শিরোনাম

South east bank ad

ঐতিহাসিক লালদীঘি গণহত্যা দিবস আজ

 প্রকাশ: ২৪ জানুয়ারী ২০২২, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   অটোমোবাইল

বিডিএফএন টোয়েন্টিফোর.কম

আজ সোমবার (২৪ জানুয়ারি), চট্টগ্রামের লালদীঘি গণহত্যা দিবস। ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ২৪ জনকে হত্যা করে পুলিশ।

১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি নগরীর লালদীঘি ময়দানে সমাবেশে যাওয়ার পথে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি চালালে নিহত হন ২৪ জন। আহত হন কমপক্ষে দু’শতাধিক মানুষ।

নিহতরা হলেন- হাসান মুরাদ, মহিউদ্দিন শামীম, স্বপন কুমার বিশ্বাস, এথলেবারট গোমেজ কিশোর, স্বপন চৌধুরী, অজিত সরকার, রমেশ বৈদ্য, বদরুল আলম, ডিকে চৌধুরী, সাজ্জাদ হোসেন, আব্দুল মান্নান, সবুজ হোসেন, কামাল হোসেন, বিকে দাশ, পঙ্কজ বৈদ্য, বাহার উদ্দিন, চান্দ মিয়া, মসর দত্ত, হাশেম মিয়া, মো. কাশেম, পলাশ দত্ত, আব্দুল কুদ্দুস, গোবিন্দ দাশ, মো. শাহাদাত।

২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি ঘটনার ৩২ বছর পূর্ণ হওয়ার মাত্র চারদিন আগে হওয়া আদালতের রায়ে পাঁচ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। যাদের মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়, তারা হলেন-মমতাজ উদ্দিন, মোস্তাফিজুর রহমান, প্রদীপ বড়ুয়া, গোপাল চন্দ্র (জেসি) মণ্ডল ও আব্দুল্লাহ। এরা প্রত্যেকেই পুলিশের সাবেক সদস্য ছিলেন। একই রায়ে আদালত ৩২৬ ধারায় পাঁচ আসামিকে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ডও প্রদান করেন।

সেদিনের এই রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। তবে তখন ঢাকা থেকে যারা ওই হামলা পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছিলেন, তদন্ত করে তাদের বিচার করা উচিত বলে মন্তব্য করেছিলেন তিনি।

তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ রায়ের পর স্মৃতিচারণ করে বলেন,‘১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের লালদীঘি মাঠে জনসভা করার জন্য চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে গাড়ি বহর নিয়ে আসছিলেন। সেই গাড়ি বহরের সামনে একটি মিছিল ছিল, সেই মিছিলে আমিও ছিলাম। আমরা যখন কোতোয়ালির মোড় অতিক্রম শুরু করি, তখনই গুলি শুরু হয়। নির্বিচারে গুলি চালানো হয়।’

তিনি বলেন, ‘যদিও নিহতের সংখ্যা বলা হচ্ছে ২৪ জন, কিন্তু এ সংখ্যাটা আরও বেশি। কারণ সেদিন অনেক লাশ গুম করে ফেলা হয়েছিল। আমাদের হিসাব মতে, সেটি অবশ্যই ৩০ জনের বেশি। কারও কারও মতে সেটি ৩৬ জন। কিন্তু অনেকগুলো লাশ গুম করে ফেলার কারণে সংখ্যা অনেক কমে এসেছে। ৩২ বছর পর এ হত্যা মামলার রায় হয়েছে। এ জন্য অবশ্যই আমরা সন্তুষ্ট।’

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কিন্তু আমি মনে করি এ গণহত্যা চালানোর জন্য ঢাকা থেকে যারা নির্দেশ দিয়েছিল তাদেরও আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন। এই যে প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহরের মিছিলে গুলি, তাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যেই ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি হামলা পরিচালনা করা হয়েছিল। একইসঙ্গে ১৯ বছর আগে সিপিপি’র সমাবেশে যেভাবে হামলা চালিয়ে হত্যা করা হয়েছিল, সে ঘটনারও যে বিচার হয়েছে এ জন্য সন্তোষ প্রকাশ করছি। ২৪ জানুয়ারির হামলা ও সিপিবির সমাবেশে হামলা গণতান্ত্রিক শক্তিকে এবং প্রগতিশীল শক্তিকে ধ্বংস করার জন্যই এসব হামলা পরিচালনা করা হয়েছিল।’

তিনি বলেন, ‘যারা এ হামলা করেছিল, তাদের উত্তরসূরিরা কিন্তু এখনও সক্রিয়। আমাদের এ জন্য এখনও সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।’

তৎকালীন এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯২ সালের ৫ মার্চ ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষ থেকে প্রয়াত আইনজীবী শহীদুল হুদা বাদী হয়ে চট্টগ্রাম মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় হত্যাকাণ্ডের সময় চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি) কমিশনারের দায়িত্বে থাকা মির্জা রকিবুল হুদাকে প্রধান আসামি করা হয়। এতে রকিবুল হুদাকে ‘হত্যার নির্দেশদাতা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

তবে ৩২ বছর ধরে বিচারকার্য চলাকালে মারা যান তিনিসহ তিনজন। বাকি দুইজন হলেন- কনস্টেবল বশির উদ্দিন ও আব্দুস সালাম।

কী হয়েছিল সেদিন
১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি। চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক লালদীঘির ময়দানে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। স্বৈরাচারী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে মুখিয়ে ছিল সারাদেশ। তৎকালীন ১৫ দলীয় জোট নেত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার আগমণের প্রহর গুণছিল হাজার হাজার ছাত্র, শ্রমিক ও পেশাজীবী জনতা। বেলা দেড়টার দিকে শেখ হাসিনার গাড়ি কোতোয়ালী থানা হয়ে পুরনো বাংলাদেশ ব্যাংক ভবন অতিক্রম করছিল।

এ সময় স্বৈরশাসকের পেটোয়া বাহিনী মুক্তিকামী জনতার গণজোয়ার দেখে ভয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে। তাই এ সমাবেশ বানচাল করে দিতে তৎকালীন সিএমপি কমিশনার রকিবুল হুদার নির্দেশে গর্জে ওঠে পুলিশ বাহিনীর রাইফেল। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে নেত্রীকে বাঁচাতে মানববর্ম রচনা করেন।

কিছু বুঝে ওঠার আগেই অতর্কিত গুলিতে ঝরে পড়ে কতগুলো তাজা প্রাণ। সেদিনের সেই নারকীয় হত্যাযজ্ঞে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনগুলোর নেতাকর্মী এবং আইনজীবী, চিকিৎসকসহ অন্তত ২৪ জন বেসামরিক লোক শহীদ হন। আহত হন আরও প্রায় তিন শতাধিক। নৃশংসতার একপর্যায়ে পুলিশের কড়া পাহারায় নিহতদের রাতের আঁধারে নগরীর অভয়মিত্র মহাশ্মশানে পুড়িয়ে ফেলা হয়। অন্যদিকে চলে লাশ গুম করার অপচেষ্টা।

১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারির সেই নারকীয় হত্যাকাণ্ডে নিহতদের স্মরণে চট্টগ্রাম আদালত ভবনের প্রধান ফটকে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। যেখানে নিহত ২৪ জনের নাম লিপিবদ্ধ করা আছে। এটি ১৯৯২ সালের ২৪ জানুয়ারি উদ্বোধন করা হয়।

BBS cable ad

অটোমোবাইল এর আরও খবর: