শিরোনাম

South east bank ad

মানবপাচারকারী চক্রের অন্যতম হোতা টুটুল ও সহযোগী তৈয়বসহ আটক ৮

 প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   অটোমোবাইল

মুদি দোকানদার থেকে ওভারসীজের মালিক বনে যাওয়া মধ্যপ্রাচ্যে মানবপাচারকারী চক্রের অন্যতম হোতা টুটুল ও সহযোগী তৈয়বসহ ৮ জনকে আটক করেছে র‌্যাব-৪।
এলিট ফোর্স হিসেবে র‌্যাব আত্মপ্রকাশের সূচনালগ্ন থেকেই আইনের শাসন সমুন্নত রেখে দেশের সব নাগরিকের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার লক্ষে অপরাধ চিহ্নিতকরণ, প্রতিরোধ, শান্তি ও জনশৃংখলা রক্ষায় কাজ করে আসছে। সাম্প্রতিককালে প্রতারণামূলক ফাঁদে ফেলে উচ্চ বেতনে লোভনীয় চাকরির প্রলোভনে নারী পাচারে জড়িত রয়েছে কয়েকটি সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট। জঙ্গিবাদ, খুন, ধর্ষণ, নাশকতা এবং অন্যান্য অপরাধের পাশাপাশি এসব ঘৃণিত মানবপাচারকারী চক্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত অপরাধীদের আটক করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য র্যাব সদা সচেষ্ট।

সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকজন নারী ভিকটিমের অবিভাবক মধ্যপ্রাচ্যে মানবপাচার সংক্রান্ত অভিযোগ র‌্যাব-৪-এ জানায়। ফলশ্রুতিতে র‌্যাব ছায়া তদন্ত শুরু করে ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়। এরই ধারাবাহিকতায় গোপন খবরের ভিত্তিতে গতকাল বুধবার ১৩ অক্টোবর ২০২১ইং তারিখ র‌্যাব-৪-এর একটি আভিযানিক দল বাড্ডা থানাধীন লিংক রোডে টুটুল ওভারসীজ, লিমন ওভারসীজ ও লয়াল ওভারসীজে অভিযান চালিয়ে ৪ জন ভিকটিম (২ জন পুরুষ এবং ২ জন নারী), ১০টি পাসপোর্ট, ৭টি ফাইল, ৪ টি সীল, ১৭টি মোবাইল, ৫টি রেজিষ্টার, মোবাইল সীম ৩টি, ৪টি ব্যাংকের চেক বই, ২টি কম্পিউটার, ৩টি লিফলেট এবং নগদ ১০ হাজার ৭০ টাকাসহ মানবপাচারকারী চক্রের অন্যতম হোতা টুটুল ও সহযোগী তৈয়বসহ ৮ জনকে আটক করতে সক্ষম হয়।
মো. সাইফুল ইসলাম টুটুল (৩৮), জেলা-মেহেরপুর, মো. তৈয়ব আলী (৪৫), জেলা- রংপুর, শাহ্ মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন লিমন (৩৮), জেলা- গোপালগঞ্জ, মো. মারুফ হাসান (৩৭), জেলা- পটুয়াখালী, মো. জাহাঙ্গীর আলম (৩৮), জেলা- মেহেরপুর, মো. লালটু ইসলাম (২৮), জেলা- মেহেরপুর, মো. আলামিন হোসাইন (৩০), জেলা- শরয়িতপুর, মো. আব্দল্লাহ আল মামুন (৫৪), জেলা- কুষ্টিয়া।

প্রতারক টুটুল ও তৈয়বের উত্থান :
গোপন অনুসন্ধানে দেখা যায় এইচএসসি পাশ টুটুল মেহেরপুরের গাংনী থানাধীন কামন্দী গ্রামে মুদি দোকানদার হিসেবে কাজ করতো। মাঝে মাঝে ঢাকায় আসত। অতি অল্পসময়ে অধিক টাকার মালিক হওয়ার লোভে ধীরে ধীরে মানবপাচারকারী কোন চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে এবং চক্রের দালাল হিসেবে বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে বিদেশে লোক পাঠানোর কাজ করতে থাকে।
পরবর্তীতে নিজেই রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় প্রতারণামূলকভাবে “টুটুল ওভারসীজ, লিমন ওভারসীজ ও লয়াল ওভারসীজ” নামে ৩টি ওভারসীজ এজেন্সির অফিস খুলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বেকার ও শিক্ষিত বহু নারী ও পুরুষকে বিদেশে পাঠানোর কথা বলে তাদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা প্রতারণামূলকভাবে নেয় টুটুল।

টুটুলের এ প্রতারণার কাজে অন্যতম দালাল বা সহযোগী আবু তৈয়ব। সে কোন লেখাপড়া জানেনা। চায়ের দোকানদারি করতো। টুটুলের প্ররোচনায় মানবপাচারকারী চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে এবং বহু লোককে প্রতারণামূলকভাবে বিদেশে পাঠানো এবং দেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণামূলকভাবে টাকা পয়সা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। তৈয়ব নিজেকে দেশের একটি স্বনামধন্য এয়ারলাইন্সের ম্যানেজার হিসেবে পরিচয় দিয়ে দেশের বিভিন্ন বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশনে চাকরি এবং দেশের নামী-দামী মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি দেওয়ার নাম করে বিপুল পরিমান অর্থ আত্মসাৎ করেছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কয়েকজন ভিকটিমকে চাকরি দেওয়ার ভূয়া নিয়োগপত্র দিয়েছে।

আটক করা মানবপাচার চক্রের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে শাহ্ মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন লিমন (৩৮) ও মো. মারুফ হাসান (৩৭) বেতনভুক্ত কর্মচারি। মো. জাহাঙ্গীর আলম (৩৮), মো. লালটু ইসলাম (২৮), মো. আলামিন হোসাইন (৩০), মো. আব্দল্লাহ আল মামুন (৫৪) এরা মাঠ পর্যায়ে টার্গেট সংগ্রহ, প্রার্থীর পাসপোর্টের ব্যবস্থা, কথিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, টাকা সংগ্রহ, প্রাথমিক মেডিকেল সম্পূর্ণ করাসহ অন্যান্য কাজে সহয়তা করত।

বিদেশে পাচারের উদ্দেশ্যে প্রতারনার কৌশল :
প্রতারক টুটুল ও তৈয়বের নির্দেশে এ চক্রের অন্যান্য সদস্যরা টার্গেট সংগ্রহের কাজে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করত।


টার্গেট সংগ্রহ :
এ পাচারকারী চক্রের কিছু সদস্য দেশের বেকার ও অস্বচ্ছল যুবক-যুবতীদের সৌদি আরব, জর্ডান ও লেবাননসহ বিভিন্ন দেশের বাসাবাড়িতে লোভনীয় বেতনে কাজ দেওয়ার নাম করে রাজি করিয়ে ঢাকায় নিয়ে এ চক্রের মূলহোতা টুটুল ও তৈয়বের কাছে নিয়ে আসে।


টাকা সংগ্রহ :
টুটুল ও তৈয়ব তাদের অফিসে সংগৃহীত ভিকটিমদের বিদেশে বাসাবাড়িতে কাজের নামে পাঠানোর উদ্দেশ্যে ভুয়া মানি রিসিট দিয়ে ভিকটিম প্রতি ২ থেকে ৫ লাখ টাকা করে নিত।

প্রশিক্ষণ প্রদান :
প্রতারণার উদ্দেশ্যে এ পাচারকারী চক্রের কয়েকজন সদস্য নিজেদেরকে উচ্চশিক্ষিত বলে পরিচয় দিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত ভিকটিমদেরকে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের বাসাবাড়িতে কাজের প্রশিক্ষণ দিয়ে ভিকটিমদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা আদায় করতো।

পাসপোর্টসহ অন্যান্য কাগজপত্র সংগ্রহ :
এ পাচারকারী চক্রের কয়েকজন সদস্য অফিস স্টাফ হিসেবে পরিচয় দিয়ে ভিকটিমকে বিদেশে পাঠানোর জন্য পাসপোর্ট করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ভিকটিমদের কাছ থেকে সংগ্রহ করতো। এতে করে ভিকটিমদের মনে আর কোন সন্দেহ থাকত না। এই চক্রের কিছু সদস্য পাসপোর্ট অফিসের দালালদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে ভিকটিমদের পাসপোর্ট তৈরি করে দিত।

মেডিকেল সম্পূর্ন করা :
এ পাচারকারী চক্রের মূলহোতা টুটুল ও তৈয়বের নির্দেশে ভিকটিমদের বিদেশে যাওয়ার জন্য লোক দেখানো মেডিকেল সম্পূর্ন করা হতো।

বিক্রির উদ্দেশ্যে বিদেশে পাচার :
সব প্রক্রিয়া সম্পর্ন করে কয়েকজনকে বিদেশে পাঠিয়ে বাসাবাড়িতে কাজের কথা বলে বিশেষকরে নারী ভিকটিমদেরকে বাসাবাড়িতে বিক্রি এবং পুরুষ ভিকটিমদেরকে অমানবিক কাজে নিয়োজিত করার উদ্দেশ্যে সৌদি আরবের জেদ্দা ও রিয়াদ, জর্ডান ও লেবাননে টাকার বিনিময়ে বিক্রি করতো।
উল্লেখ্য যে বিদেশে পাচার করা ভিকটিমরা বিদেশে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে আর কোন যোগাযোগ করতে পারত না। যাদেরকে বিদেশে পাঠাতে পারত না তারা টাকা ফেরতের আশায় অফিসে যোগাযোগ করলে তাদেরকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের টাকা না দিয়ে আত্মসাৎ করে আসছিল।

চাকরি প্রদানের উদ্দেশ্যে প্রতারণা :
এ চক্রের অন্যতম মূলহোতা আটক করা তৈয়ব নিজেকে একটি স্বনামধন্য এয়ারলাইন্সের ম্যানেজার হিসেবে পরিচয় দিত। এ চক্রের কিছু সদস্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চল হতে শিক্ষিত বেকার তরূণ-তরূণীদের উচ্চ বেতনে লোভনীয় চাকরির কথা বলে সংগ্রহ করে তৈয়বের অফিসে নিয়ে আসতো। প্রতারক তৈয়ব উক্ত ভিকটিমদের দেশের বিভিন্ন বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশনে চাকরিসহ আরও কিছু প্রতিষ্ঠানে ভুয়া চাকরির যোগদানপত্র দিয়ে বিপুল পরিমান অর্থ আত্মসাৎ করে আসছিল।

অভিযোগকারী ব্যক্তির বক্তব্য :

র‌্যাব-৪-এর কাছে জনৈক মো. আশরাফুল ইসলাম, জেলা-গাইবান্ধা অভিযোগ করেন তার ভাতিজি আসমা বেগম (পিতা-মৃত ফরিদ মিয়া) তৈয়ব ও টুটুলের মাধ্যমে প্রতারণার শিকার হয়ে গত ৯ জুন ২০২১ইং জর্ডান যায়। তাকে বাসাবাড়িতে কাজের কথা বলে পাঠানো হলেও সে পাচার হয়েছে বলে তারা আশঙ্কা করেন। যাওয়ার প্রায় ১ সপ্তাহ যোগাযোগ থাকলেও এখন আসমার কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছেনা। এরকম বেশ কয়েকজন নারী ও পুরুষকে প্রতারণামূলকভাবে সৌদি আরবে পাঠিয়ে বিক্রি করেছেন মর্মে তিনি জানতে পারেন বলে র‌্যাব-৪-এর কাছে অভিযোগ করেন।

ভিকটিম মোছা :
মোরশেদা বেগম (৩৪), মোছা: হামিদা আক্তার (৩২), মোরশেদা বিবি (৩২) এবং মালেকা বেগম (৫১) একই উপায়ে তৈয়বের কাছে বিদেশে যাওয়ার জন্য পাসপোর্টসহ অন্যান্য কাগজপত্র জমা দেয়। এর মধ্যে মোরশেদা বেগম (৩৪) ও হামিদা আক্তার (৩২) দুইজনকে অভিযানকালে উক্ত কথিত টুটুলের অফিস থেকে উদ্ধার করা হয়। এবং মোরশেদা বিবি ও মালেকা বেগম প্রতারনার শিকার হয়ে দুই বছরের অধিক সময় তৈয়ব ও টুটুলের কাছে ঘুরছেন। তারা র্যাব-৪-এর কাছে প্রতারণার ও পাচার সংকান্তে তথ্য দেন। এ সংক্রান্তে আরও ২০ বা ২৫ জনের অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। ভিকটিমদের কাছ থেকে প্রতারণামূলকভাবে ১ লাখ থেকে ৩ লাখ কোন কোন ক্ষেত্রে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।

মূল অভিযোগ সমূহ :

  • উক্ত প্রতিষ্ঠানের সব কার্যক্রম অবৈধ ও প্রতারণামূলক।
  • টুটুল ওভারসীজ, লিমন ওভারসীজ, ও লয়াল ওভারসীজনামক উক্ত প্রতিষ্ঠানের মন্ত্রনালয় কর্তৃক অনুমোদিত নয়।
  • প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট কোন অফিসিয়াল সাইনবোর্ড নেই।
  • কোম্পানির সরকারি কোন ভ্যাট বা ট্যাক্স দেওয়া হয় না।

আটক করা আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

BBS cable ad

অটোমোবাইল এর আরও খবর: