শিরোনাম

South east bank ad

নদীতে জাল ফেলে তীরে বসে তাস খেলে অভিনব কৌশলে চলছে মা ইলিশ নিধন

 প্রকাশ: ২৩ অক্টোবর ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   অটোমোবাইল

মোঃ রাজু খান, (ঝালকাঠি) :

ঝালকাঠির সুগন্ধা ও বিষখালী নদীতে বিভিন্ন কৌশলে মা ইলিশ নিধন করছে জেলেরা। এদের মধ্যে মৌসুমী জেলেদের সংখ্যা অনেক বেশি।ঝালকাঠির ১৭ কিলোমিটার প্রবাহমান সুগন্ধা এবং বিষখালীর ৩০ কিলোমিটার মিঠা পানিতে প্রজনন মৌসূমে ডিমওয়ালা মা ইলিশের আগমন ঘটে। সুগন্ধা নদীর বড় অংশটি হচ্ছে নলছিটি উপজেলার ভেতরে। ঝালকাঠির গাবখান নদীর মোহনা থেকে শুরু হয় ইলিশ ধরা। শেষ হয় বরিশালের কীর্তণখোলার পশ্চিমাংশে গিয়ে। সুগন্ধার দীর্ঘ এই ১৭ কিলোমিটারের মধ্যে ঝালকাঠি লঞ্চঘাট, কলেজ খেয়াঘাট, নলছিটির বারইকরণ, সরই, মাটিভাঙা, বহরমপুর, চরবহরমপুর, ষাইটপাকিয়া ফেরিঘাট, নলছিটি লঞ্চঘাট, পুরানবাজার, সুজাবাদ, মল্লিকপুর, খোজাখালী, সারদল, বিষখালী নদীর দেউরী, ভেরনবাড়িয়া, নলবুনিয়া, ভবানীপুর, বাদুরতলা, চল্লিশ কাহনিয়া, পালটসহ ২০টি এলাকায় শত শত জেলে প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত জাল ফেলে ইলিশ শিকার করছেন এসব এলাকায়।

সরেজমিনে শনিবার দুপুর ১টার দিকে বিষখালী নদী তীরবর্তি সদর উপজেলার দেউরী এলাকায় দেখাগেছে, কেবলমাত্র জোয়ারের পানি বইছে। তারপূর্বেই জেলেরা নদীতে জাল ফেলে তীরে উঠে বাগানে বসে তাস খেলছে। স্বাভাবিক সময়ে নদীতে জাল ফেললে জালের উপরে ড্রাম ভাসতে দেখা যায়। নিষিদ্ধ সময়ে জাল ফেলতে তারা ভিন্ন কৌশল গ্রহণ করে। এসময় জালের একমাথা তীরে থাকে এবং অপর মাথায় কোনরকম ভাসমান বস্তু রাখে। যাতে করে আভিযানিক দল বুজতে না পারে এখানে কোন জাল আছে। জোয়ারের শুরুতেই দুটি স্পীড বোট নদীতে অভিযান পরিচালনায় নেমে পড়ে। কিন্তু নদীর কোথাও কোন নৌকা নেই। স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি জেলেদের পাহাড়ার নামে গোপনে সংবাদ আদান প্রদান করে মা ইলিশ নিধনে মদদ দেয় বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে। অাভিযানিক দল প্রস্থান করলেই সংকেত অনুযায়ী জাল তুলে যে ডিমওয়ালা মা ইলিশ ধরা পড়ে তার একটা বড় অংশ তাকে দিতে হয় বলে অভিযোগ করেন জেলেরা। তবে জেলেরা ওই জনপ্রতিনিধির নাম এবং নিজেদের নাম বলতে অপারগতা প্রকাশ করে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কৃষ্ণ ঘোষ বলেন, ইলিশের প্রজনন মৌসুম দুটি। একটি সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর এবং আরেকটি জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি। সরকার ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর ২২ দিন ইলিশ ধরা ও বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে। পাশাপাশি ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই ৬৫ দিন সাগরে সব ধরনের মাছ ধরা সম্পূর্ণ বন্ধ থাকে। এসব কারণে ইলিশ তার পরিপূর্ণ জীবনচক্র সম্পন্ন করতে পারে। প্রজনন মৌসূমে মা ইলিশ নিধন বিরোধী অভিযান জোরদার পরিচালনা করা হচ্ছে। ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত মা ইলিশ নিধন, বিক্রি, পরিবহন ও মজুদ সম্পুর্ণ নিষিদ্ধ করেছে সরকার। নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারীদের জেল-জরিমানা শাস্তির বিধানও রয়েছে। এতে জাটকা ইলিশ ও মা ইলিশ ভালোভাবে সুরক্ষিত হচ্ছে। এ জন্যই মৌসূমে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। প্রতি বছর প্রায় ১২০০ টন সুস্বাদু ইলিশ ধরা পরে। সুগন্ধা-বিষখালীর ইলিশ স্বাদে গন্ধে অতুলনীয়, তাই এখানকার ইলিশ দক্ষিণের বিখ্যাত বলে দাবি করেছেন জেলেরা।

অপরদিকে জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় মৎস্য বিভাগ রাতে অভিযান চালিয়ে ভোর রাতের দিকে যখন ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং দুপুরে খাবারের সময় যখন আভিযানিক দল বিরতিতে যায় তখনই এই সুযোগ ব্যবহার করে জেলেরা। এখানকার জেলেরা এতটাই বেপরোয়া যে তারা জেল বা হুলিয়া কোনোটাই মানে না।

ঝালকাঠি জেলা আইনজীবী সমিতির এক সদস্য ঘরোয়া আলোচনায় জানান, ওখানকার জেলেরা তাকে ডিমওয়ালা ৮শ গ্রাম- ১ কেজি ওজনের ইলিশ ৪শ টাকা দরে দেবে বলে ফোন দিয়েছে। তিনি তাদের কথায় সাড়া দেননি।

কৌশল সম্পর্কে তিনি জানান, ভোর রাতে জেলেরা নদীতে ডিমওয়ালা মা ইলিশ শিকারে নামে। সকাল সকাল আবার তারা তীরে ওঠে। ইলিশ ধরার নৌকা মূল নদীর পাশের ছোট খালে নিয়ে রেখে সেখানে জাল থেকে মাছ ছাড়িয়ে নেয়। এরপর ব্যাগে অথবা কার্টনে করে বিভিন্ন উপায়ে অগ্রিম বুকিং দেওয়া ক্রেতাদের কাছে সুযোগ বুঝে পৌঁছে দেয়। ওষুধের বাক্স, সিলিং ফ্যানের বাক্সসহ বিভিন্ন অভিনব কৌশল ব্যবহার করে তারা মাছ বাজারজাত করছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ঝালকাঠির নলছিটিতে চলছে মা ইলিশ নিধনের মহোৎসব। সুগন্ধা ও বিষখালী নদীতে চলছে মা ইলিশ শিকার। স্থানীয় শতাধিক জেলে প্রতিদিন নদীতে মাছ শিকার করছে। আর ওইসব ইলিশ বিক্রিও হচ্ছে গোপনে। এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকায়। যদিও সরকারিভাবে স্পীডবোট ও ট্রলারে মহড়া দিলেও এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে না যেতেই শত শত ইলিশ ধরা পড়ছে জেলেদের জালে। জেলেরা প্রতিদিন এসব এলাকায় কয়েক মণ ইলিশ শিকার করে কৌশল অবলম্বন করে গোপনে বিক্রি করছে।
এ ব্যাপারে ঝালকাঠি জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপন ঘোষ জানান, আমরা জেলা প্রশাসনের সহায়তায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং পুলিশ সদস্যদের নিয়ে অভিযান পরিচালনা করছি।

প্রজনন মৌসুমে ঝালকাঠির সুগন্ধা ও বিষখালী নদীতে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মা ইলিশ ধরায় ৪জেলেকে আটক করা হয়েছে। এরমধ্যে ২জেলেকে ১বছরের কারাদন্ড এবং অপর ২জেলেকে ৫হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। সেই সাথে ২৫লাখ ৮০হাজার টাকা মূল্যের ৮৬হাজার মিটার অবৈধ কারেন্ট জাল ও ৯কেজি ইলিশ জব্দ করেছে মৎস্য বিভাগ। শুক্রবার দিনব্যাপী এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। মৎস্য বিভাগ সূত্র জানায়, সুগন্ধা ও বিষখালী নদীর ৪০ কিলোমিটার এলাকায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলেও অসাধু জেলেরা মা ইলিশ ধরার চেষ্টা করে। জেলা, উপজেলা প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগ যৌথভাবে নদীতে অভিযান পরিচালনা করে। জেলার সদর উপজেলা, নলছিটি, রাজাপুর ও কাঠালিয়া এলাকায় স্ব স্ব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ ১২টি মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ১২টি অভিযান পরিচালনা করেন। জব্দ করা জাল ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশে নদীর তীরে পুড়িয়ে ফেলা হয়। ইলিশ মাছ স্থানীয় এতিমখানায় বিতরণ করা হয়। শুক্রবার দিন ব্যাপী অভিযানে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কান্তি ঘোষ।

BBS cable ad

অটোমোবাইল এর আরও খবর: