শিরোনাম

South east bank ad

মায়ের লাশ দাফনে শিক্ষক সন্তানের বাঁধা

 প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   অটোমোবাইল

ফয়সাল আহমেদ, (গাজীপুর) :

ছিল নারী ছেড়া ধন, তিল তিল করে মানুষ করে গড়ে তুলেছেন নিজ সন্তানকে। লেখাপড়া করিয়ে মানুষও করেছিলেন। ছেলে হয়েছিল শিক্ষক। এমনভাবে সংগ্রাম করতে গিয়ে কৃষক পরিবারের এই মা বাদ দিয়েছিলেন নিজের আরাম আয়েশের কথা। অথচ মৃত্যুর পর সে সন্তানই দিয়েছেন লাশ দাফনে বাঁধা। অন্তিম মুহুর্তে বারবার সন্তানকে শেষ দেখতে চেয়ে খবর পাঠাচ্ছিলেন। সন্তানের জবাব ছিল স্পষ্ট সে “মায়ের মুখ দেখবেন না”।

গাজীপুরের শ্রীপুরের কেওয়া পূর্ব খন্ড গ্রামে মৃত মান্নানের স্ত্রী মালেকা বেগম(৬৫) বেশ কিছুদিন ধরেই অসুস্থ ছিল। উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল ২২সেপ্টেম্বর(বুধবার) রাতে সে মারা যায়। নানা জটিলতার সাথে তিনি গত এক সপ্তাহ পূর্বে করোনায় আক্রান্ত হন। তার মৃত্যুর খবর পাওয়ার সাথে সাথেই তার বড় ছেলে স্থানীয় একটি বেসরকারী ওশিন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইকবাল হোসেন শ্রীপুর থানায় অভিযোগ দেন। পরে পুলিশ গিয়ে লাশ দাফনে বাঁধা তৈরীর চেষ্টা করলেও স্থানীয়দের হস্তক্ষেপে দাফন হয়।
স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, ১৯৯৪সালে আব্দুল মান্নান চার ছেলে ও তিন মেয়ে রেখে মারা যান। পরে জমির বন্টন নিয়ে তাদের মধ্যে জটিলতার সৃষ্টি হয়। এসময় ইকবাল হোসেন তার মায়ের স্বামী সত্বেও পাওয়া সম্পত্তির মালিকানা পেতে মরিয়া হয়ে উঠেন। তাকে একা জমি লিখে না দেয়ার তার মায়ের সাথে তার সম্পর্কের অবনতি ঘটে। এসময় তার মা তার ছোট ভাইয়ের বাসায় উঠে, মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত ছোট ছেলেই তার দেখভাল করতো।

ইকবালের ছোট ভাই আমিনুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘ দিন তিনিই তার মায়ের দেখভাল করে আসছিলেন। পরে হঠাৎ করে তা মা অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়। গতকাল করোনা আক্রান্ত হয়ে সে মৃত্যুবরণ করেন। বাড়ীতে লাশ নিয়ে আসার পর তার বড় ভাই পুলিশ নিয়ে এসে মায়ের লাশ দাফনে বাঁধা তৈরী করেন। যদিও স্থানীয়দের হস্তক্ষেপে তারা লাশ দাফন করেন।

তিনি আরো বলেন, যে সন্তান তাকে খেয়ে না খেয়ে মানুষ করলো, সে সন্তানটি শেষ বারের মতো মায়ের মুখ দেখলো না, কবরে একমুঠো মাটিও দিল না। সবাই যখন দাফন কাফনে ব্যস্ত, সে তার স্ত্রীকে নিয়ে ঘরে বসে রইল। তার মা অসুস্থ হয়ে পড়ার পর তার ভাইকে দেখতে অনেক ডেকেছিল। সে তাতেও সারা দেয়নি।

এ বিষয়ে মৃতের ছেলে ইকবাল হোসেন বলেন,তার মায়ের নামে প্রায় দুই বিঘা জমি ও ব্যাংকে ৫০লাখ টাকা ছিল। এগুলো আতœসাৎ করতেই তার মাকে তার ছোট ভাই মেরে ফেলেছে, এমন ধারনায় তিনি থানায় অভিযোগ করেছিলেন। তবে পুলিশ লাশের ময়না তদন্ত না করেই চলে গেছেন। তিনি এ বিষয়ে আদালতের দ্বারস্থ হবেন।

স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা আহসান উল্লাহ বলেন,সম্পদের জন্য এভাবে একটি সন্তান তার মায়ের লাশ দাফনে বাঁধা তৈরী করবে এটা সত্যিই ঘৃনিত কাজ। আমরা এলাকাবাসী হিসেবেও এমন কান্ডে লজ্জিত। সবচয়ে বড় কথা সে একজন শিক্ষিত ছেলে, একটি বেসরকারী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। এখানে তার শিক্ষাটা অন্তত পরাজিত হয়েছে।

শ্রীপুর থানার উপপরিদর্শক(এসআই) কামরুল ইসলাম বলেন, লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর ঘটনাস্থলে গিয়ে চিকিৎসার কাগজপত্র দেখে স্বাভাবিক মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। এছাড়াও মৃত নারীর কোভিড পজিটিভ ছিল। তবে তিনি যেহেতু ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা গেছেন সেহেতু অভিযোগ থাকলে সেখানে মামলার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

BBS cable ad

অটোমোবাইল এর আরও খবর: