হোসেনপুরে টিফিনের টাকায় গড়ে উঠল শিশুদের হাসি পাঠাগার
মো: আকিব হোসেন খান, (কিশোরগঞ্জ):
শিক্ষার্থীদের একতার শক্তি বিভিন্ন সময়ে দেখেছে বাংলাদেশ। রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে শুরু করে সামাজিক বিভিন্ন কর্মকান্ডে তাদের অংশগ্রহণ ইতিহাসের অংশ হয়ে আছে।
তাদের শুরুটা ২০১৮ সালে। স্কুল ও কলেজের অনেক শিক্ষার্থীদের বই পড়ার প্রতি আগ্রহ থাকলেও তাদের উপজেলায় কোনো পাবলিক লাইব্রেরি ছিল না। তাদের বই পড়ার প্রতি অদম্য ইচ্ছা থাকলেও তারা খুব একটা বই পড়তে পারত না। তাদের মধ্যে একটা পাবলিক লাইব্রেরির শূন্যতা কাজ করছিল৷
ইতিহাস গড়ার প্রত্যয়ে কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া একদল কিশোর তাদের টিফিনের টাকা জমিয়ে গড়ে তুলেছে শিশুদের হাসি পাঠাগার। পাঠাগারটি দৃষ্টিনন্দন, কেড়েছে বইপড়ুয়া অনেকের নজর।
বই পড়ার আগ্রহ বাড়াতে ও ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের হার কমাতে , নবম শ্রেণি পড়ুয়া মাহমুদুল হক রিয়াদ, আল জাবির ইয়াসিন, মাহফুজুল হক ফাহাদ ও জুনায়েদ রাব্বি প্রকাশসহ তাদের মনে হলো একটা পাবলিক লাইব্রেরি থাকলে পাঠ্য বই ছাড়াও অবসর সময়ে বিভিন্ন ধরণের বই পড়তে পারবে মানুষজন।
সে ভাবনা থেকেই শুরু পাঠাগার স্থাপনের কাজ। বাস্তবে রূপ দিতে শুরু হয় কর্মযজ্ঞ। উৎসাহিত করে সহপাঠীদের। সংগ্রহ করতে থাকে পাঠাগারের জন্য সদস্য। কিছুদিনের মধ্যে ১০০ সদস্য সংগ্রহ করে ফেলেন তারা। সবাই একত্রে সিদ্ধান্ত নেয় তারা তাদের টিফিনের টাকা হতে প্রতিদিন ১ টাকা হারে মাসে ৩০ টাকা চাঁদা দিবে। কয়েকমাস টাকা জমিয়ে পাঠাগারের জন্য প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র ও বই কিনবে।
একটা সময়ে রিয়াদ তাদের এই উদ্যোগের কথা জানান কবি ফখরুল হাসানের কাছে। তিনি তার এলাকার শিক্ষার্থীদের এমন আগ্রহ দেখে নিজে ১০০ বই দেন এবং তাদেরকে পাঠাগার স্থাপনের কাজে নানাভাবে উৎসাহিত করতে থাকেন ।
তাদের এই কার্যক্রম ফেসবুকের মাধ্যমে নজরে আসে কিশোরগঞ্জ জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগারের সহকারী পরিচালক আজিজুল হক সুমনের। তিনি পাঠাগার সংশ্লিষ্ট সবার সাথে কয়েক দফা কথা বলেন এবং পাঠাগারটি পরিদর্শন করে সরকারিভাবে তালিকাভুক্ত করার ঘোষণা দেন।
কয়েক মাস টাকা জমানোর পর ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সুন্দর জীবনের জন্য বই স্লোগান নিয়ে জুনায়েদ রাব্বি প্রকাশের বাসায় শুরু হয় পাঠাগারের যাত্রা। জমানো টাকা হতে একটি বুক সেলফ, ২টি টেবিল, কিছু চেয়ার ও প্রায় ৩০০ বই নিয়ে পাঠাগারের যাত্রা শুরু করে শিক্ষার্থীরা। তাদের সদস্যদের জন্য নির্দিষ্ট সময়ে পাঠাগারে বই পড়া ও সর্বোচ্চ ৭ দিনের জন্য বাড়িতে নিয়ে বই পড়ার নিয়ম চালু করে।
২০২০ সালে করোনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হলেও তারা হটলাইন নাম্বারের মাধ্যমে সদস্যদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বই পৌঁছে দিয়ে উপজেলাজুড়ে ব্যাপক সুনাম কুড়িয়েছে। তাদের কার্যক্রমকে ডিজিটাল করার জন্য তারা ইতিমধ্যে গুগল প্লে স্টোরে একটি এ্যাপস তৈরি করেছে যেখানে তাদের সকল বইয়ের তালিকা ও বইয়ের জন্য আবেদন করা যায়।
বর্তমানে পাঠাগারটি হোসেনপুর প্রশিকা অফিসের একটি বড় রুমে অবস্থিত।
পাঠাগারটির বইয়ের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে। ১টি বুক সেলফ থেকে এখন ৩টি বুক সেলফ। গল্প, উপন্যাস, কাব্য, সাইন্স ফিকশন, শিশুতোষ ও দেশ-বিদেশের অনেক বইয়ের সংগ্রহশালায় পরিণত হয়েছে শিশুদের হাসি পাঠাগার।
প্রতিষ্ঠাতা মাহমুদুল হক রিয়াদ জানান, আমাদের উপজেলায় কোনো পাবলিক লাইব্রেরি নেই, স্কুলের লাইব্রেরি সবসময় তালাবদ্ধ। পাঠ্যবইয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল আমাদের জ্ঞানার্জন। অজানা কে জানার আগ্রহ থেকেই আমরা সবাই মিলে পাঠাগার স্থাপন করেছি।