আজ থেকে পাবনায় ৩৪৬ মন্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন শুরু
সুশান্ত কুমার সরকার, (পাবনা) :
জগৎ জননী মা দুর্গার আগমনে শরতের আকাশে বাতাসে শেফালী ফুলের সুগন্ধ ও কাশফুলের শীতল হাওয়ায় চারদিক মুখরিত হয়ে উঠেছে, মা আসছেন ঘটকে। জগৎ জননী মা দুর্গার চরনে ভক্তি সিক্ত পুষ্পাঞ্জলি দিয়ে বিশ^জুড়ে মহামারি করোনা ভাইরাসের অবসান করে সুখ, শান্তি ও সম্বৃদ্ধিতে আবারো ভরে উঠুক সবার জীবন। শ্রীবৃদ্ধি ঘটুক দেশ ও দশের। এই প্রার্থনায় আজ সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে সনাতন ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব। এবছর করোনার কারণে স্বল্প আয়োজনের মধ্য দিয়ে পূজার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন পূজা মন্দিরে ব্যাপক আয়োজন না থাকলেও হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে বাড়িতে চলছে পূজার আমেজ। আয়োজন যাই হোক- “যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেন সংস্থিতা। নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ মনো নমঃ।” “ওঁ সর্বমঙ্গল মঙ্গল্যে শিবে সর্বার্থসাধিকে শরণ্যে ত্রম্বকে গৌরী নারায়নী নমহোস্তুতে।” এমন অসংখ্য মন্ত্রপাঠ, শ্রীশ্রী চন্ডী পাঠ, শঙ্খধ্বনী, উলুধ্বনী ও ঢাকের বাজনায় মুখরিত থাকবে মন্ডপগুলো। এবছর কোন উৎসব নয়, দেবী দুর্গার চরণে প্রার্থনা একটাই বিশ্বজুড়ে শান্তি ফিরে আসুন, দুর হোক সকল রোগশোক।
এ বছর পাবনা জেলার ৯ উপজেলায় ৩৪৬টি মন্ডপে পূজার আয়োজন করা হয়েছে। জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
দুর্গা পূজার তীথি অনুযায়ী ১১ অক্টোবর সোমবার মহাষষ্ঠী তিথিতে দেবীর আমন্ত্রণ ও সন্ধ্যায় আসনে অধিবাসের মধ্যদিয়ে দুর্গা পূজা শুরু হবে। ১২ অক্টোবর মঙ্গলবার মহাসপ্তমী, ১৩ অক্টোবর বুধবার মহাঅষ্টমী ও সন্ধিপূজা, ১৪ অক্টোবর বৃহস্পতিবার মহানবমী এবং ১৫ অক্টোবর শুক্রবার মহাদশমীতে প্রতিমা বিসর্জনে মধ্যে দিয়ে শেষ হবে পাঁচ দিনের শারদীয় এই উৎসব। এ বছর দেবী ঘটকে আগমন এবং দোলায় গমন করবেন।
করোনাকালীন সমায়ে এবছর স্বাস্থ্যবিধি মেনে সাত্ত্বিক আচারের মধ্যেমে পূজার আয়োজন সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে। স্বল্প পরিসরে ঘরোয়া পরিবেশে পাবনায় মন্ডপগুলোতে শারদীয় দুর্গা পূজার আয়োজন করা হয়েছে। দুর্গা পূজার আয়োজনের মধ্য প্রধান আকর্ষণ দুর্গা প্রতিমা। করোনার কারণে এবছর আলোকসজ্জা এবং ব্যাপক আকরে প্যান্ডেল থাকছেনা। তাই মনমুগ্ধকর আকর্ষণীয় করে প্রতিমা গড়ে তুলাকেই প্রধান্য দিয়েছেন আয়োজক এবং প্রতিমা শিল্পীরা।
পাবনা জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দ জানান, করোনার কারনে এ বছর দুর্গা পূজায় আড়ম্বরপূর্ণ কোন আয়োজন করা হয়নি। প্রতিমা দর্শনের জন্য আসা ভক্তবৃন্দ যেন মন্দিরের মধ্যে একস্থানে ভীড় না জমায় সেজন্য মন্দির কমিটি এবং পুলিশ প্রশাসন দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া মন্দিরে দায়িত্বপালনকারী পুলিশ, আনসার এবং ভলেনটিয়ারগণ স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য মাস্ক পড়ে থাকবেন এবং হ্যান্ডসেনিটাইজার ব্যবহার করবেন।
এদিকে দুর্গা পূজাকে ঘিরে হিন্দু সম্প্রদায়দের বাড়িতে বাড়িতে চলছে পূজার আমেজ। বাড়িতে নারীরা পূজার উপকরণ হিসেবে তৈরী করছেন নাড়–, মোয়া, মুরখি, খাজা, সন্দেশ, নিমকিসহ হরেক কমন মুখরোচক খাবার। তবে আনন্দ উল্লাসের মাঝেও কিছু কিছু মানুষের মধ্যে দুঃখ কষ্টও থেকে যায়। এবছর করোনা ভাইরাসের কারনে অনেক মানুষের আয় কমে গেছে। অনেকের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে, বেতন কমে গেছে। কষ্টে দিন কাটাতে হচ্ছে। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এবছর বন্যার কারণে অনেক মানুষ ক্ষতিগ্রন্থ হয়েছে। ঐসব নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে এবারের পূজায় কোন আনন্দ নেই।
পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম জানান, “সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উৎযাপনের জন্য পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। পূজা চলাকলে মন্দিরে পুলিশ ও আনসার নিয়োজিত করা হয়েছে। এছাড়া পুলিশ ও র্যাবের টহল টিম থাকবে।”
পাবনা জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শ্রী বাদল চন্দা ঘোষ জানান, “এবার করোনার কারণে ব্যাপক কোন আয়োজন থাকছেনা। ভক্তবৃন্দের প্রতি অনুরোধ থাকবে সবাই যেন স্বাস্থ্য বিধি মেনে প্রতিমা দর্শন করেন। মা দুর্গার কাছে আমার প্রার্থনা করছি বিশ^জুড়ে এই করোনার মহামারির অবসান ঘটুক। সবার মাঝে শান্তি ফিরে আসুক।”