শিরোনাম

South east bank ad

একজন অর্থনীতিবিদ এবং কূটনীতিক হিসেবে বিশ্বজুড়ে খ্যাতি অর্জন করেছেন ড. এ কে আব্দুল মোমেন

 প্রকাশ: ৩০ অগাস্ট ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   জনপ্রতিনিধি

পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি একজন অর্থনীতিবিদ এবং কূটনীতিবিদ। পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের আগে তিনি আগস্ট ২০০৯ থেকে অক্টোবর ২০১৫ পর্যন্ত জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি সিলেট-১ আসন থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

মোমেন ১৯৪৭ সালের ২৩শে আগস্ট বাংলাদেশের সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আবু আহমদ আব্দুল হাফিজ ছিলেন সিলেট জেলা মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা। তার মা সৈয়দা শাহার বানু ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক এবং সিলেটে নারী জাগরণের অগ্রদূত। তার ভাই আবুল মাল আব্দুল মুহিত বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। আব্দুল মোমেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৯ সালে অর্থনীতিতে বি.এ এবং ১৯৭১ সালে উন্নয়ন অর্থনীতিতে এম.এ অর্জন করেন। তিনি ১৯৭৯ সালে হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল থেকে এমবিএ পাস করেন। এরপর ১৯৭৬ সালে ঢাকার সেন্ট্রাল কলেজ থেকে আইনশাস্ত্রে এলএলবি অর্জন করেন। এরপর তিনি যুক্তরাষ্ট্রে তার লেখাপড়া চালিয়ে যান এবং নর্থইস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়, বোস্টন, ম্যাসাচুসেটস থেকে ১৯৮৮ সালে অর্থনীতিতে পিএইচডি সম্পন্ন করেন।

তিনি একজন সরকারি চাকরিজীবী হিসেবে ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৪ পর্যন্ত স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রীর ব্যক্তিগত সচিব এবং ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত শিল্প ও বাণিজ্য এবং খনিজ সম্পদ ও পেট্রোলিয়াম মন্ত্রীর ব্যক্তিগত সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি মেরীম্যাক কলেজ, সালেম স্টেট কলেজ, নর্থইস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়, ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়, এবং হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কেনেডি স্কুল অফ গভর্নমেন্ট এ অর্থনীতি ও ব্যবসায় প্রশাসন পড়িয়েছেন।

১৯৯৮ সালে তিনি সৌদি ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট ফান্ড (এসআইডিএফ) এর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা নির্বাচিত হন। ২০০৩ সালে রিয়াদ কম্পাউন্ড বোমাহামলার সময় তিনি সৌদি আরব ত্যাগ করে ম্যাসাচুসেটসে এ ফিরে আসেন। সেখানে তিনি ফ্রেমিংহ্যাম স্টেট কলেজের অর্থনীতি ও ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগে পড়াতেন। ২০০৯ সালের আগস্ট মাসে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি নিযুক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি সেখানে শিক্ষকতা চালিয়ে যান।

২০১০ সালে তিনি ইউনিসেফ কার্যনির্বাহী পরিষদের আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬৭ তম অধিবেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০১৪ সালে জাতিসংঘের দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের কমিটির সভাপতি ছিলেন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা অধ্যাপক ড. এ কে আব্দুল মোমেনকে ২০০৯ সালে গুরু দায়িত্ব দিয়ে জাতিসংঘে নিয়োজিত করলে স্বীয় মেধা, কর্মদক্ষতা, কুটনৈতিক বিচক্ষণতা, প্রঞ্জা ও মানবিক গুণাবলী দিয়ে স্বীয় পদকে তিনি অলংকৃত করার পাশাপাশি বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি উজ্বল করেছেন। তিনি যেখানেই হাত দিয়েছেন সেখানেই সাফল্য অর্জন করেছেন। দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীসহ বাংলাদেশের জন্যে অনেকগুলো দূর্লভ এ্যাওয়ার্ড বা সন্মান নিয়ে আসেন। তাঁর কূটনৈতিক দক্ষতা, অক্লান্ত পরিশ্রম, সবার সাথে বন্ধুত্ব এবং ধীশক্তির জন্য বাংলাদেশ সরকার গোটা বিশ্বাসীর কাছে আস্থা অর্জনে সমর্থ হয়। তার অক্লান্ত পরিশ্রম, কর্মপরিকল্পনা এবং তা বাস্তবায়নে ত্বরিত সিদ্ধান্ত গ্রহণের সাফল্যের কারণেই বাংলাদেশ সে সময়ে জাতিসংঘের বিভিন্ন ফোরামে নেতৃস্থানীয় দায়িত্ব পালনে সক্ষম হয়।

জাতিসংঘে দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে ড. এ কে আবুল মোমেনের সাফল্যের মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হচ্ছে; ১। তিনি জাতিসংঘে শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশকে সর্বোচ্চ অবস্থানে নিয়ে যান এবং ব্রণ্ড-নেইম স্থাপিত করেন। ২। বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত ড. এ কে আব্দুল মোমেন জাতিসংঘের সাধারন পরিষদে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব তিন তিনবার পালন করেন। মরহুম স্পীকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরির পর বালাদেশে তিনিই একমাত্র যিনি এ দায়িত্ব পালন করার সম্মান অজর্ন করেন। ৩। তিনি বিশ্ব ফোরামে বাংলাদেশকে “অর্থনৈতিক উন্নয়নের মডেল" হিসেবে তুলে ধরেন। ৪। বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নের চিত্ৰ বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরার ক্ষেত্রে তিনি অগ্রপথিক। ৫। দুর্যোগ মোকাবেলায় তিনি বাংলাদেশকে সমগ্র বিশ্বে “আনন্য উদাহরণরূপে” প্রতিষ্ঠা করেন। ৬। জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালনের ছয় বছরে বাংলাদেশ যতগুলো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করে তার সব কটিতে (প্রায় ৫২টি) জয়লাভ করে। তার মেয়াদকালে বাংলাদেশ কোন নির্বাচনে কখনো পরাজিত হয়নি। ৭। ড. মোমেনন নিজেও বিভিন্ন সময়ে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ পদে নির্বাচিত হয়ে দেশের জন্যে সম্মান বয়ে নিয়ে আসেন। যেমন—(১) ইউনিসেফের প্রেসিডেন্ট, (২) সাউথ-সাউথ ইউ-এন হাইলেবেল কমিটির প্রেসিডেন্ট, (৩) জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ভাইস প্রেসিডেন্ট, (৪) সেকেন্ড কমিটি বা ইকোনোমিক কমিটর চেয়ারম্যান, (৫) পীস কিপিং কমিশনের প্রেসিডেন্ট ও (৬) ভাইস প্রেসিডেন্ট, (৭) ক্রীডেনশিয়াল কমিটির প্রেসিডেন্ট, (৮) ইকোসক (ECOSOC ), (৯) ইউএনডিপি, (১০) ইউ-এন উইমেন, (১১) ইউ-এন-এফ-পি-এ ইত্যাদির ভাইস প্রেসিডেন্ট, (১২) কাউন্টার টেরোরিজমের ফেসিলিটেটর, (১৩) স্বল্প উন্নত দেশগুলোর (LDCs)চেয়ারম্যান দুই দুবার, (১৪) ন্যামের কোর্ডিনেটর, (১৫)সেক্রেটারী জেনারেলের সিনিয়র উপদেষ্টা প্যানেলের সদস্য, (১৬) এশিয়া-প্যাসিফিক রাষ্ট্রসমূহের চেয়ারম্যান প্রভৃতি । তাছাড়াও তিনি বিভিন্ন সংস্থার বোর্ড মেমবারও ছিলেন। ৮। তিনি জাতিসংঘের প্রধান ভবনের ভেতরই এক টুকরো বাংলাদেশ ---"বাংলাদেশ লাউঞ্জ" স্থাপন করতে সক্ষম হন। বাংলাদেশসহ বিশ্বের মাত্র ৫টি দেশের এধরণের লাউঞ্জ আছে।


৯। অধ্যাপক মোমেনের প্রচেষ্টাতেই প্রায় ৩৭ বছর পর জাতিসংগের সদস্য পদ পাওয়ার পর নিউইয়র্কে বাংলাদেশ সরকারের জন্যে একটি স্থায়ী মিশন এবং ৩৯ বছর পর রাষ্ট্রদূতের জন্যে একটি "স্থায়ী আবাস" ক্রয় করা সম্ভব হয়। এর ফলে প্রদেয় ভাড়া বাবদ প্রতিমাসে সরকারের প্রায় ৪৫ হাজার ডলার সাশ্রয় হচ্ছে। তাছাড়া বাড়ি ও অফিসের মালিক এখন বাংলাদেশ। ১০। তিনি বিএনপি সরকারের সময় বন্ধ হয়ে যাওয়া জাতিসংঘ রেডিও’তে বাংলা সম্প্রচার পুনরায় চালু এবং বাংলায় ওয়েব পেইজ চালু করেন।১১। জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন তাকে -Ambassador of Consensus Building এবং তার সহকারী বিদেশী রাষ্ট্রদূতগণ তাকে "আওয়ার লিডার বা আমাদের নেতা " হিসেবে সম্বোধন করতেন। ১২। প্রবাসী বাংলাদেশিরা তাকে আখ্যায়িত করেন "জনতার রাষ্ট্রদূত"। জাতিসংঘের বিভিন্ন কর্মসূচীতে তিনি প্রবাসীদের সম্পৃক্ত করতেন। ১৩। নিউ ইয়র্কের বাংলা সাপ্তাহিক ‘বাঙালী” তাদের সম্পাদকীয়তে লিখেছে- “রাষ্ট্রদূত মোমেনের লিগেসি অন্য কেউ পূরণ করতে পারবে কিনা সন্দেহ"। ১৪। রাষ্ট্রদূত থাকাবস্থায় ড. মোমেন পীস কিপিং-এ সর্বোচ্চ সংখ্যক সৈন্য, পুলিশ ও মহিলা পুলিশ নিয়োগে সক্ষম হন। এমনকি নৌবাহিনীর লোকদেরও নিয়োগের সুযোগ করে দেন। ১৫। রাষ্ট্রদূত থাকাবস্থায় পীস কিপিং-এ সর্বোচ্চ পরিমান ইকোপমেন্ট ভাড়া দিয়ে দেশের জন্যে অনেক অনেক বৈদেশিক মুদ্রা অজর্ন করেন। ১৬। তিনি পীস কিপারদের মৃত্যুর কমপেনসেশন ৫০ হাজার থেকে ৭০ হাজার ডলারে উন্নীত করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ১৭। প্রায় বিশ বছর স্থগিত থাকার পর পীস কিপিং-এ অংশ গ্রহণকারী সৈনিকদের বেতন ও আনুষঙ্গিক সুবিধাদি প্রায় ৩৭% বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রেখেছেন। ১৮। তাঁর প্রচেষ্টার ফলে ঐ সময়ে ইউ-এন-ডি-পি বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশী সম্পদ পাঠায়। ১৯। তিনিই সর্ব প্রথম জাতিসংঘ বাংলাদেশ মিশনে বিজয় দিবস, জাতীয় শোক দিবস, মাতৃভাষা শহীদ দিবস, নববর্ষ দিবসসহ সকল জাতীয় দিবস সমূহ পালনের রেওয়াজ চালু করেন। তার পূর্বে এগুলো কখনো বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে পালিত হয়নি।


অধ্যাপক ড. এ কে আব্দুল মোমেন একজন মননশীল প্রবন্ধকার, নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষাবিদ, নিষ্ঠাবান গবেষক, মানব দরদী সমাজসেবক এবং বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ হিসেবে বিশ্বজুড়ে খ্যাতি অর্জন করেছেন। অধ্যাপক ড. এ কে আব্দুল মোমেন দীর্ঘ সাড়ে ৩৭ বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পেশাগত দায়িত্ব পালন করে ২০১৫ সালের ২৭শে নভেম্বর সিলেটে ফিরে এলে হাজার হাজার সিলেটবাসী তাকে সাদরে গ্রহণ করেন।

BBS cable ad

জনপ্রতিনিধি এর আরও খবর: