শিরোনাম

South east bank ad

আমার কেন বান্দরবান পোস্টিং হলোনা: তানজিয়া সালমা

 প্রকাশ: ২০ জুন ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   অটোমোবাইল

রবীন্দ্রনাথ বা শরৎচন্দ্র পড়বার সময় দেখেছি উপন্যাস বা গল্পের কোন চরিত্রের অসু্স্থতায় ডাক্তারের পরামর্শ ছিলো হাওয়া বদল করবার। জীবনে তেমন করে এই বিষয়টা উপলব্ধি করার সুযোগ হয়নি এর আগে। কোভিড হবার পর থেকে আমি প্রায়শ অসুস্থ হয়ে পড়ছিলাম। অনেকদিন বাসায় থেকে বিশ্রাম নিয়েছি। শরীরের অস্বস্তি কাটেনি তেমন করে। অফিসে যাই, মনের জোরে কাজ করি। শরীরটাকে কেমন ভারী কোন বস্তু বয়ে নিয়ে যাবার মত বয়ে বেড়াচ্ছি বলে মনে হয়। স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের যুগ্মসচিব (হাসপাতাল) হিসেবে দেশের হাসপাতালের হাল হকিকৎ দেখা আমার অন্যতম দাপ্তরিক দায়িত্ব। করোনার কারণে সেটাও ঠিকমত সরেজমিনে করে উঠা হচ্ছিল না। টেলিফোন বা জুম অ্যাপে যতটুকু পারা যায় করছিলাম।

গত ১৭/৬/২০২১ তারিখে বেড়িয়ে পড়লাম কক্সবাজার, বান্দরবান আর চট্টগ্রামের কয়েকটি হাসপাতাল পরিদর্শনে। শুরুতেই আষাঢ়ে বৃষ্টির ছোবলে বিপর্যস্ত সবাই। আমি মনে মনে দারুণ খুশি। বর্ষা আমার ভীষণ প্রিয় ঋতু। বৃষ্টি দেখলে আমার ভিতরটা ব্যাঙের মত খুশি হয়ে উঠে।

পার্বত্য তিনটি জেলার দুটিতে এর আগে গিয়েছি। ভীষণ ভালোলাগায় আছন্ন থেকেছে মন বেশ কিছুদিন। প্রকৃতি এখানে উদার, অবারিত, অসহ সুন্দর। এবার গেলাম বান্দরবানে। তৃতীয় বৃহত্তম এই পর্যটন জেলাটি করোনার কারণে পর্যটক শূন্য। ভ্রমণ পিপাসুদের পদভারে মুখরিত থাকা পর্যটন কেন্দ্রগুলো যেন দারুণ ক্লান্তি শেষে ভাতঘুমে বিশ্রামে আছে।

আমার সময়ের স্বল্পতা হেতু শুক্রবার সকালেই নীলগিরি চলে যাই। পাহাড়ী পথের দুইপাশে অসংখ্য আম আর কলার বাগান। জংলী নাম না জানা কত যে ফুল। মাঝে মাঝে উপজাতী পাড়া। আগের রাতে বৃষ্টি থাকলেও সকাল থেকে আকাশ পরিষ্কার। রাস্তায় চিম্বুক পাহাড়ে কিছুক্ষণ থেকে সোজা নীলগিরিতে। মনকে ভালোলাগায় নির্বাক করে দেবার মত সৌন্দর্যকে একা উপভোগ করা কঠিন। মনে মনে প্রিয়মুখগুলোকে কামনা করছিলাম। ইস ওরা যদি থাকত এখন! আসবার সময় কে যেন বলেছিল বৃষ্টিতে নীলগিরির সৌন্দর্যে অন্যরকম মাত্রা যোগ হয়। একদম একা একা বসে ভাবছিলাম বৃষ্টি হলে মন্দ হত না। বিধাতা আমার চাওয়াকে পাওয়ায় পরিণত করে দিলেন কয়েক মিনিট পরেই। প্রথমে গুড়িগুড়ি তারপরেই ঝুম বৃষ্টি। শরীরের ভেতরে পরাণটা আনন্দে খলবলিয়ে উঠল। ইচ্ছে করছিল দুহাত ছড়িয়ে দিয়ে কাকভেজা হই। সংগত কারণেই সেটা সম্ভব ছিলনা। তবুও বৃষ্টি আমাকে ছুঁয়ে দিয়ে গেল ভালোমতই। আহা কী আনন্দময় সে পরশ!

আরও কিছুক্ষণ থাকার ইচ্ছেটাকে পাত্তা না দিয়ে রওনা হলাম মেঘলা দর্শনে। দৃষ্টির সাথে সাথে মনকে চমকে দেবার মত সুন্দরের ছড়াছড়ি চারপাশে। স্বগতোক্তি করে উঠল মন- “মরিতে চাহিনা আমি এ সুন্দর ভুবনে”। ইস জীবন এত ছোট ক্যানে⁉️ সন্ধ্যা ছুঁই ছুঁই সময়ে গেলাম নীলাচলে। চোখ যা দেখেছে, মন যা অনুভব করেছে তা ভাষায় অনূদিত করার ক্ষমতা বিধাতা আমাকে দেননি। এক কথায় বলি-অপার্থিব‼️ বিশুদ্ধ অক্সিজেন সেবনে এই দুইরাত একদিনেই যেন আমার অসুস্থ শরীরসহ মনটা চনমনে হয়ে গেছে।

চাকরি জীবনে যখন যেখানে পোস্টিং হয়েছে আনন্দ নিয়েই সেখানে গিয়েছি, মনপ্রাণ ঢেলে দিয়ে কাজ করবার চেষ্টা করেছি। কোন আফসোস ছিলনা। বান্দরবান দেখার পরে মন আমার দুঃখের বেহাগী সুরে গেয়ে চলেছে একটাই গান-আমার কেন বান্দরবান পোস্টিং হলোনা একবারও।

(তানজিয়া সালমা, যুগ্মসচিব, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ এর ফেসবুক পেইজ থেকে নেয়া।)

BBS cable ad

অটোমোবাইল এর আরও খবর: