South east bank ad

অধ্যাপক আরিফের ছোঁয়ায় বদলে গেছে রাবির এসএম হলের চিত্র

 প্রকাশ: ২৯ নভেম্বর ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   অটোমোবাইল

আমজাদ হোসেন শিমুূল, (রাজশাহী ব্যুরো) :

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সবচেয়ে পুরাতন হলগুলোর একটি শাহ্ মখ্দুম হল। বিশিষ্ট সুফিসাধক হয়রত শাহ মখদুম রুপস এর নাম অনুসারে রাবির তৃতীয় হলটির নামকরণ করা হয় ‘শাহ মখদুম হল’। যা সংক্ষেপে এসএম হল নামে পরিচিত। তিনতলা বিশিষ্ট এ হলটি ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই হলে প্রায় চার শতাধিক শিক্ষার্থীর বাস। পুরাতন হওয়ায় হলের অবকাঠামো অনেকটাই দুর্বল হয়ে পরে। ধীরে ধীরে খসতে শুরু করে ভবনের পলেস্তারা। অনেকটাই বাসের অযোগ্য হয়ে পরে হলটি। ঠিক এমন এক সময় হলের প্রাধ্যক্ষের দায়িত্ব পান অধ্যাপক ড. আরিফুল ইসলাম। ২০১৮ সালের নভেম্বরের ১১ তারিখে তিনি হলের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

দায়িত্ব গ্রহণ করার পর থেকেই তিনি হলের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কাজ করা শুরু করেন। এজন্য তিনি হলের কোন কোন ক্ষেত্রগুলিতে সমস্যা আছে এবং তা সমাধানকল্পে কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে সেসব বিষয়ে আবাসিক শিক্ষক, অফিস স্টাফ এবং আবাসিক ছাত্রদের সাথে আলাপ আলোচনা করেন। তারপর পর্যায়ক্রমে সেসকল সমস্যা সমাধানকল্পে কাজ শুরু করেন।

দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি দেখলেন হলের আবাসিক ছাত্রদের জন্য কোন রিডিং রুম বা সাধারণ পাঠকক্ষ নেই। অধিকাংশ আবাসিক কক্ষ তিন সিটের হওয়ার কারণে ছাত্রদের লেখা-পড়ায় অনেক সময় ব্যাঘাত হয়। ফলে, একটি মনোরম রিডিংরুম তৈরি করার প্রয়োজনীয়তা অুনভব করেন তিনি। সে মোতাবেক হলের অভ্যন্তরে স্থান নির্ধারণ, রংকরণ, টাইলস ফিটিংস এবং প্রয়োজনীয় কাজ (বৈদ্যুতিক লাইন, লাইট, ফ্যান) ও আসবাবপত্র দ্বারা একটি রিডিং রুম প্রস্তুত করে তা হলের ছাত্রদের জন্য তা উন্মুক্ত করা হয়। ফলে শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া করার একটা নিরিবিলি পরিবেশ পান।

শাহ্ মখ্দুম হল একটি অতি পুরাতন স্থাপনা। ভবনটি অনেক আগে নির্মাণের ফলে হলের অতিথি কক্ষের ফ্লোর ড্যামেজ হয়েছিলো। এছাড়াও এর আসবাবপত্র, জানালা-দরজা নষ্ট প্রায় হয়েছিলো। এমতাবস্থায় অধ্যাপক আরিফুলের অধীন হল প্রশাসন অতিথি কক্ষের সংস্কার, টাইলস ফিটিংস, সোফাসেট, জানালা-দরজা, পর্দাসংযোজনসহ রং করে এবং সেই সাথে অতিথি কক্ষে হল পরিচিতি স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও প্রাধ্যক্ষের অফিসে টাইলস স্থাপন, রংকরণ এবং হল অফিসসমূহের জন্য প্রয়োজনীয় আধুনিক চেয়ার-টেবিল সরবরাহ, পর্দাসংযোজন এবং শাহ ্মখ্দুম (রা.) এর জীবনী স্থাপন করা হয়।

হলের আবাসিক ছাত্রদের দীর্ঘদিনের একটা অভিযোগ ছিলো ইন্টারনেটের ধীরগতির ব্যাপারে। বিদ্যমান এ্যাকসেস পয়েন্ট স্থাপন দ্বারা উন্নত ইন্টারনেট সার্ভিস প্রদান করা সম্ভব হচ্ছিলো না। হল প্রশাসন যথাযথ কর্তৃকক্ষের নিকট উন্নত ইন্টারনেট সেবা প্রদানের জন্য আবেদনের মাধ্যমে পূর্বের সিস্টেম পরিহার করে হলের অভ্যন্তরে ১২ টি শক্তিশালী রেডিও ওয়াই-ফাই টাওয়ার স্থাপন করে। ফলে, বর্তমান ইন্টারনেট সেবা আগের তুলনায় অনেক বেশি ফলপ্রসু হয়েছে। বর্তমান শাহ্ মখ্দুম হলে সবচেয়ে বেশি ওয়াই-ফাই টাওয়ার রয়েছে। এতে করে শিক্ষার্থীরা ইন্টারনেট ব্যবহার করে তাদের পড়ালেখার ক্ষেত্রে সুবিধা ভোগ করতেছে।

এছাড়াও হলের সবগুলো বাথরুমে টাইলস স্থাপনসহ জানালা-দরজা সংস্কার করা হয়েছে। কমনরুম সংস্কারসহ ক্রীড়া সামগ্রী সংযোজনসহ হলের কর্মকর্তাদের কাজের পরিবেশ তৈরি এবং অফিসসমূহ মেরামত, রংকরণ ও পর্দা সংযোজনসহ যুগোপযোগী করা হয়েছে। হলের সবগুলো বাথরুমে কালারফুল টাইলস লাগিয়ে যেমন সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করা হয়েছে,তেমনি উন্নত পরিবেশও নিশ্চিত করা হয়েছে।

হলের ডাইনিং ও ক্যান্টিনে স্থাপন করা হয়েছে স্থায়ী বেঞ্চ, উন্নত লাইট এবং পর্দা সংযোজনের মাধ্যমে বৃদ্ধি করা হয়েছে সৌন্দর্য্য। ডাইনিং ও ক্যান্টিনের খাবারের মান উন্নয়নের ব্যাপারে প্রতিনিয়ত পর্যবেক্ষণ করছে হল প্রশাসন।

দীর্ঘ ৩০ বছর পর বন্ধ থাকা ২১৫ নাম্বার আবাসিক কক্ষ সংস্কার করে ছাত্রদের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় আসবাবপত্রের ব্যবস্থা করেছে হল প্রশাসন। হলের অভ্যন্তরে বাগান ঢেলে সাজানো হয়েছে এবং হলের সম্মুখভাগে পূর্ব-পশ্চিম বরাবর সৌন্দর্য বর্ধনের নিমিত্তে নতুন করে বাগান তৈরি করা হয়েছে। বাগানের ভিতরে শিক্ষার্থীদের বসার জন্য স্থাপন করা হয়েছে স্থায়ী বেঞ্চ।

ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে শিক্ষার্থীদের কক্ষগুলো সংষ্কারের কাজ। যুক্ত করা হয়েছে নতুন চেয়ার, টেবিল এবং খাট। দরজা, জানালাগুলোতেও চলছে সংষ্কার। সাজানো হয়েছে একটা গেস্টরুমও। সেখানে যুক্ত করা হয়েছে সোফাসেট, পর্দা এবং হল পরিচিতি বোর্ড। দরজা, জানালাসহ মেঝেও সংষ্কার করে উন্নত করা হয়েছে। সংষ্কার করে আধুনিকায়ন করা হয়েছে হলের অডিটোরিয়ামও। দীর্ঘদিন যাবৎ বন্ধ থাকা হল গ্রন্থাগার শিক্ষার্থীদের জন্য পুনরায় চালু করা হয়েছে। এসব সংস্কার কাজ দেখে মুগ্ধ হয়েছে হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা।

এছাড়াও তিনি প্রাধ্যক্ষ হওয়ার পর উদ্যোগ নিয়েছিলেন সাহিত্য-সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা। এ প্রতিযোগিতার তারিখ নির্ধারণ করা হলেও পরবর্তীতে মহামারি করোনার কারণে তা আর অনুষ্ঠিত হয়নি। সেইসাথে মেধাবী ছাত্রদের স্বর্ণপদক প্রদানের উদ্যোগ নিলেও করোনা মহামারির কারণে তা সম্ভব হয়নি।

BBS cable ad

অটোমোবাইল এর আরও খবর: