শিরোনাম

South east bank ad

দুর্গাপুরে প্যাসিফিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতির ঋণের ফাঁদে মানুষ

 প্রকাশ: ২৫ অক্টোবর ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   অটোমোবাইল

আব্দুর রহমান, (নেত্রকোনা) :

নেত্রকোনার দুর্গাপুরে প্যাসিফিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব হচ্ছে শত শত মানুষ। অনেকে ঋণের তাগিদে বিটে বাড়ি ছাড়া হয়েছেন। উপজেলার গাওকান্দিয়া ইউনিয়নের দক্ষিন গাজিরপাড়ায় সরকারি নিয়ম না মেনেই ইচ্ছেমত কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ঐ সমিতির বিরুদ্ধে।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে,জেলার দুর্গাপুরে প্রত্যন্ত পল্লী গাওকান্দিয়া ইউনিয়নের দক্ষিন গাজিরপাড়ায় গত ২০১৯ সালের প্যাসিফিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিঃ নামে ওই গ্রামের মো. আবদুল জলিল, মো. আবদুর রশিদসহ কয়েকজন মিলে সমিতি গড়ে তুলেন। ওই সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন মো. আবদুল জলিল ও সম্পাদক নির্বাচিত হন মো. আবদুর রশিদ।

সভাপতি ও সম্পাদকসহ সমিতির সদস্য সংখ্যা ছিল ২৬জন। ওই বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারী স্থানীয় উপজেলা সমবায় অফিস থেকে সমিতির অনুমোদন নেওয়া হয়। সমিতির সেবা সমূহের মধ্যে উল্লেখ করা হয়- ব্যবসায়ী ও সদস্যদের মাঝে ঋণ বিনিয়োগ, মৌসুমী ঋণ বিনিয়োগ, মোটর সাইকেল ঋণ বিনিয়োগ ও চাকুরীজীবিদের ক্ষেত্রে ‘আইকন’ ঋণ বিনিয়োগ। সমিতির নীতিমালা অনুযায়ী সদস্যদের মাঝে ঋণ বিতরণের কথা। সদস্যদের বাইরে ঋণ দেওয়া ও নেওয়া যাবে না।

কিন্তু পরবর্তী সময়ে নীতিমালা উপেক্ষা করে সমিতির সদস্যদের বাইরেও চড়া সুদে ঋণ প্রদান করা হয়। এমনকি উপজেলার বাইরে সদস্য ছাড়াও ঋণ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, এই সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে অনেক মানুষ নিয়মিত পরিশোধ করতে না পেরে এলাকা ছাড়া হয়েছেন। সরকারি নিয়ম নীতি তোয়াক্কা না করে প্যাসিফিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতি নামে ওই প্রতিষ্ঠানটি গ্রামের সহজ সরল মানুষকে ঋণের ফঁাদে ফেলে অবৈধভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন সুদের ব্যবসা। অনেকেই সময়মত সুদের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। গ্রামের সহজ সরল মানুষকে নানা ভয়ভীতি হুমকি প্রদান করা হয়। পাশাপাশি বাড়িঘর দখল করে নেওয়া হয়েছে ঋণ গ্রহিতাদের। টাকা আদায় না হলে টর্সার সেলে চলে অমানুষিক নির্যাতন।

দুর্গাপুরের গাওকান্দিয়াা জাগিরপাড়া গ্রামের নজরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রায় তিন বছর আগে আমি পারিবারিক সমস্যার জন্য প্যাসিফিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির থেকে ১৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলাম। মাসে ১ হাজর ৫০ টাকা করে সুদ পরিশোধ করতাম। করোনা শুরু হলে কাজ কাম না থাকায় ২- ৩ মাস লাভের টাকা পরিশোধ করতে সমস্যা হয়। করোনা কিছুটা কমলে লাভের কিছু টাকা পরিশোধ করেছি। একদিন ইদ্রিস আলী (সমিতির কোষাধ্যক্ষ) আমাকে মোবাইলে বলে কালকের মধ্যে বাড়ি আয়, না হইলে তর ঘর ভাঙিয়া নিয়া যাব এবং সামনে পাইলে তোর টেং (পা) কাইটা পালবাম। আরও অনেক খারাপ কথা আমাকে বলেছে। এর পর আর তাদের সাথে কথা হয় না। ওরা আমার সাথে যোগাযোগ করে না, আমিও কথা বলি না। বউ বাচ্ছা নিয়া ঢাকায় কাজ করি।’

দুর্গাপুরের জাঙ্গালীয়াকান্দা গ্রামের জাহের আলী বলেন, প্যাসিফিকের লোকজন শতকরা ২ টাকা সুদের কথা বলে ওরা ৭টাকা করে আদায় করছে। ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে অনেকে নিজ বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। টাকা পরিশোধ করতে না পারলে প্যাসিফিকের লোকজন ঋণ গ্রহিতাদের মারধর পর্যন্ত করে। টাকা আদায়ের জন্য নানা ধরনের হুমকি ধমকি দেয়।

প্যাসিফিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতি লিমিটেডের সভাপতি মো. আবদুল জলিল বলেন, আমরা সমিতির নিয়ম কানুন মেনে মানুষকে ঋণ দেই এবং আদায় করে থাকি। আমরা কাউকে কোন ধরনের অত্যাচার- নির্য়াতন, হুমকি ধমকি প্রদান করিনি। অভিযোগকারীদের মধ্যে কেউ কেউ আগে এলাকায় চড়া সুদে ব্যবসা করত। আমরা সমিতি করার কারনে তারা সেই ব্যবসা আর করতে পাড়ছে না। এখন তারা আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ করছে।

এ বিষয়ে দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ রাজীব-উল-আহসান বলেন, গাঁওকান্দিয়ায় একটি সমিতি টাকা আদায় করতে গিয়ে মানুষের সাথে দুঃব্যবহার করছে বলে শুনেছি। তবে এ ব্যাপারে কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পাওয়া গেলে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

BBS cable ad

অটোমোবাইল এর আরও খবর: