শিরোনাম

South east bank ad

আলু নিয়ে দুশ্চিন্তা কৃষক, ব্যবসায়ী ও হিমাগার মালিক

 প্রকাশ: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   অটোমোবাইল

কায়সার সামির, (মুন্সীগঞ্জ) :

আলু নিয়ে মহা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষক, ব্যবসায়ী, হিমাগার মালিক ও নীতিনির্ধারক সবাই। দেশে চলতি মৌসুমে ১ কোটি ১০ লাখ টন আলু উৎপাদন হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে ২০ লাখ টন বেশি। কিন্তু এ বছর আলুর ন্যায্য মূল্য না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে চাষিরা। উৎপাদন খরচ উঠছে না বলে তারা জানিয়েছেন।

বাজার দর নিম্নমুখী থাকায় হিমাগার থেকে আলু খালাস হচ্ছে না। এতে করে বিদ্যুৎ বিল ও অফিস খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছে হিমাগার মালিকরা। এ অবস্থায় চলতি বছর শেষে ২০ লাখ টন আলু বিনষ্ট হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছে বাংলাদে কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএসএ)। এ সঙ্কট কাটাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দিয়েছে সংগঠনটি। এদিকে রপ্তানির চেষ্টা করেও তেমন সুফল মিলছে না বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক।

সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশে বাড়তি উৎপাদিত আলুর নিরাপদ সংরক্ষণ ও পরবর্তী সময়ে আলুর প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে হিমাগারগুলোতে আলু মজুদ রাখা হয়। স্বাভাবিক সময়ে আগস্টের মধ্যে হিমাগার থেকে মজুদ আলুর প্রায় ৮০ শতাংশ বাজারে চলে যায়, আর ৫-৭ লাখ টন বীজ আলু মজুদ রাখতে হয়। এরপরও কিছু আলু থাকলে সেগুলো নিয়ে খুব বেশি সমস্যায় পড়তে হয় না হিমাগার মালিক, ব্যবসায়ী ও কৃষকদের। কিন্তু চলতি বছর আলুর দাম ও চাহিদা কমে যাওয়ার কারণে হিমাগার থেকে আলু তুলছেন না কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। এতে হিমাগার মালিকদের পড়তে হয় বিপাকে। হিমাগার ভারা না পাওয়ায় বিদ্যুৎ বিল বকেয়া পড়ে থাকে। ভর্তুকি দিতে হয় অতিরিক্ত টাকা।

সংকট কাটাতে সম্প্রতি সচিবালয়ে কৃষি মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই ও বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএস) প্রতিনিধি দল। হিমাগারে মজুদকৃত ও উদ্বৃত্ত আলু বিক্রিতে কৃষি মন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করে তারা বলেন, গত বছরের মতো এ বছরও সরকারিভাবে ক্রয় করে ত্রাণ, কাবিখা, ভিজিএফ, ওএমএস, রোহিঙ্গাদের মধ্যে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর রেশনের আলু বিতরণ করলে উদ্বৃত্ত আলুর সুষ্ঠু ব্যবহার সম্ভব।

বিসিএসএ চেয়ারম্যান মো মোশারফ হোসেন পুষ্টি বলেন, গত বছর আলু চাষিরা ভালো দাম পেয়ে ছিলেন। তাই এবার বেশি চাষ করেছেন। কিন্তু এবার আলুর দাম একেবারে নিম্নমুখী। আলু চাষ ও সংরক্ষণ বাবদ কেজিতে ১৮ টাকা করে পড়েছে। কিন্তু বিক্রি করতে হচ্ছে ৯ টাকায়। কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে ১ কোটি ১০ লাখ টন আলু উৎপাদিত হয়েছে। বিপরীতে দেশে আলুর চাহিদা ৮৫-৯০ লাখ টন। এর ফলে প্রায় ২০ লাখ টন আলু উদ্বৃত্ত রয়েছে। এ বছর প্রায় দেশের প্রায় ৪০০ হিমাগারে ৫৫ লাখ টন খাবার আলু, বীজ আলু ও রপ্তানিযোগ্য আলুর সংরক্ষিত আছে।

তিনি আরো বলেন বলেন, হিমাগার থেকে আলু অত্যন্ত ধীরগতিতে বাজারজাত হচ্ছে, যা হতাশাব্যঞ্জক ও উদ্বেগজনক। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে চলতি বছর প্রায় ২০ লাখ টন অবিক্রীত থাকবে। এ অবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে আলু রপ্তানি বাড়ানোর উদ্যোগের পাশাপাশি খোলা বাজারে ও সরকারি বিভিন্ন কর্মকান্ডে আলু বিক্রির সুযোগ করে দেওয়া প্রায়োজন। তা নাহলে আগামীতে কৃষক আলু উৎপাদনে নিরুৎসাহিত হবেন। উৎপাদিত উদ্বৃত্ত আলু যেন উদ্বেগের কারণ না হয়, সেজন্য উৎপাদিত আলুর সুষ্ঠু ব্যবহারের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া প্রোয়োজন।

আলু উৎপাদনের প্রধান জনপদ মুন্সীগঞ্জ সদরের আলু ব্যবসায়ী দিদার মো. শাহজাহান জানান, বস্তা প্রতি আলু কোল্ড স্টোরেজ ভাড়া সহ ৯২৫ টাকা পড়েছে। বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে বস্তা প্রতি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা দরে। এতে বস্তা প্রতি লোকশান গুনতে হচ্ছে ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা। এবার আলুর লোকসান ঠেকাতে এবং কৃষক-ব্যবসায়ীদের বাঁচাতে সরকারকে আলু বিদেশে রপ্তানি করার দাবি জানান তিনি।

মুন্সীগঞ্জ সুলতান কোল্ড স্টোরেজের ম্যানেজিং ডিরেক্টর (এমডি) মো. শামিম বেপারী জানান, প্রতিটি হিমাগারের মালিক আলুর বিপরীতে কৃষকদের ঋণ দিয়েছেন। কিন্তু বর্তমানে আলুর বাজার দর কম থাকায় এখানে প্রতিটি হিমাগারে প্রায় ৬০ ভাগ আলু সংরক্ষণে রয়েছে। এভাবে বাজারে আলুর বাজার দর নামতে থাকে চাষি ও ব্যবসায়ীরা হিমাগার থেকে আলু বের করার আশা ছেড়ে দিয়েছেন। এতে হিমাগারের মালিকদেরও লোকসান গুনতে হবে। তিনি আরো জানান, সরকার যদি প্রতি কেজি আলুর মূল্য কম করে ২০ টাকা নির্ধারণ করে দেয়, তাহলে কৃষক উপকৃত হবে। গত বছর আলুর বাজার ঊর্ধ্বমুখী থাকায় সরকার মূল্য নির্ধারণ করে প্রথমে ২৫ টাকা, পরে ২৭ টাকা কেজি। হিমাগার ঋণের সুদ ও ভাড়া মিটিয়ে পুঁজি ফিরে আসবে না। পকেট হতে ভর্তুতি দিতে হবে। এ কারণে কৃষক আলু হিমাগার থেকে নিতে আসে না। এতে স্টোর মালিক বিদ্যুৎ বিল ও অফিস কর্মচারী বেতন দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো আসাদুল্লাহ বলেন, কৃষি সম্প্রসারণের কাজ হচ্ছে উৎপাদন করা। এ কথা ঠিক চাহিদা অতিরিক্ত আলু উৎপাদন হয়েছে। অতিরিক্ত আলু দেশের বাইরে রপ্তানি করতে পারলে ভালো হয়। গত বছরে ৫০ হাজার টনের বেশি আলু রপ্তানি হয়েছে।

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) ও রপ্তানিকারকরা জানায়, বর্তমানে শ্রীলঙ্কা, মালয়োশিয়া, ব্রুনাই, সিঙ্গাপুর ও নেপালে আলু রপ্তানি হচ্ছে নিয়মিত। রাশিয়া বাংলাদেশ থেকে আলু নিতে শুরু করে এতে ব্যাকটেরিয়া ধরা পয়ায় ২০১৫ সালে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়া বাংলাদেশ থেকে আলু কিনতে আগ্রহ জানিয়ে পর্যবেক্ষণ দিলেও এ বিষয়ে আর অগ্রগতি নেই। রপ্তানিকারকরা বলছেন, আলুর গুণগত মান নিশ্চিত করতে কন্টাক্ট ফার্মিং এর পাশাপাশি বিদেশে বাংলাদেশি দূতাবাসগুলাের কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানোর বিকল্প নেই। কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) জানায়, আলু বিশ্বের অন্যতম প্রধান ফসল। উৎপাদনের দিক থেকে ধান, গম ও ভুট্টার পরেই চতুর্থ স্থানে আছে আলু। বাংলাদেশে আলু একটি গুরুত্বপূর্ণ ফসল। দেশে বর্তমানে প্রায় ৫ লাখ হেক্টর জমিতে আলু উৎপাদন হয়ে।

BBS cable ad

অটোমোবাইল এর আরও খবর: