ভোর ৫টার ঘর ছোঁয়নি। দূরে মসজিদ থেকে ভেসে আসছে মুয়াজ্জিনের কণ্ঠে ফজরের আজানের সুমধুর ধ্বনি। ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের ৬৭৭ নম্বর বাড়িটির চারপাশে তখন ভোরের আলো ফোটার অপেক্ষায়। বাড়িটি রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের। বাড়ির শীর্ষে তখন বিউগলের সুরে জাতীয় পতাকা উত্তোলিত হচ্ছে। এমন মায়াবী, মোহময় ও ছিমছাম পরিবেশের মধ্যে ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকান্ড ঘটাতে বাড়িটি লক্ষ্য করে দক্ষিণ দিক থেকে শুরু হয় ভয়াল আক্রমণ।

ঘাতকের নির্দয় বুলেটে সপরিবারে শহীদ হন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গমাতা বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর তিন ছেলে মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামাল, শেখ জামাল ও নিষ্পাপ শিশু শেখ রাসেলও সেদিন রেহাই পাননি। বঙ্গবন্ধুর পুত্রবধূ সুলতানা কামাল দেশের একজন খ্যাতিমান ক্রীড়াবিদ এবং আরেক পুত্রবধূ রোজী জামালও শহীদ হয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর একমাত্র ভাই শেখ আবু নাসের পায়ের সমস্যা নিয়েও মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন। তাঁর মতো শান্ত ও বিচক্ষণ প্রগতিশীল মানুষকেও ঘাতকরা হত্যা করে ওই রাতে। বঙ্গবন্ধুর ফোন পেয়ে তাঁর জীবন বাঁচাতে ছুটে আসা রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব কর্নেল জামিল আহমেদ, এসবি অফিসার সিদ্দিকুর রহমান, সেনাসদস্য সৈয়দ মাহবুবুল হককেও ধানমন্ডির বাড়িতে হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধুর ভাগনে যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মণির বাসায় হামলা চালিয়ে তাকে এবং তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মণি, বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি কৃষিমন্ত্রী আবদুর রব সেরনিয়াবাতের বাসায় হামলা করে সেরনিয়াবাত ও তার কন্যা বেবী, পুত্র আরিফ সেরনিয়াবাত, নাতি সুকান্ত বাবু, আবদুর রব সেরনিয়াবাতের বড় ভাইয়ের ছেলে সজীব সেরনিয়াবাত এবং এক আত্মীয় রেন্টু খানকে হত্যা করে ঘাতকর


মহান মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত শত্রুদের এজেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী সেনাবাহিনীর বিপথগামী কিছু সদস্যের হাতে প্রাণ হারান বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু। ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ড ছিল মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তির সুস্পষ্ট ষড়যন্ত্র। পাকিস্তানি হানাদারদের ভাড়াটে চরেরা জাতির পিতাকে হত্যার মাধ্যমে প্রকারান্তরে বাঙালি জাতির আত্মাকে স্তব্ধ করতে চেয়েছিল। মুয়াবিয়াপুত্র এজিদের হাতে হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) ও মীরজাফরের ষড়যন্ত্রে নবাব সিরাজউদ্দৌলার মর্মান্তিক হত্যাকান্ডের মতো ১৫ আগস্টও ইতিহাসে একটি মর্মান্তিক ঘটনা হিসেবে বিবেচিত। এ ঘটনার মাধ্যমে হত্যা ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি জাতির ঘাড়ে চেপে বসে। ইতিহাসের চাকা পেছনে ঘোরানোর চেষ্টাও চলে।

স্বাধিকারের জন্য আজীবন সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ফলে বাঙালি জাতি, বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধু সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের শত্রুরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে প্রকারান্তরে এ দেশের স্বাধীনতাকেই হত্যা করতে চেয়েছিল। ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট অসাংবিধানিক পন্থায় ক্ষমতা পরিবর্তনের যে কালো অধ্যায়ের সূচনা হয়, তার পরিণতিতে জাতীয় রাজনীতিতে বারবার বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষ সাম্প্রদায়িকতা ও দ্বিজাতিতত্ত্বের বিভেদ নীতিকে কবর দিয়েছিল। তা পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রয়াস চলে ১৫ আগস্টের পর থেকে। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বন্ধে তারা কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে। বাংলাদেশের মানুষ সে ষড়যন্ত্র সফল হতে দেয়নি। ১৯৯৬ সালে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল হয় দেশবাসীর প্রত্যাশার পরিপূরক হিসেবে। ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার ও খুনিদের পাঁচজনের মৃত্যুদন্ড কার্যকর হয়েছে। মৃত্যুদন্ডাদেশপ্রাপ্ত পলাতক খুনিদের বিদেশ থেকে আইনি পথে দেশে এনে শাস্তি দেওয়ার চেষ্টা চলছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে বাঙালি জাতির হৃদয় থেকে তাঁর আদর্শ মুছে ফেলার যে অপচেষ্টা চালিয়েছিল; খুনি চক্রের সদস্যরা তাতে সফল হয়নি। বঙ্গবন্ধু নেই, কিন্তু তাঁর অপরাজেয় আদর্শ টিকে আছে প্রতিটি বাঙালিহৃদয়ে। ইতিহাসের মহানায়কের অমরাত্মার প্রতি আমাদের বিনম্র অভিবাদন।

BBS cable ad

অটোমোবাইল এর আরও খবর: