শিরোনাম

South east bank ad

“তুর দেওয়াল তুই ভাঙবি না-কি আমি ভেঙে দিবো জোর করে” আঃলীগ নেতা

 প্রকাশ: ১১ মার্চ ২০২২, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   সারাদেশ

“তুর দেওয়াল তুই ভাঙবি না-কি আমি ভেঙে দিবো জোর করে” আঃলীগ নেতা

জাহিদ হাসান হৃদয়, (চট্টগ্রাম):

তুর দেওয়াল তুই ভাঙবি না-কি আমি ভেঙে দিবো জোর করে! ক্ষতিপূরণ না দিয়ে প্রবাসীর স্থাপনা ভাঙতে আওয়ামিলীগ নেতা কর্তৃক এমন হুমকির পর জোর পূর্বক স্থাপনা ভেঙে দেওয়ায় বিষ পান করেছে মোঃ নুরুল আবসার (৪২) নামের এক যুবক।

গত মঙ্গলবার (৮ মার্চ) বিকেল ৫টার সময় উপজেলার ২নং বারশত ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের বোয়ালিয়া গ্রামে এই ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, নুরুল আবসার স্থানীয় মৃত রেনু মিয়ার পুত্র।

ঘটনার পর নুরুল আবসারকে পরিবারের সদস্যরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে তার অবস্থা অবনতি হলে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে (চমেক) হাসপাতালে রেফার করে কর্তব্যরত চিকিৎসক।

স্থানীয়রা জানান,বঙ্গোপসাগরের বহিঃনোঙ্গর থেকে কক্সবাজারের মহেশখালী হয়ে চায়না কোম্পানি কর্তৃক অপরিশোধিত তেল সঞ্চালন লাইনে ক্ষতিগ্রস্তদের জমি ও বাড়িঘরের ক্ষতিপূরণ পেতে স্থানীয় লোকজন কয়েকদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু কোম্পানির স্থানীয় প্রতিনিধিরা ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিলেও স্থানীয়রা ক্ষতিপূরণের কোনো টাকা পায়নি।

এ নিয়ে কয়েকদিন ধরে এলাকায় ক্ষোভ বিরাজ করছে। ঘটনার দিন নুরুল আবছার ক্ষতিপূরণের টাকা না পাওয়া পর্যন্ত তার বাড়িঘর ভাঙতে দেবেন না বলে জানিয়ে দিলে কোম্পানির প্রতিনিধিরা পুলিশ এনে তাকে থানা বৈঠকের কথা বলে নিয়ে যায়। কিন্তু নুরুল আবছার বাড়ি থেকে বের হওয়ার পরপর এস্কেভেটর দিয়ে নুরুল আবছারের বাড়িঘর ভেঙে ফেলা হয়। এ খবর শুনে নুরুল আবছার দ্রুত বাড়ি চলে এসে বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।

আবসারের বিষপানের কারণ জানতে চাইলে তার ভাতিজা আনোয়ার হোসেন বলেন, বারশত ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ৭নং ওয়ার্ডের জাগির পাড়ার ছাবের আহমেদ আমার চাচাকে ফোন করে পাইপ লাইনের মধ্যে পড়া দেয়াল ভেঙে ফেলার জন্য হুমকি দেয়। আমার চাচা বলেন আমি এখনো জমি অধিগ্রহণের টাকা পাইনি দেওয়াল কি জন্য ভাঙতেছি।

তারপর ছাবের আহমেদ বলে যে, দেয়াল তুই না ভাঙ্গলে আমি জোর করে ভেঙে ফেলবো৷ আমার চাচা তাকে বলে আপনি জোর করে আমার দেওয়াল ভাঙলে আমি বিষ খেয়ে মরে যাব। তারপর আনোয়ারা থানা থেকে ফোন করে আমার চাচাকে থানায় যেতে বললে চাচা বটতলী পর্যন্ত যেতে যেতে দেওয়াল ভেঙে ফেলে তারা। পরবর্তীতে চাচা ঘরে এসে বিষ পান করে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করে।

এই বিষয়ে নুরুল আবছারের স্ত্রী নিলুফার ইয়াসমিন দৈনিক ইত্তেফাক'কে বলেন,গতকাল বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ছাবের আহমেদ আমার স্বামীকে ফোন করে হুমকি দিয়ে বলে যে,"ক্ষতিপূরণ এক টাকাও দেবেনা, কোনো কথা বলতে পারবিনা। দেওয়াল ভাঙতে হবে। তুর দেওয়াল তুই ভাঙবি না-কি আমি ভেঙে দিবো জোর করে"।

জ্ঞান ফেরার পর আমি আমার স্বামীর কাছ থেকে সব কিছু জিজ্ঞেস করেছি। আমার স্বামীর এই অবস্থার জন্য ছাবের আহমেদই দায়ি। পরিবারের বড়দের সাথে কথা বলে এই বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।

ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে, ২নং বারশত ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম এ কাইয়ুম শাহ জানান, রাত আটার দিকে আমি ঘটনাস্থল এসেছি।

ঘটনাস্থলে ওসি মহোদয়ও ছিল। আসলে এখানে পাইপ লাইনের কাজ চলছিল। সবাইকে নোটিস দেওয়া হয়েছিল। নোটিসে তার নাম নাই।

স্বাভাবিকভাবে জমি অধিগ্রহণের টাকা পায়নি সে। টাকা না পাওয়ায় জমি ছাড়তে অস্বীকৃতি জানালে টিকাদারদের সাথে হয়তো একটু হাতাহাতি হয়েছে। পরবর্তীতে ক্ষোভে সে বিষপান করে বসে সে। বর্তমানে মোটামুটি সে সুস্থ আছে। আশা করছি ভালো হয়ে যাবে। আমি সবকিছু খোঁজ খবর রাখছি।

এই বিষয়ে অভিযুক্ত ছাবের আহমেদ বলেন, ওই কাজের বা ঘটনার সাথে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নাই। আবছার আমার আত্মীয় হয়। সে সুবাদে সে আমাকে ফোন দিয়ে দেওয়াল না ভেঙে যাতে কাজ করা হয় সে বিষয়ে বলে। যেহেতু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বাপ্পি এন্টারপ্রাইজের আমিন শরীফের সাথে আমার ভালো সম্পর্কে তাই আমি বিষয়টি ওনাকে জানাই। তবে আমিন শরীফ আমাকে জানাই যে এটা যেহেতু একোয়ারে পরছে সেহেতু কাজ করার জন্য দেওয়ালটা ভাঙতেই হবে। আবসারকে কেন আমি হুমকি দিতে যাবো! রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য স্থানীয় কয়েকজন রাজনৈতিক ব্যক্তির উস্কানিতে আমার উপর দোষ চাপানো হচ্ছে।

এদিকে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বাপ্পি এন্টারপ্রাইজের মালিক আমিন শরীফ বলেন, এই কাজের সাথে বাপ্পি এন্টারপ্রাইজের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। সরাসরি চায়না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান (সিপিপি) এটি সম্পূর্ণ করছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আনোয়ারা হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ ফয়সাল বলেন, এরকম একজন রোগীকে আনা হয়েছিল। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেলে রেফার করা হয়েছিল।

ঘটনার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আনোয়ারা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এস এম দিদারুল ইসলাম সিকদার বলেন,বিষয়টি জেনে আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছি। পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। তার পরিবার থেকে এখনো কোন অভিযোগ করেনি।

BBS cable ad

সারাদেশ এর আরও খবর: