শিরোনাম

South east bank ad

অমিত হাসানের লেখা ছোটগল্প, "রণেভঙ্গ"

 প্রকাশ: ১৯ জুন ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   অটোমোবাইল

“রণেভঙ্গ”

অমিত হাসান

বছর তিনেক আগে আমার দাদী দুনিয়া ছেড়ে চলে যান। দাদা মারা গেছেন আরো আগে। তার মারা যাওয়ার ঘটনা ছিলো এক অনন্য বীরত্বগাঁথা। তিন বছরের পিতৃহীন সন্তানের মুখের দিকে চেয়ে দাদী কাটিয়ে দেন পয়ষট্টি বছর। দেশ স্বাধীনের বহু বছর পরে চালু করা হয় ‘মুক্তিযোদ্ধা ভাতা’। বলে রাখা ভালো, পাকিস্তান আমলে দাদা ছিলেন পুলিশ হেড কনস্টেবল । দাদার পেনশনের টাকা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা আর দাদীর বয়স্ক ভাতার ওপর দাঁড়িয়ে থাকা আমাদের এই সংসারের খুঁটি।

আজ দাদীর মৃত্যুবার্ষিকী। দাদীর রেখে যাওয়া সেই পুরোনো ট্রাংকের দিকে চেয়ে খুব কষ্ট হচ্ছে। খুব যত্ন করে রাখতেন এই ট্রাংক। বলতেন এর ভেতর তার জীবন লুকিয়ে আছে। দাদী জীবিত অবস্থায় কিংবা মারা যাবার পরেও কেউ ওই ট্রাংকে কখনো হাত দেয়নি। আজ প্রথমবারের মতো খুব আগ্রহ নিয়ে ওটা খুলে পেলাম একটা পাঞ্জাবি, লুঙ্গি আর একটা বিয়ের শাড়ি। সম্ভবত এগুলো আমার দাদা দাদির বিয়ের পোশাক। একদম কোনায় একটা ডায়েরি। ডায়েরির পাতা উল্টাতে একটা খাম মাটিতে পড়লো। খামের ভেতর থেকে একটা চিঠি পেলাম। কিসের চিঠি? খুলতেই দেখি লাল কালি দিয়ে লেখা একটা চিঠি। চিঠিতে লেখা…

প্রিয় আসমা,

তোমার সাথে হয়তো আমার আর দেখা হবে না। আমি তোমার সামনে কি মুখ নিয়া দাঁড়ামু? আমি যে একটা বিশ্বাসঘাতক। বাপের মতো বটের ছায়া দিছিলো যে নেতা, ঘরে নিয়া যে আমারে ভাত খাওয়াইতো আমি তারে ছাইড়া পালায় গেছি। আগষ্টের ১৫ তারিখ রাত্তিরে যখন গাড়ির শব্দ শুনি তখনই বুঝতে পারছিলাম পরিস্থিতি ভালো না। খারাপ কিছুর আশংকা টের পাইয়া আমি দৌঁড়ে পালায় গেছিলাম। দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে একসময় দূর থেইক্কা গুলির শব্দ শুনছি। আমি বুঝছিলাম শেখ সাহেব আর নাই। আমার নেতার বুক ওরা ঝাজরা কইরা ফালাইছে। ওরা কাউরে বাঁচায় রাখে নাই। আমি তো মইরাও শান্তি পাবো না। যারে জীবন দিয়া রক্ষা করার শপথ নিছিলাম, মরার ভয়ে তারে পিঠ দেখায় পালাইলাম। আমি যে বেঈমানী করছি আল্লায়ও আমারে মাফ করবে না। জানি তুমিও মাফ করবা না। আমি ঘেন্যায় নিজের দিকে তাকাতে পারি না। আমি আমার নেতারে মাইরা ফেলছি। আমিই এর জন্য দায়ী। যার জন্য এ দেশ স্বাধীন হইলো আমি তারে কি দিলাম? জাতি তারে কি দিলো? আমি বিশ্বাসঘাতকতা করছি কিন্তু, তা করছি আমার সন্তানের কথা চিন্তা করে। কিন্তু, এই জাতি ক্যামনে পারলো নেতার বুকে গুলি চালাইতে? কত নিষ্ঠুরভাবে ওরা আমার নেতার বুকে গুলি চালাইছে। আমি তো বাঁইচাও মইরা গেছি। আমি যে কতবড় পাপী এ কথা কোনোদিন আমার পোলারে কইয়ো না। মানুষ ওরে কইবো বিশ্বাসঘাতকের পোলা। ওরে তুমি আমার নেতার আদর্শে মানুষ কইরো।

চিঠিটা পড়ে আমার যেন পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেলো। কার উত্তরসূরী আমি? আমার দাদা কি তাহলে একজন বিশ্বাসঘাতক নাকি সন্তানের কথা চিন্তা করা একজন নিরুপায় বাবা? এর উত্তর কে দেবে? কার কাছে পাবো?

না। এ কথা আমি কাউকে বলতে পারবো না। আজ থেকে এই গোপন সত্য কেবল আমার ভেতরেই দাফন হয়ে থাকবে আমার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত।

BBS cable ad

অটোমোবাইল এর আরও খবর: