ছাত্রলীগ নেতা তাকবীর হত্যা মামলার রাইফেল-ম্যাগজিনসহ আরও এক আসামী গ্রেফতার
প্রদীপ মোহন্ত, (বগুড়া):
বগুড়ার আলোচিত ছাত্রলীগ নেতা তাকবীর হত্যা মামলার প্রধান আসামী আব্দুর রউফের একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
আজ (২০ ফেব্রুয়ারি) রোববার বেলা ১১টার দিকে বগুড়ার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ শাহরিয়ার তারিক এই আদেশ দেন।
এদিকে এই হত্যা মামলায় সন্দেহভাজন আসামী পারভেজ আল মুক্তাদিরকে (২১) গ্রেপ্তার করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গতকাল শনিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা পৌণে ৬ টার দিকে শহরের পুরান বগুড়ার তাসিন ছাত্রাবাস থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই সময় তার কাছ থেকে একটি থ্রি নট থ্রি রাইফেল ও তার মধ্যে থাকা ম্যাগাজিনসহ দুইটি অত্যাধুনিক ছুরি উদ্ধার করে ডিবি পুলিশ। পারভেজ শিবগঞ্জ উপজেলার মোকামতলা ইউনিয়নের চাকলমা মুন্সিপাড়া গ্রামের ফজলে মাবুদ শাহিনের ছেলে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই জুলহাজ উদ্দীন রিমান্ডের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মামলার অধিকতর তদন্তের জন্য তাকবীর হত্যা মামলার প্রধান আসামি আব্দুর রউফকে আদালতে নেয়া হয়। সাতদিনের রিমান্ডের আবেদন জানালে আদালত তাকে একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিকে রোববার দুপুর ১২টায় ডিবি পুলিশ তাদের নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পারভেজ তাকবির হত্যায় নিজের জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছে। হত্যা মামলায় তার নাম না থাকলেও ঘটনার পরেই গ্রেপ্তার হওয়া আল-আমিনের আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে পারভেজের নাম উঠে আসে। ঘটনার পর থেকে নিজেকে বাঁচাতে তিনি গা ঢাকা দেন। শনিবার গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুরানা বগুড়া থেকে পারভেজকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই সময় তার কাছে ধারালো অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র পাওয়া যায়।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আলী হায়দার চৌধুরী জানান, গ্রেপ্তার পারভেজকে আদালতে পাঠানো হবে। সেখানে তিনি স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি না দিলে রিমান্ডের আবেদন করা হবে। এছাড়াও তার রাজনৈতিক পরিচয় এখনও আমরা নিশ্চিত নয়।
উল্লেখ, বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে ২০২১ সালের ১১ মার্চ রাতে শহরের সাতমাথায় দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে গুরুতর আহত করে জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাকবীর ইসলামকে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৬ মার্চ শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান তিনি। মারা যাবার আগে তাকবীর তাকে ছুরিকাঘাত এবং হামলার জন্য আব্দুর রউফকে দায়ি করে একটি ভিডিওবার্তা দেয়।
ওই ঘটনায় নিহত তাকবীরের মা শহরের মালতিনগর দক্ষিণপাড়ার জহুরুল ইসলাম দুলালের স্ত্রী আফরোজা ইসলাম বাদী হয়ে সরকারি আজিজুল হক কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রউফসহ সাতজনের নাম উল্লেখ করে ২০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। হত্যাকান্ডের ঘটনায় ১৭ মার্চ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি অভিযুক্ত আব্দুর রউফককে সংগঠন থেকে বহিস্কার করে।
এরপর তাকবীর নিহত হওয়ার ১০ দিনের মাথায় ছাত্রলীগ নেতা আব্দুর রউফ গত ২৫মার্চ উচ্চ আদালতে গিয়ে জামিন প্রার্থনা করেন। শুনানি শেষে আদালত তাকে ৬ সপ্তাহের জামিন দেন। তার জামিনের নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে আদালতের সিদ্ধান্তে সেই সময়সীমা পর্যায়ক্রমে বর্ধিত হয়। প্রায় ৪ মাস পলাতক থাকার পর ১৯জুলাই বিকেলে রউফকে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে আত্মসমর্পণ করে জামিন প্রার্থনা করলে আদালত তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। সেই থেকে রউফ কারাগারে রয়েছে।