শিরোনাম

South east bank ad

মেয়াদোত্তীর্ণ আর বিবাহিতদের দিয়ে চলছে কার্যক্রম শাখা ও ইউনিটে চলছে দ্বন্দ

 প্রকাশ: ২৩ জানুয়ারী ২০২২, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   অটোমোবাইল

সোহেল কান্তি নাথ, (বান্দরবান):

নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়েছে বান্দরবান জেলা ছাত্রলীগ। মেয়াদ উর্ত্তীণ কমিটি আর বিবাহিতদের দখলে রয়েছে বছরের পর বছর কমিটির কার্যক্রম । শুধু তাই নয় কলেজ ও পৌর শাখায় শুরু হয়েছে হযবরল অবস্থা আর এতে ঐতিহ্যবাহী এই সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরাজ করছে হতাশা।

“ শিক্ষা, শান্তি আর প্রগতি ” এই শ্লোগানকে সামনে এগিয়ে যাওয়া সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বান্দরবানে চলছে হযবরল অবস্থা।

২০১৫ সালে কাউছার সোহাগ কে সভাপতি এবং জনি সুশীল কে সাধারণ সম্পাদক করে গঠিত বান্দরবান জেলা ছাত্রলীগের ১বছর মেয়াদী কমিটি। পরে ১০ এপ্রিল ২০১৬ সালে একেই ব্যক্তিদের সভাপতি,সাধারণ সম্পাদক করে ১২১ জনের ১ বছর মেয়াদী দেয়া হয় কমিটি। কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে অনেক আগেই,আর নিয়ম বহিভুতভাবে প্রায় ৫৭জন সদস্য বিয়ে করে এখনো রয়েছে নিজ নিজ দায়িত্বে বহাল তবলিয়তে। এদিকে নিজেদের মূল কমিটির যখন অবস্থা বেগতিক ঠিক সেই সময়ে কলেজ কমিটিকে অকার্যকর ও মেয়াদউর্ত্তীণ বলে বাতিল করাতে জেলায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে উত্তেজনা। কোন কারণ দর্শানো নোটিশ বা সংগঠনের দায়িত্বশীলদের সাথে আলোচনা না করে এমন হঠকারী সিদ্ধান্তে ছাত্রলীগের কলেজ কমিটি বিলুপ্ত করায় যেকোন সময় ঘটতে পারে অনাকাংখিত ঘটনা এমনটাই মনে করছে দলীয় নেতাকর্মীরা।

২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টাম্বর তারিখে সম্মেলনের মাধ্যমে নির্বাচিত বান্দরবান সরকারি কলেজ কমিটির সভাপতি সুহৃদ বড়–য়া বলেন, ৯ জানুয়ারি ২০২২ সালে হঠাৎ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বান্দরবান কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করে একটি স্ট্যাটাস দেয়া হয়। এর আগে আমাদের কাউকে কোন ধরণের নোটিশ প্রদান করা হয়নি। ২০১৯ সালে আমাকে সভাপতি এবং ইমরান খানকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি দেয়া হয় এবং ১৫ দিনের মধ্যে পূর্ণঙ্গ কমিটি প্রস্তুত করে জেলা কমিটিকে দেয়া কথা ছিল । আমরা যথা সময়ে কমিটি নিয়ে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পদকের বরাবরে নিয়ে গেলও তারা অনুমোদন দেন নি। তাছাড়া কমিটি দেয়ার পর থেকে করোনা ভাইরাসের জন্য সকল শিক্ষা প্রতিষ্টান বন্ধ থাকার পরও আমরা কলেজ ছাত্রলীগের পক্ষে থেকে বিভিন্ন সাহায্য সহযোগিতা প্রদান করেছি। তারপরও জেলা ছাত্রলীগের কাছে আমরা পছন্দের পাত্র হতে পারলাম না। তারপরও আমরা জানতে চাই কি কারণে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আমাদের কমিটি বিলুপ্ত করেছে?

বান্দরবান সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো: ইমরান খান বলেন, আমরা ২০১৯ সালে একটি সফল সম্মেলনের মাধ্যমে বান্দরবান সরকারি কলেজ ছাত্রলীগ এবং বান্দরবান পৌর ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু আমরা কলেজ কমিটি সম্মেলনের মাধ্যমে আসলে ও আমরা ২জনই কখনো জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের পছন্দের ছিলাম না। যার কারণে তারা দুই জন অনেক আগে থেকে চেষ্টা করছে আমাদের পূর্ণঙ্গ কমিটি না দেয়ার। তাছাড়া ২০২২ সালের ০৯ জানুয়ারি যেদিন কমিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে দেয়া হয় সেদিন বান্দরবান জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি পারিবারিক সফরে চাদপুরে আবস্থান করছিলেন অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক বান্দরবানে থেকে এক সাথে একেই তারিখে স্বাক্ষর দিয়ে কমিটি বিলুপ্ত করেন এটাও একটি রহস্য জনক কারণ হিসেবে আমরা দেখছি। তাছাড়া বিজ্ঞপ্তিতে বান্দরবান কলেজ ছাত্রলীগের কমিটিকে অকার্যকর এবং মেয়াদ উত্তীর্ণ বলা হয়েছে। তাহলে বান্দরবান জেলা ছাত্রলীগের মেয়াদ ঠিক কত বছর তাও আমরা জানতে চাই?

২০১৯ সালে সম্মেলনের পর বান্দরবান সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের প্রস্তাবিত কমিটির সহ সভাপতি সাইমা আক্তার বলেন, আমাদের পূর্নঙ্গ কমিটির অনুমোদন না দিয়ে যাদের কে আহ্বায়ক করে কমিটি গঠন করা হয়েছে তারা বেশির ভাগেই বান্দরবানের বাহিরের এবং যাকে আহ্বায়ক (টিপু দাশ) করা হয়েছে, তাকে ২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টাম্বর সম্মেলনে বয়স না থাকার কারনে বাইছায় কমিটি থেকে বাদ দেয়া হয়। আবার একেই প্রার্থী কি করে ২ বছর পর আহ্বায়ক হিসেবে কলেজের রাজনীতিতে আসে সেটা আমাদের বোধগম্য নয়।

এদিকে জেলা ছাত্রলীগের সিনিয়র সদস্যরাও জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের একক সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে অবিলম্বে একটি সুন্দর ও কার্যকরী কমিটি গঠন করে ছাত্রলীগকে সুসংগঠিত করার আহবান জানান।

এবিষয়ে বান্দরবান জেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি মো. ইসমাইল বলেন,বাংলাদেশ ছাত্রলীগ একটি ঐতিহ্যবাহী সংগঠন আর বান্দরবান হচ্ছে এর রোল মডেল তবে বর্তমানে কিছু পরিস্থিতি আমি জেলা ছাত্রলীগের একজন সহ সভাপতি হিসেবে আমাদের এবং ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের কে বিব্রত করছে। বিশেষ করে ২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টাম্বর সাবেক ছাত্রনেতা,কেন্দ্রী ছাত্রনেতা এবং জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপস্থিতির মাধ্যমে দেয়া কমিটি হঠাৎ করে জেলা ছাত্রলীগের অন্যান্য নেতাকর্মীদের মতামত ছাড়ায় একটি কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন আহ্বায়ক কমিটি করা হয়েছে । এখানে কলেজ ছাত্রলীগের কমিটিকে অকার্যকর এবং মেয়াদ উত্তীর্ণ বলে বিলুপ্ত করা হয়েছে,যার দায় ভার কখনো আমরা জেলা ছাত্রলীগের অন্যান্য নেতা কর্মীরা নিবো না। কারন এটি জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের একান্ত ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। কমিটির গঠন তন্তে বলা আছে যে কোন কমিটির গঠন করা বা বাতিল করা ক্ষেত্রে কমিটির সর্বসম্মতি ক্রমে সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয় কিন্তু এখানে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি কাউছার সোহাগ কুমিল্লায় এবং সাধারণ সম্পাদক বান্দরবানে অবস্থান করে দুই জন প্রায় ৩শত কিলো মিনিটার দুরত্বে অবস্থান করে কাগজে কলমে ০৯ জানুয়ারি ২০২২ তারিখে কিভাবে কমিটি বিলুপ্ত করেছে তা আমাদের জেলা ছাত্রলীগের অন্যান্য নেতা কর্মীরা অজ্ঞত।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা ছাত্রলীগের একজন নেতা বলেন,সভাপতি সাধারণ সম্পাদক আমার খুব কাছের বন্ধু হলেও কাউছারের কিছু সিদ্ধান্ত মোটেও ছাত্রলীগের জন্য মঙ্গলকর না। আমরা চাই ছাত্রলীগের রাজনীতিতে নতুন ছেলে মেয়েরা আসুক। আমরা বিয়ে করেছি,বয়স ভারি হচ্ছে ছাত্রলীগে অন্যদের সুযোগ করে দিতে চাই কিন্তু সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সিদ্ধান্ত সত্যি নিজেরাই বিব্রত হচ্ছি।

জেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি নাজমুল হোসেন বাবলু বলেন,জেলা ছাত্রলীগ ২০১৫ সাল থেকে আজ প্রায় ৭ বছর অতিক্রম করছে। বলতে গেলে জেলা ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটিও একটি মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটি।অর এই কমিটির সভাপতি,সাধারণ সম্পাদকের কিছু বিভিন্ন গঠন তন্ত্র পরিপন্থি কার্যক্রমের ফলে ছাত্রলীগের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে। যেমন সম্মেলনের মাধ্যমে আসা কমিটিকে হঠাৎ কোন সিদ্ধান্ত ছাত্র বিলুপ্ত করা টা ছাত্রলীগের জন্য একটি দুঃখ জনক ঘটনা।

সম্প্রতি সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ও ২১সদস্য বিশিষ্ট নতুন একটি আহবায়ক কমিটি প্রকাশ করার পর উত্তপ্ত হয়ে পড়ে জেলার ছাত্রলীগের রাজনীতি। নতুন আহবায়ক কমিটি প্রকাশ ও পুরনো কমিটি বাতিলের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করতে গেলে পুলিশি বাধায় তা পন্ড হয়ে যায়,তবে ছাত্রলীগের এমন অবস্থায় বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে বিরাজ করছে উত্তেজনা যেকোন সময় ঘটতে পারে অনাকাংখিত ঘটনা। যদিও জেলা ছাত্রলীগের নেতাদের দাবি সংগঠনকে শক্তিশালী করতে ছাত্রলীগের বিভিন্ন কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি করা হচ্ছে আর খুব শীঘ্রই জেলা ছাত্রলীগেরও সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।

এবিষয়ে বান্দরবান জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জনি সুশীলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি নানা অজুহাতে এড়িয়ে যান এবং তিনি বলেন এবিষয় টি নিয়ে সভাপতি বান্দরানে আসলে আমি সহ একটি প্রেস কনফারেন্স করবো,তখন বিস্তারিত আলাপ হবে।

অন্যদিকে বান্দরবান জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো.কাউছার সোহাগ বলেন, সম্প্রতি আমরা বান্দরবান জেলা ছাত্রলীগ সিদ্ধান্ত নিয়েছি আগামী জাতীয় নির্বাচন কে সামনে রেখে সারা বান্দরবানে ছাত্রলীগ কে সু-সংগঠিত করার জন্য কাজ করছি।তার ধারাবাহিকতায় আমরা জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়নে সম্মেলন দিয়েছি এবং আমরা নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি করছি।তারেই ধারাবাহিকায় জেলার সিনিয়র নেতৃত্ব বৃন্দদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি টা আমরা বিলুপ্ত ঘোষণা করেছি। মূলত বান্দরবান সরকারি কলেজ কমিটি টি একটি অকার্যকর ছিল এবং তারা ২ বছরে অনুমোদন ও নিতে পারেনি,সম্মেলনের পর থেকে তারা নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তারা কোন কাজ করতে ও পারেনি। তারা আমরা সামনে জাতয়ি নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে এই কমিটি বিলুপ্ত করেছি। এবং আগামী তিন মাসের জন্য এটি সম্মেলন প্রস্তুত করার জন্য ২১ জনের একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেছি,যাদের মাধ্যমে আগামী ৩ মাসের মধ্যে একটি কলেজ কমিটি গঠন করা হবে। এবং আমাদের জেলা ছাত্রলীগের লক্ষ্য হচ্ছে খুব অল্প সময়ের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ এবং কেন্দ্রী ছাত্রলীগের সাথে কথা বলে শীগ্রই জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলনের মাধ্যমে বান্দরবানে ছাত্রলীগের একটি গণজোয়ার সৃষ্টি হবে বলে আশা করছি।

পদ পদবী আর নতুন কমিটি গঠন, পুরাতন কমিটি বাতিলের এক মহদ্বন্দে জেলা ছাত্রলীগের এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে শিক্ষা,শান্তি আর প্রগতির পথে চলার জন্য সিনিয়র নেতৃবৃন্দদের দ্রুত নজর দেয়া দরকার বলে মনে করছে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।

BBS cable ad

অটোমোবাইল এর আরও খবর: