পরিচালকের প্রচেষ্টায় ‘ডিজিএইচএস’ র্যাংকিংয়ে রামেক হাসপাতাল দ্বিতীয়
আমজাদ হোসেন শিমুল, (রাজশাহী ব্যুরো) :
বহির্বিভাগে ভোগান্তি নিরসন, জরুরি বিভাগের মানোন্নয়ন, সুচারুরূপে বর্জ-ব্যবস্থাপনা; সর্বোপরি হাসপাতালের চিকিৎসার সার্বিক মানোন্নয়নের জন্য ‘ডিরেক্টরেট জেনারেল অব হেল্থ সার্ভিসেস-ডিজিএইচএস’ র্যাংকিংয়ে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছে। সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে এই র্যাংকিং প্রকাশ করা হয়।
র্যাংকিংয়ে দেখা গেছে- খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল শীর্ষে অবস্থান করছে। তার পরই রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অবস্থান। তিন নম্বরে রয়েছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। এছাড়া চার নম্বরে ময়মনসিংহ ও পাঁচ নম্বরে অবস্থান করছে বগুড়ার জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।
রামেক হাসপাতালের এই অর্জন সম্পর্কে মঙ্গলবার (০২ নভেম্বর) দুপুরে এক সাক্ষাতকারে নিজ দপ্তরে হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানি বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে এর আগে হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থার মান পর্যবেক্ষণে একটি প্রতিনিধি পরিদর্শনে এসেছিলেন। তারা বিভিন্ন বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়েছেন। আসলে ‘স্পেসিফিকভাবে’ কীভাবে এই র্যাংকিং করা হয় তা আমার ওইভাবে জানা নেই। তবে আমার কাছে মনে হয়েছে- চিকিৎসা সেবার মান, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনার উন্নয়নসহ নানাবিধ কারণে এই রামেক হাসপাতাল হয়তো এই গৌরব অর্জন করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আগে বহির্বিভাগে রোগীরা ২-৩ ঘণ্টা অপেক্ষা করেও কাক্সিক্ষত চিকিৎসা সেবা পেত না। রোগী ও তাদের আত্মীয়-স্বজনদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হতো। কিন্তু এখন আর সেই সমস্যা নেই। সেখানে অস্থায়ী ভিত্তিতে ১৫ জনের বেশি কর্মচারি নিয়োগ করা হয়েছে। এখন সকাল ৮টা থেকেই বহির্বিভাগে রোগীরা টিকেট সংগ্রহ করে নির্বিঘ্নে চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে।’
রামেক হাসপাতাল পরিচালক আরও বলেন, ‘আগে বিভিন্ন কারণে হাসপাতাল থেকে রোগীদের জন্য খুব বেশী ওষুধ সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি। তবে বর্তমানে প্রায় ৮০% ওষুধ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে। আমরা আশা করছি, শতভাগ ওষুধ সরবরাহের মাধ্যমে হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসা নিশ্চিত করা। এই প্রচেষ্টা সফল করতে প্রয়োজনীয় সকল উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এছাড়া এক্স-রেসহ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা রোগীদেরকে হাসাপাতালের বাইরে থেকেই করতে হতো। কিন্তু বর্তমানে হাসপাতালের অভ্যন্তরেই এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষার সকল ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় হাসপাতাল এলাকাজুড়ে প্রচ- দুর্গন্ধ ছড়াতো। বর্তমানে ড্রেনেজ ব্যবস্থার আধুনিকায়নের ফলে এই সমস্যার সমাধান হয়েছে। এছাড়া হাসপাতালে সঠিক পদ্ধতিতে বর্জ্য-ব্যবস্থাপনা হতো না। একই স্থানে ‘মেডিক্যাল বর্জ্য’ ও সাধারণ বর্জ্য ফেলা হতো। তবে বর্তমানে আলাদাভাবে সঠিক পদ্ধতিতে এসব বর্জ্য ব্যবস্থপনা করা হচ্ছে। মেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ‘প্রিজম’ নামে সরকার অনুমোদিত একটি বেসরকারি সংস্থাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আর সাধারণ বর্জ্য সিটি কর্পোরেশনের অধীনে অপসারণ করা হচ্ছে। এর ফলে হাসপাতালের পুরো এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ গৌরব অর্জন আসলে বড় কথা নয়, আমি হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে চাই। তবে এজন্য সকলের আন্তরিক প্রচেষ্টা অত্যন্ত জরুরি। সকলের সম্মিলিত প্রয়াসেই উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহৎ এই চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানকে আরো বেশি আধুনিকায়ন ও মানসম্মত করতে চাই।’