শিশু নুসরাতকে ধর্ষণের পর হত্যা মামলায় চাচা রুবেলের মৃত্যুদণ্ড
মো. রাকিব হোসাইন রনি, (লক্ষ্মীপুর) :
লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে চাঞ্চল্যকর সেই আট বছরের শিশু নুসরাত নুশুকে ধর্ষণের পর হত্যা মামলায় চাচা শাহ আলম ওরফে রুবেলকে (৩০) মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছে আদালত। একই সাথে একলক্ষ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো চার বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়। আজ মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) দুপুরে লক্ষ্মীপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক সিরাজুদ্দৌলাহ কুতুবী এ রায় দেন। তবে মামলায় অপর আসামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমানিত না হওয়া খালাশ দেয়া হয়।
লক্ষ্মীপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ কৌঁসুলি (পিপি) মো. আবুল বাশার রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, রায়ের সময় আসামীরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত আসামী রুবেল উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের পশ্চিম নোয়াগাঁও গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে। অপর আসামী মো. বোরহান উদ্দিন (২৭), সে নোয়াগাঁও বাজার ক্যাবল অপারেটর ব্যবসায়ী। নিহত শিশু নুসরাত পাশ্ববর্তি বাড়ির কুয়েত প্রবাসী এরশাদ মিয়ার মেয়ে ও স্থানীয় ফয়েজে রাসূল নুরানী মাদ্রাসার তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী। তারা সম্পর্কে দূর সম্পর্কের চাচা-ভাতিজী।
আদালত ও মামলার সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সনের ২৩ শে মার্চ শুক্রবার জুমার নামাজের আগে পশ্চিম নোয়াগাঁও গ্রামের কালা মেস্ত্রি বাড়ী থেকে শিশু নুসরাত নুশু (৮) নিখোঁজ হয়। নিখোঁজের তিনদিন পর ২৬ শে মার্চ (সোমবার) বেলা ১১টায় নুসরাতের বাড়ি থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের ব্রহ্মপাড়া গ্রামের ঠাকুর বাড়ীর ওয়াপদা খালে ভাসমান ব্যাগবন্দী ও গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় শিশু নুসরাতের অর্ধগলিত লাশ পুলিশ উদ্ধার করলে মা রেহানা বেগম ও মামা জিয়া উদ্দিন লাশটি শনাক্ত করেন। পরে ময়নাতদন্তের পর জানা যায় নুসরাতকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। এঘটনায় ২৬ মার্চ রাতেই নিহত শিশুর মা বাদী হয়ে ওই দিনই অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে রামগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেন।
এ ঘটনায় সন্দেহ হলে পুলিশ রুবেলের বন্ধু নোয়াগাঁও বাজার ক্যাবল অপারেটর ব্যবসায়ী বোরহান উদ্দিনকে আটক করলে বেরিয়ে আসে মুল রহস্য। বোরহান উদ্দিনের দেয়া তথ্যমতে, ওই বছরের ১লা এপ্রিল মোবাইল ট্র্যাকিং করে রামগঞ্জ থানা পুলিশ ও খুলনা মেট্রো পলিটন পুলিশ ধর্ষক ও খুনি শাহ আলম রুবেল কে গ্রেপ্তার করে লক্ষ্মীপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করলে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। এতে সে জানান, ঘটনার দিন শুক্রবার সকালে আইসক্রিম খাওয়ার লোভ দেখিয়ে শিশু নুসরাতকে তার ঘরে ডেকে নেয়ার পর গলা চেপে ধরে জোরপূর্বক নুসরাতকে ধর্ষণ করা অবস্থায় শ্বাসরোধ হয়ে সে মারা যায়। লাশ লুকানোর জন্য পাটি দিয়ে মুড়িয়ে স্টিলের আলমিরার উপর রেখে দেয়। রাতে হাত পা মুড়িয়ে নুসরাতের লাশ ব্যাগে ভরে বাড়ি থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে খালে ফেলে দেয় বলে জবানবন্দিতে জানায় রুবেল।
এ মামলায় তদন্ত করে ওই বছরের ১লা জুলাই রুবেল ও বোরহান উদ্দিনের বিরুদ্ধে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও বর্তমান লক্ষ্মীপুর শহর পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরির্দশক কাওসারুজ্জামান।। ১৩ জনের সাক্ষ্য গ্রহণের পর মামলার বাদী ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের দীর্ঘ যুক্তি-তর্ক শেষ হয় গত ২২ সেপ্টেম্বর। এরপর আজ মঙ্গলবার আদালতের বিচারক অপরাধীর বিরুদ্ধে এ রায় ঘোষণা করেন।
এদিকে রায় শুনে আদালত পাড়ায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে নিহত শিশু নুররাতের মা রেহানা বেগম বলেন, আমার মেয়ে হত্যার চার বছর পর আদালত ফাঁসির রায় দিয়েছে। আইনের ফাঁক দিয়ে যেনে আসামী বেঁচে যেতে না পারে। তাই এ রায় দ্রুত কার্যকর করার দাবী জানিয়েছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, শিশু নুসরাত হত্যা মামলার ঘটনার পর হত্যাকারীর বিচারের দাবিতে দীর্ঘদিন থেকে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ, ঢাকা প্রেসক্লাব, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় মানববন্ধন করেছেন স্থানীয় লোকজন। এ রায়ে স্থানীয়রাও সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।