শিরোনাম

South east bank ad

২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু আজ মধ্যরাতে চরম সংকটে ইলিশ

 প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   অটোমোবাইল

বরিশাল ব্যুরো :

মৌসুমের শুরু থেকেই নদ-নদীতে ইলিশ সংকট ছিল প্রকট। সংকট নিয়েই ১ জুলাই থেকে ইলিশ মৌসুম শুরু হয়। মৌসুমের শেষ পর্যায়ে হলেও নদ-নদীতে বেশী মাছ পাওয়া যাবে এমন আশা বাণী শুনিয়েছিলেন ইলিশ বিশেষজ্ঞারা। বিশেষ করে প্রতিটি আমাবশ্যয়-পূর্ণিমায় এমন আশার বানী শোনানো হতো। তবে সব আশায় গুড়েবালি দিয়ে বিভাগের ছয় জেলার নদ-নদী ও সংলগ্ন সাগরে এবার গতবছরের তিনভাগের একভাগ কম ইলিশ আহোরিত হয়েছে। দক্ষিণের মোকামগুলোতে ইলিশ ক্রয়-বিক্রয়ের হিসাবে এ তথ্য জানা গেছে।

এমন চরম সংকট দিয়েই দেশের ‘রূপালী শষ্য’ ইলিশের এবছরের ভরপুর মৌসুম শেষ হবে আজ রোববার। মা ইলিশের প্রজনন নিরাপদ করার জন্য প্রতিবছরের মতো এবারও মৎস্য অধিদপ্তরের আশ্বিনের আমাবশ্যা ও পূর্ণিমা মাঝে রেখে আজ মধ্যরাত থেকে ২২ দিন ইলিশ নিধনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে মৎস্য অধিদপ্তর।

অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয় সুত্রে দেয়া তথ্য মতে, গত ১ জুলাই থেকে গত ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের মোকামগুলোতে মোট ৩৭ হাজার ১৩৮ টন ইলিশ ক্রয়-বিক্রয় হয়েছে। গতবছর জুলাই-সেপ্টেম্বর তিনমাসে দক্ষিণাঞ্চলে ইলিশ ক্রয়-বিক্রয় হয়েছে ১ লক্ষ ৭ হাজার ৯৪৭ মেট্রিক টন। এ তিন মাসের হিসাবে গতবছরের তুলনায় এবার ৭০ হাজার ৮৩৬ টন কম পরিমান ইলিশ কেনাবেচা হয়েছে দক্ষিণের মোকামে। মৎস্য অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, সেপ্টেম্বরের শেষ পনের দিনের হিসাব যুক্ত করেও ইলিশ আহোরনের পরিমান গতবছরের অর্ধেকও হবেনা।

মৎস্য বিশেষজ্ঞদের মতে, জুলাইতে মৌসুম শুরু হলেও আগষ্ট ও সেপ্টেম্বরে নদ-নদীতে বেশী পরিমান ইলিশ পাওয়া যায়। তারমধ্যে সেপ্টেম্বর ইলিশ আহোরনের পিকটাইম হিসাবে গণ্য হয়। তবে এবার হতাশ হয়েছে সেপ্টেম্বরে। বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ১৫ সেমেপ্টম্বর পর্যন্ত মাত্র ৪ হাজার ৬৫০ মেট্রিক টন ইলিশ কেনাবেচা হয় বিভাগের মোকামগুলোতে। শেষ পনের দিনে এর পরিমান সর্বোচ্চ দ্বিগুন হতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে। অথচ গতবছর সেপ্টেম্বর ৭১ হাজার ৫২৯ টন ইলিশ আহোরিত হয়েছিল। এবারের আগষ্টে গত আগষ্টের তুলনায় ২ হাজার ৯১২ টন বেশী পরিমান ইলিশ পাওয়া গেছে। চলতি আগষ্টে আহোরিত ইলিশের পরিমান ২১ হাজার ২৬৫ টন এবং গতবছরে আগষ্টে ছিল ১৮ হাজার ৩৫৩ টন। মৌসুমের প্রথম মাস জুলাইতে ছয় জেলায় ১১ হাজার ২২২ মেট্রিক টন ইলিশ আরোহিত হয়। গতবছর জুলাইতে এর পরিমান ছিল ১৮ হাজার ৬৫ মেট্রিক টন। অর্থাৎ এবছরের জুলাইতে গত বছরের চেয়ে ৬ হাজার ৮৪৩ মেট্রিক টন কম ইলিশ পাওয়া গেছে দক্ষিণাঞ্চলে।

সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, ইলিশের ৬৬ ভাগ আহোরিত হয় বরিশাল তথা দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদী ও সংলগ্ন সাগর থেকে। নদীনদীতে ইলিশ আহোরনে ২০১৬ ও ১৭ সাল ছিল স্বর্ণসময়। ওই দুই মৌসুমে দক্ষিণের মোকামে রেকর্ড পরিমান ইলিশ কেনাবেচার পর পরের দুইবছর কমে গিয়েছিল। ২০২০ সাল থেকে সাগরের ইলিশ পাওয়া গেলে কম থাকে অভ্যন্তরীন নদীতে। ফলে কমে যাচ্ছে ্ইলিশ আহোরনের পরিমান।

হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জের পাশ দিয়ে প্রবাহিত মেঘনা ইলিশের ষষ্ঠ অভয়াশ্রমভূক্ত এলাকা। হিজলার ধুলখোলা ইউনিয়ন জাতীয় মৎস্যজীবী সমিতির সাধারন সম্পাদক মনির মাতুব্বর বলেন, এবারের মৌসুমে মেঘনা একপ্রকার ইলিশশুন্য ছিল। এমনদিনও গেছে সারাদিন জাল ফেলে শুন্যহাতে জেলেদের বাড়িতে ফিরতে হয়েছে। মনির মাতুব্বর জানান, ইলিশ না পাওয়ায় অর্থসংকটে দিশেহারা হয়ে জেলেরা নেটজাল দিয়ে নদীর সকল প্রকার মাছের রেনু ছেকে তুলে নিচ্ছেন।
দক্ষিণের নদ-নদীতে ইলিশ কম পাওয়া প্রসঙ্গে চাঁদপুর ইলিশ গবেষণা কেন্দ্রের মূখ্য বৈজ্ঞনিক কর্মকর্তা ড. আনিছুর রহমান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন, নদ-নদীর নাব্য কমে যাওয়া এবং নদীদূষনের কারনে সাগর থেকে অভ্যন্তরীন নদ-নদীতে ইলিশ আসা গত দুইবছর যাবত কমে গেছে। এবছর পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। জেলেদের নিষিদ্ধ জাল ব্যবহারও এর জন্য দায়ী। ইলিশসম্পদ বাঁচাতে এ সমস্যাগুলো চিহিৃত করে নতুন পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে।
জাতীয় ক্ষুদ্র জেলে সমিতির সাধারন সম্পাদক আনোয়ার হোসেন সিকদার বলেন, বঙ্গোপসাগরের সঙ্গে নদীর সংযোগ মোহনা হচ্ছে ৬টি। তারমধ্যে মেঘনার ২টি, আন্ধারমানিক-পায়রা নদের ২টি, তেতুলিয়া এবং ধলেশ্বর নদের ১টি করে মোহনা। আনোয়ার সিকদার বলেন, এসব মোহনা কমপক্ষে ৫০ ফুট গভীর থাকা কথা। অনেক মোহনার গভীরতা ১০-৫০ ফুটে নেমে এসেছে। যে কারনে ইলিশের চলার পথ বাঁধাগ্রস্থ হওয়ায় সাগর ছেড়ে নদীতে আসছেনা। মোহনায় জেলেদের নিরবিচ্ছিন্নভাবে জাল পাতার কথাও স্বীকার করেন তিনি।

২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু : মৎস্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় বিভাগীয় উপ পরিচালক মো: আনিছুর রহমান তালুকদার বলেন, ৮০ ভাগ মা ইলিশ ডিম দেয় আশ্বিনের আমাবশ্য ও পূর্ণিমায়। প্রজনন নিরাপদ করতে আজ রোববার রাত ১২টা থেকে ২৫ অক্টোবর পর পর্যন্ত ২২ দিন ইলিশ নিধন, ক্রয়-বিক্রয় পরিবহন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অন্য মাছ আহোরনের অজুহাতে নদীতে নেমে যাতে কেউ ইলিশ নিধন করতে না পারে সেজন্য নদীতে জেলে নৌকা নামতে দেয়া হবেনা। কোষ্টগার্ড, নৌপুলিশ ও জেলেদের নিয়ে গঠিত ফিসগার্ড ২২ দিন নদী পাহাড়া দেয়া হবে।

এ কার্যক্রমে অংশ নিতে বিভিন্ন জেলা থেকে ২১ জন মৎস্য কর্মকর্তাকে ২২ দিনের জন্য বরিশাল বিভাগে পদায়ন করা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা কার্যক্রম তদারকিতে ৩টি মনিটরিং টিম গঠন করেছে মৎস্য অধিদপ্তর।

BBS cable ad

অটোমোবাইল এর আরও খবর: