নাব্যতা সংকট বরিশালের ৩০টি স্পটে নদী খননের উদ্যোগ
এম. মিরাজ হোসাইন, (বরিশাল) :
শীত মৌসুম আসার আগেই চরম নাব্যতা সংকটে পড়েছে ঢাকা বরিশাল নৌ-রুট। এই নাব্যতা সংকট শুধু ঢাকা বরিশাল নৌরুটেই নয়, দক্ষিণাঞ্চলের ৩১টি নদীপথের বিভিন্ন স্থানে এই সংকট দেখা দিয়েছে। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন নৌ বন্দর টার্মিনাল এলাকায় নাব্যতা সংকটের কারণে নৌযান চলাচল ব্যাহত হয়ে পড়েছে বলে দাবি চালকদের। তবে বিআইডব্লিউটিএ জানিয়েছে তারা ইতোমধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের নদীগুলো ডিজিটাল সার্ভে (জরিপ) করা হয়েছে। সেই অনুযায়ী খনন করে নৌ পথ সচল করা হবে। তারই ধারাবাহিকতায় শুধু মাত্র বরিশালের ৩০টি স্পটে ২১ লাখ ঘনমিটার ড্রেজিং করা হবে। এদিকে এই রুটে পথ প্রদর্শক হিসেবে বিকন বয়া ও বাতি বিভিন্ন স্পটে না থাকার কারণে অন্ধকারে নৌযান পরিচালনা করা হচ্ছে বলে দাবী লঞ্চের মাষ্টার ড্রাইভারদের। যার কারণে চরম ঝুঁকি মনে করছেন এসব রুটে নৌ যান পরিচালনাকারী মাস্টার ড্রাইভাররা।
বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজিং বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, তাঁরা দক্ষিণের ১ হাজার ৪০০ নৌপথ উদ্ধার করার পরিকল্পনা নিয়েছেন। পর্যাক্রমে এই খনন পরিচালনা করা হবে। সেই সাথে বরিশাল নৌবন্দরসহ স্থানগুলোয় আগামী দুই মাস এ খনন চলবে।
বিআইডব্লিউটিএ’র ড্রেজিং বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, শীত মৌসুম আসলে চরম নাব্যতা সংকট দেখা দেয় নৌ রুটগুলোতে। এ জন্য প্রতি বছর এসব রুটে খনন করতে হয়। তারই ধারাবাহিকতায় বরিশালের ৩০টি স্পটে নদী খনন করার উদ্যোগ নিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ। এর মধ্যে মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে বরিশাল নৌবন্দর, লাহারহাট-ভেদুরিয়া চ্যানেল, ইলিশা ঘাট, ভোলা খেয়াঘাট, লালমোহন, নাজিরপুর, রাঙ্গাবালী, শ্রীপুরের লালবাগ, কালাবদরের মুখে, হিজলা-মৌলভীরহাট, মিয়ার চর, পটুয়াখালী নৌবন্দর, কারখানা নদীবন্দর, আপেলকাঠী, কবাই, বরগুনার খাগদন নদী, আমতলী ফেরিঘাট।
সরেজমিনে বরিশাল নৌবন্দর ঘুরে দেখা গেছে, কীর্তনখোলা নদীর উত্তর প্রান্তে চর জেগে নদীর গতি পাল্টে গেছে। সেখানকার রসুলপুর বস্তিসংলগ্ন বিশাল অংশে চর জেগেছে। বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজার সেখানেই রাখা হয়েছে।
ঢাকা বরিশাল রুটের বিলাশবহুল লঞ্চ কীতর্নখোলা ১০ লঞ্চের প্রথম শ্রেনীর মাস্টার মো: কবির হোসেন জানান, অনেক স্থানে এই বয়া বাতি নেই। যার কারণে মাস্টার ড্রাইভাররা অন্ধকারে লঞ্চ চালানা করছে। যদিও এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র অতিরিক্ত পরিচালক (নৌ সংরক্ষন ও পরিচালনা বিভাগ) মো. আব্দুল মতিন সরদার তাৎক্ষনিকভাবে বয়া-বাতি স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছেন।
বরিশাল-ঢাকা নৌপথের সুন্দরবন-১০ লঞ্চের মাস্টার মো. মজিবর রহমান বলেন, বরিশাল নৌবন্দরে ড্রেজিংয়ের সময় পন্টুন সরানো দরকার। তা নাহলে মাটি কেটে নদীতে ফেললে তা স্রোতে আবার পন্টুনের নিচেই চলে আসে। যে কারণে প্রতিবছরই এমন নাব্য সংকট সৃষ্টি হয়। তিনি হিজলা-মৌলভীরহাট চ্যানেলে নাব্য সংকটের কথা তুলে ধরে বলেন, মিয়ার চরে গত বছর অপরিকল্পিত খনন করায় এবার সেখান থেকে নৌযান চলাচলে বিঘœ ঘটছে। তিনি চরবাড়িয়ায় নদীর মাঝে বিদ্যুতের টাওয়ারে লঞ্চ চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হচ্ছে বলে জানান। তবে বিআইডব্লিউটিএর বন্দর কর্মকর্তা মুস্তাফিজুর রহমান এ ক্ষেত্রে দ্বিমত পোষণ করে বলেন, তিনি মিয়ারচরসহ বিভিন্ন স্পটের নদীর মাঝে গিয়ে দেখেছেন লঞ্চ চলাচলের মতো পর্যাপ্ত পানি রয়েছে।
অপরদিকে বিআইডব্লিউটিসির বরিশাল অঞ্চলের এজিএম কেএম এমরান বলেন, তাঁদের ফেরি চলাচলে লাহারহাট-ভেদুরিয়া রুটে নাব্য সংকট দেখা দেয় প্রতিবছর। এ ছাড়া ভোলার শ্রীপুরের লালবাগ, কালাবদরের মুখেও খনন দরকার।
বিআইডব্লিটিএ’র নদী খনন বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান বলেন, আসন্ন শুস্ক মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলে নদ-নদীতে ২১ লাখ ঘণমিটার পলি খনন করা হবে। চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহে খনন কার্যক্রম শুরু হবে। ফেব্রুয়ারী মাসের মধ্যে পর্যায়ক্রমে সবগুলো পয়েন্টে খনন কাজ সম্পন্ন করা হবে। তিনি বলেন, বরিশাল নৌবন্দরে যাত্রীবাহি লঞ্চের পন্টুন সংলগ্ন কীর্তণখোলায় আগামী সপ্তাহেই খনন শুরু হবে। এরই মধ্যে সেখানে খননযন্ত্র ড্রেজার স্থাপন করা হবে। তিনি জানান, বরগুনার ঐতিহ্যবাহি খাগদোন নদীও খনন করা হবে। আরও খনন করা হবে বরিশাল-ভোলা রুটের লাহারহাট চ্যানেল, ভোলাখাল, ভোলা-লক্ষীপুর রুটের ইলিশা চ্যানেল, লালমোহন, রাঙ্গাবালি, নাজিরপুর, বাকেরগঞ্জের কবাইসহ মোট ৩০টি পয়েন্ট। খনন কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য ১২টি ড্রেজার থাকবে দক্ষিণাঞ্চলে।
বিআইডব্লিউটিএ’র অতিরিক্ত পরিচালক (নৌ সংরক্ষন ও পরিচালনা বিভাগ) মো. আব্দুল মতিন সরদার বলেন, নাব্য হারিয়ে প্রায় বিলুপ্ত হতে যাওয়া নদীপথগুলো খনন করে নতুন করে সারাদেশে ১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথ সৃষ্টি করা হবে। তার মধ্যে দক্ষিণাঞ্চলে নতুন নদীপথ সৃষ্টি হবে ১ হাজার ৪০০ কিলোমিটার।