South east bank ad

ভার্চুয়াল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্ন নিয়ে চালু হলো কর্মসংস্থানমুখী শিক্ষার মাধ্যম 'ভূমি বাংলাদেশ'

 প্রকাশ: ১৩ মে ২০২২, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   শিক্ষাঙ্গন

ভার্চুয়াল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্ন নিয়ে চালু হলো কর্মসংস্থানমুখী শিক্ষার মাধ্যম 'ভূমি বাংলাদেশ'

তরুণ-তরুণীদের কর্মসংস্থানমুখী দক্ষতা বাড়াতে চালু চলো ভার্চুয়াল শিক্ষার মাধ্যম 'ভূমি বাংলাদেশ লিমিটেড"। এখানে বিভিন্ন কোর্সে অংশ নিয়ে তরুণ-তরুণীরা নিজেদের দক্ষতা বাড়িয়ে খুব সহজেই চাকরির বাজারে প্রবেশ করতে পারবেন।

বৃহস্পতিবার (১২ মে) বিকেলে রাজধানীর একটি পাঁচতারকা হোটেলে 'ভূমি বাংলাদেশ লিমিটেড' এর উদ্বোধন করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম, ভূমি বাংলাদেশ লিমিটেডের চেয়ারম্যান কুতুব উদ্দিন আহমেদ, ভূমির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, ভূমির ভাইস প্রেসিডেন্ট বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান, বিজিএমইএ'র পরিচালক ও ভূমির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসিফ আশরাফ এবং আরও অনেকে।

তরুণ-তরুণীদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে ডিজিটাল বাংলাদেশের গুরুত্ব তুলে ধরেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। মন্ত্রী বলেন, ভূমির মাধ্যমে তরুণ-তরুণীরা কর্মসংস্থানমুখী শিক্ষা পাবেন। এতে চাকরির বাজারে ঢুকতে তাদের সুবিধা হবে। তারা এ থেকে শিক্ষা বা দক্ষতা অর্জন করে সহজেই চাকরি পেতে পারেন।

তিনি বলেন, ভূমি প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে আধুনিক দক্ষ পেশাজীবী গড়ে উঠবে। ফলে আমাদের বিদেশ থেকে পেশাজীবীদের আনতে হবে না। নিজের দেশেই বড় বড় পদে দক্ষ পেশাজীবী গড়ে উঠবে। ভূমি আগামীদিনের দক্ষ মানুষ তৈরির প্ল্যাটফর্ম হবে আশা করি।

ভূমি বাংলাদেশ লিমিটেডের চেয়ারম্যান কুতুব উদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে ৪.৫ কোটি কর্মজীবী-বয়সী লোকের জনসংখ্যাগত লভ্যাংশ রয়েছে। আমাদের জন্য এটি একটি বিশাল সুযোগ। যদি এই বিপুল জনগোষ্ঠীকে প্রাসঙ্গিক জ্ঞান দেওয়াসহ কর্মদক্ষ করে গড়ে তোলা যায়, তাহলে তারা নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে তাদের সম্ভাবনার সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে পারবে।

ভূমির কার্যক্রম সম্পর্কে বলতে গিয়ে অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, ভূমি বাংলাদেশ ভবিষ্যতে একটি ভার্চুয়াল বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে। আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার জন্য আমাদের সেই অনুযায়ী জ্ঞান ও দক্ষ মানব সম্পদ গড়ে তুলতে হবে। আমাদের শিক্ষাখাতের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই, পাসকৃত গ্রায়জুয়েটের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু তা আমাদের চাকরির বাজারে প্রয়োজনীয় দক্ষ মানব সম্পদ সরবরাহ করতে পারছে না। প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা বাস্তবমুখী এবং যুগোপযোগী না হওয়াতে স্নাতকদের চাকরির বাজারে লড়াই করতে হচ্ছে। প্রতি বছর প্রায় ১৮ লাখ মানুষ চাকরির সন্ধানে চাকরির বাজারে নতুনভাবে প্রবেশ করছেন। তাদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ প্রদান করা একটি চ্যালেঞ্জ হতে চলেছে।

ব্যানবেইসের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ১০ লাখ শিক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার বাধা অতিক্রম করে। Statista এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পার হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে অংশগ্রহণকারী ছাত্র-ছাত্রীদের অনুপাত ছিল মাত্র ২২.৮৩%, যেখানে একই বছরের ভারতে ছিলো ২৯.৪৪% এবং চীনে ছিলো ৫৪.৪%। এ থেকে বোঝা যায় যে বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের ভর্তির হার এই অঞ্চলের অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় কম। বাংলাদেশে ড্রপ-আউটের উল্লেখযোগ্য কারণ হলো আর্থিক সংকট এবং সুবিধাজনক স্থানে ভালমানের প্রতিষ্ঠানের সহজপ্রাপ্যতার অভাব।

ভূমির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিশাল একটি অবদান রাখছেন অভিবাসী শ্রমিকরা। তারা দেশের জিডিপিতে প্রায় ৭-৮% অবদান রাখেন রেমিট্যান্সের আকারে। যা আমাদের দেশের অগ্রগতি এবং প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করছে। বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত ৮ম জাতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় $৩০ বিলিয়নের বার্ষিক লক্ষ্যের উপর জোর দিয়ে জুলাই ২০২০ থেকে জুন ২০২৫ পর্যন্ত রেমিট্যান্স প্রবাহকে $১৫০ বিলিয়নে বাড়ানোর লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। যদিও আমাদের অভিবাসী শ্রমিকরা কঠোর পরিশ্রম করার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তাদের বেশিরভাগই যথেষ্ট দক্ষ না হওয়ায় তাদের বিদেশে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ অনেক কম বেতনে করতে হচ্ছে। নেপাল, শ্রীলঙ্কা এবং অন্যান্য দেশের অভিবাসী শ্রমিকরা বাংলাদেশের তুলনায় অনেক বেশি রেমিট্যান্স তাদের দেশে পাঠাতে পারছে। এর কারণ হল তাদের আছে দক্ষতাসম্পন্ন শ্রমিক এবং যার কারণে তারা ভালো চাকরি এবং পর্যাপ্ত বেতনের সুবিধা পায়। আমাদের এইচআর প্রফেশনাল যারা আছেন, তারাও একমত হবেন আমাদের স্কিল গ্যাপের যে বিষগুলো বলা হয়েছে। আমাদের ৪.৫ কোটির বিরাট একটি কর্মজীবী-বয়সী লোকের জনসংখ্যাগত লভ্যাংশ রয়েছে, যা আস্তে আস্তে কমে আসছে। এখনি যদি আমরা সঠিক পদক্ষেপ না নেই তাহলে আমরা পিছিয়ে পরবো।

বিজিএমইএ'র পরিচালক ও ভূমির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসিফ আশরাফ বলেন, ভূমি এমন একটি মাধ্যমে যা চাকরির বাজারের চাহিদা পূরণ করবে এবং অনলাইনে সহজপ্রাপ্য সময়োপযোগী কোর্স নিয়ে আসবে। ভূমি হচ্ছে একটি উচ্চমানের, ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্ম। যারা শিক্ষার মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন করতে চান এবং কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে নিজেদের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করতে চান তাদের জন্য এটি একটি সাশ্রয়ী সমাধান হবে। এমনকি ভূমির মাধ্যমে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে অনলাইনে যৌথভাবে কাজ করা সম্ভব। বাংলাদেশে ৬৩ মিলিয়নেরও বেশি ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে, দেশের প্রতিটি কোণ থেকে শিক্ষার্থীরা ভূমির প্ল্যাটফর্মে যোগ দিতে পারবে।

তিনি বলেন, ভূমির লাইভ সেশনের মাধ্যমে চাকরির বাজারের চাহিদা পূরণে দক্ষতা প্রদান করা হবে। শুধু তাই নয়, যেখানে প্রয়োজন, সেখানে ফেস টু ফেস কিছু সেশন থাকবে। ভূমির মাধ্যমে প্রশিক্ষণার্থীরা একাডেমিয়ার বিখ্যাত প্রশিক্ষক এবং দেশের ব্যবসায়িক জগতের দূরদর্শী নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম হবেন। ভূমি আরও নিশ্চিত করবে যে, শিক্ষার্থীরা ইন্টারেক্টিভ পদ্ধতিতে তে শিখছে। ভূমি র প্রশিক্ষণ এর সমাপ্তি শেষে, শিক্ষার্থীরা চাকরি ও কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে। যারা লার্নিং সেশনে ভালো পারফর্ম করবে, ভূমি তাদের সঠিক নিয়োগকারীদের সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা করবে।

এক নজরে ভূমি বাংলাদেশের কোর্সগুলো:
বর্তমানে ভূমিতে তিনটি প্রধান ধরনের কোর্স রয়েছে; এক্সিকিউটিভ, স্কিল-আপ এবং মাস্টারক্লাস।
১. এক্সিকিউটিভ কোর্স
এই কোর্সের প্রধান লক্ষ্য হলো অল্প সময়ের মধ্যে বিভিন্ন সংস্থায় কর্মরত এক্সিকিউটিভদের প্রয়জনীয় দক্ষতা প্রদান। প্রদত্ত দক্ষতাগুলো হবে সফট এবং প্রযুক্তিভিত্তিক দক্ষতা।
• ১০-১৬ ঘণ্টার কোর্স
• কর্পোরেট এক্সিকিউটিভদের জন্য
যে কোর্সগুলো শিগগিরই চালু করা হচ্ছে:
•  ব্যাবস্থাপনা বিষয়ে কৌশল
•  ডিটিজাল সেলস ও মার্কেটিং দক্ষতার কোর্স বিষয়
•  ক্রিয়েটিভ ভ্যালু থ্রো নেগোসিয়েশণ  
২. স্কিল-আপ কোর্স
এই কোর্সে কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে দক্ষ করে তোলার জন্য সে বিষয়ে গভীরভাবে জ্ঞান দেওয়া হবে। এর মূল ফোকাস হচ্ছে এমন একটি দক্ষতা শেখানো যা শিক্ষার্থীদের চাকুরি জীবন শুরু করতে সহায়তা করে। এই কোর্সগুলি বর্তমান ছাত্র-ছাত্রী এবং নতুন স্নাতকদের জন্য, যা তাদের চাকুরি লাভে সহায়ক বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষতা অর্জনে সাহায্য করবে।
• ৩-৬ মাসের কোর্স
• নতুন স্নাতক এবং চাকরিপ্রার্থীদের জন্য
যে কোর্সগুলো শিগগিরই চালু হচ্ছে:
ইমপ্রেশন ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড অডিস এডিকেট।
৩. মাস্টার ক্লাস
এটি এমন এক ধরনের প্রশিক্ষণ যা শিক্ষার্থীরা একদিন বা একটি লেকচারের মাধ্যমে শেষ করতে পারে। এটি সাম্প্রতিক প্রযুক্তিগত বা ব্যবসায়িক উদ্ভাবনের উপর আলোকপাত করবে।
• ৩-৬ ঘন্টার কোর্স
• সকলের জন্য উন্মুক্ত
যে কোর্সগুলো শিগগিরই চালু হচ্ছে:
•  দ্য আর্ট অব পারসুয়েশন
•  মাস্টারিং সেলস

BBS cable ad

শিক্ষাঙ্গন এর আরও খবর: