শিরোনাম

South east bank ad

চালের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কমলেও বাড়ছে দেশে

 প্রকাশ: ২২ জুন ২০২০, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   ক্রয়-বিক্রয়

চালের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কমলেও বাড়ছে দেশে
বোরোর বাম্পার ফলনের পরও ভরা মৌসুমে দেশের বাজারে বেড়েছে চালের দাম। অথচ আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম কমছে। ধানের বাড়তি দামের অজুহাত দেখিয়ে দেশের বাজারে চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন মিল মালিকরা। খুচরা ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গত ১০ দিনের ব্যবধানে চিকন, মাঝারি, মোটা চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ৩ থেকে ৫ টাকা। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে ঢাকার ৪৫টি এলাকাকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করে নতুন লকডাউন দেয়া হবে, এমন গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়লে গত ১৪ জুন থেকে চালের দাম বেড়ে যায়। তারা জানান, করোনাভাইরাস আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার শুরুতেই চাল বিক্রি বেড়ে যায়, এতে দামও বাড়ে। এরপর বিক্রি কমলে মাঝে দাম কিছুটা কমে। তবে রোজার আগে আবার চালের চাহিদা বাড়ায় দাম বেড়ে যায়। নতুন চাল বাজারে এলে ঈদের আগে দাম কিছুটা কমে। কিন্তু তা খুব বেশি দিন স্থায়ী হলো না, এখন আবার দাম বাড়ছে। এবার বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যানুসারে চলতি বোরো মৌসুমে দেশে মোট ৪৮ লাখ ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এর মধ্যে ৪৭ লাখ ৫৪ হাজার জমিতে বোরো ধান চাষ করা হয়েছে। যার মধ্যে ৯ লাখ হেক্টরে হাইব্রিড, ৩৮ লাখ ২০ হাজার হেক্টরে উফশী ও ২৯ হাজার হেক্টরে স্থানীয় জাতের বোরো আবাদ করা হয়। অন্যদিকে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় হেক্টরপ্রতি গড়ে ৪ দশমিক ২০ টন করে মোট দুই কোটি লাখ টন। পরিসংখ্যান অনুসারে দেখা যায়, আগের কমপক্ষে তিন বছরে ধারাবাহিকভাবে বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। আর এবারের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা গত বছরের কাছাকাছিই রয়েছে। গত বছর উৎপাদন ছিল হেক্টরপ্রতি ৪ দশমিক ১৫ টন করে মোট দুই কোটি তিন লাখ ৮৮ হাজার টন। সোমবার বিভিন্ন খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গরিবের মোটা চালের দাম বেড়ে কেজি ৩৮ থেকে ৪৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে, যা আগে ছিল ৩৪ থেকে ৩৬ টাকার মধ্যে। ৪০ থেকে ৪২ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া মাঝারি মানের চালের দাম বেড়ে হয়েছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। চিকন চালের দাম বেড়ে কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৬ থেকে ৬২ টাকা, যা আগে ছিল ৫৪ থেকে ৫৮ টাকার মধ্যে। চালের দাম বাড়ার তথ্য উঠে এসেছে সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যেও। প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে চিকন চালের দাম ৫ দশমিক ১৭ শতাংশ, মাঝারি চালের দাম ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ এবং মোটা চলের দাম ২ দশমিক ৪৭ শতাংশ বেড়েছে। টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, খুচরা বাজারে মিনিকেট ও নাজির চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৪ থেকে ৬৮ টাকা, যা আগে ছিল ৫২ থেকে ৬৪ টাকা। মাঝারি মানের চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫৫ টাকা, যা আগে ছিল ৪৪ থেকে ৫২ টাকা। আর মোটা চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৮ থেকে ৪৫ টাকা, যা আগে ছিল ৩৬ থেকে ৪৫ টাকা। খিলগাঁওয়ের তালতলার চাল ব্যবসায়ী জানে আলম ভূঁইয়া বলেন, ঈদের আগেই বাজারে নতুন চল এসেছে। প্রথমদিকে নতুন চালের দাম কম থাকায় আমাদের আগের চাল কেনা দামে বিক্রি করে দেই। কিন্তু কয়েক দিন ধরে আবার চালের দাম বাড়ছে। বাজারে চালের যে চাহিদা সরবরাহ তার তুলনায় কম, এ কারণে হয়তো দাম বাড়ছে। রামপুরার ব্যবসায়ী মিলন বলেন, অন্য বছরের তুলনায় এবার চালের বাজার বেশি অস্থির। বাজারে চাহিদা বাড়লেই দাম বেড়ে যাচ্ছে। আবার চাহিদা কমলে দাম কমে যাচ্ছে। চালের বাজারে এবারের মতো অস্থিরতা আমি আগে দেখেছি। এখন চালের ভরা মৌসুম। এ সময় চালের দাম কমার কথা, কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে চালের দাম বেড়েছে। দেশের বাজারে চালের এমন দাম বাড়লেও একমাস ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম কমছে। গত এক সপ্তাহে আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম কমেছে ১২ দশমিক ৭৩ শতাংশ। আর মাসের ব্যবধানে কমেছে ১২ দশমিক ৮৪ শতাংশ। আন্তর্জাতিক বাজারের দাম কমার চিত্র তুলে ধরে দেশে ভরা মৌসুমে চালের দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে ঠাকুরগাঁয়ের ন্যাশনাল রাইস মিলের কর্ণধার মোহাম্মদ হাসান রাজু বলেন, ছোট ছোট মিলগুলো এখন চলে না। বাজারজাতের জন্য উৎপাদিত চাল শুধু বড় বড় অটো মিলে মজুত আছে। চালের দাম বাড়ার এটা একটা কারণ। 'এ ছাড়া সরকার একই সঙ্গে ধান ও চাল কিনবে। ধানের বাজারের সঙ্গে চালের বাজারের আবার সংগতি নেই। আলটিমেটলি ধানের বাজার ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে, বেচাকেনা হোক বা না হোক। সব মিলিয়ে এই অবস্থা। তবে বাজার এটা থাকবে না। খুব শিগগিরই দাম পড়ে যাবে' বলেন ঠাকুরগাঁও জেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, 'আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম কমার একটা প্রভাব দেশের বাজারেও পড়বে। কারণ, দেশের ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক বাজার ফলো করেন। দাম যদি পড়তে থাকে তখন মজুত করলে লোকসানের একটা সম্ভাবনা থাকে। তখন হয়তো সেই চাল ছেড়ে দেয়ার চেষ্টা করবে।' তিনি আরও বলেন, 'সরকার কৃষককে সহায়তা দেয়ার জন্য ধান ও চাল দুটোই কিনে। সরকারের এই উদ্দেশ্য ঠিক আছে। কিন্তু সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী ধান প্রস্তুত করার সক্ষমতা কৃষকের নেই। কোনো না কোনো ব্যবসায়ী ওই সুযোগটা নিয়ে নিচ্ছে, পরোক্ষভাবে হোক বা প্রত্যক্ষভাবেই হোক।' বোরোর ভরা মৌসুমে চালের দাম বাড়া কি যৌক্তিক? এমন প্রশ্ন করলে মোহাম্মদ হাসান রাজু বলেন, ধানের বাজার ঊর্ধ্বমুখী হলে সবাই ধান নিয়ে ব্যস্ত হয়। তখন যারা চাল প্রস্তুত করতে চায়, তারা ওই বাজারের সঙ্গে সংগতি রেখে ধান কিনতে পারে না। ফলে চাল উৎপাদন হয় না। এতে চালের সরবরাহ কমে যায়। এদিকে চলতি বোরো মৌসুমে সরকারিভাবে ৮ লাখ টন ধান এবং ১০ লাখ টন সিদ্ধ চাল ও দেড় লাখ টন আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বোরো ধান গত ২৬ এপ্রিল থেকে কেনা শুরু হয়েছে। ৭ মে থেকে শুরু হয়েছে চাল সংগ্রহ। ধান-চাল সংগ্রহ শেষ হবে ৩১ আগস্ট। খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, চলতি বোরো মৌসুমে ২৬ টাকা কেজি দরে ধান, ৩৬ টাকা কেজি দরে সিদ্ধ চাল, ৩৫ টাকা কেজি দরে আতপ চাল কেনা হচ্ছে। বাংলাদেশ অটো মেজর হাসিকিং মিলস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি একমাস ধরে বাজারের কোনো খোঁজ রাখছি না। সুতরাং চালের দাম নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করব না। তবে বাংলাদেশ অটো মেজর হাসকিং মিলস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা এবং নওগাঁর রাজু অটো রাইস মিলের কর্ণধার এরফান আলী বলেন, 'আমাদের কাছে চালের দাম বাড়েনি। খুচরা বাজারে উল্টাপাল্টা করছে। চিকন চালের দাম ঠিকই আছে, মোটা চালের দামও বাড়েনি। চিকন চাল আমরা ৫০ টাকার নিচে বিক্রি করছি। আসলে এবার ধানের দাম একটু বেশি।'
BBS cable ad

ক্রয়-বিক্রয় এর আরও খবর: