শিরোনাম

South east bank ad

মোস্তাফা জব্বার: কম্পিউটারে বাংলা ব্যবহার ও আধুনিকীকরণে যার অবদান সবচেয়ে বেশি

 প্রকাশ: ২৬ অগাস্ট ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   অটোমোবাইল

জনপ্রিয় একটি নাম মোস্তাফা জব্বার। যিনি নামেই ব্রান্ড। যার নামের আগে পরে কোন পরিচয় লেখার প্রয়োজন হয় না। বাংলায় কম্পিউটার ব্যবহার জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে তার ভূমিকা ঐতিহাসিক। কম্পিউটারে বাংলা ব্যবহার, হরফের উৎকর্ষশৈলী, প্রকাশনা শিল্পের যুগোপযোগী আধুনিকীকরণে তার অবদান সবচেয়ে বেশি। বর্তমানে তিনি ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) ও বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির (বিসিএস) এর সাবেক সভাপতি মোস্তাফা জব্বার ১৯৪৯ সালের ১২ আগস্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। মোস্তাফা জব্বারের বাবা আব্দুল জব্বার তালুকদার পাটের ব্যবসায়ী ও সম্পন্ন কৃষক ছিলেন। তার দাদা আলিমুদ্দিন মুন্সি ছিলেন বিশাল ভূ সম্পত্তির মালিক যার উপাধি ছিলো তালুকদার। তার মা রাবেয়া খাতুন সমগ্র জীবন গৃহিনী হিসেবেই জীবন যাপন করেছেন।

মোস্তাফা জব্বারের প্রতিষ্ঠানের বিজয় বাংলা কিবোর্ড ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত হয় যা ইউনিকোড ভিত্তিক অভ্র কী-বোর্ড আসার পূর্বপর্যন্ত বহুল ব্যবহৃত হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি ও সাধারণ বিষয়ের ওপর অনেকগুলো বইয়ের লেখক তিনি। তথ্যপ্রযুক্তি জগতে বাংলা ভাষা জনপ্রিয়করণে জব্বার একজন পথিকৃৎ হিসেবে বিবেচিত হন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালে মোস্তাফা জব্বার একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি মুজিব বাহিনীর খালিয়াজুরি থানার সহ অধিনায়ক ছিলেন। তার বাড়ীর পাশের সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার ১৬১ জন রাজাকার যুদ্ধোত্তরকালে তার কাছে আত্মসমর্পণ করে। ছাত্র থাকাকালেই মোস্তাফা জব্বারের কর্মজীবন শুরু হয় ১৯৭২ সালের ১৬ জানুয়ারি সাংবাদিকতার মধ্য দিয়ে। সেই সময়ে তিনি সাপ্তাহিক গণকণ্ঠ পত্রিকায় রিপোর্টার হিসেবে কাজে যোগ দেন। ২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ পত্রিকাটি দৈনিকে পরিণত হয়। ১৯৭৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত গণকণ্ঠ পত্রিকাটি নিয়মিত প্রকাশিত হতো এবং সেই সময়ে প্রকাশিত পত্রিকাটির শেষ সংখ্যা পর্যন্ত তিনি তাতে কর্মরত ছিলেন। ১৯৭৩ সালে তিনি ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নির্বাচিত হন। গণকণ্ঠ বন্ধ হয়ে যাবার পর তিনি ট্রাভেল এজেন্সি, মুদ্রণালয়, সংবাদপত্র ইত্যাদি ব্যবসায় যুক্ত হন। তিনি ট্রাভেল এজেন্টদের সংগঠন আটাব (এসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ)- এর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি ১৯৮৭ সালের ২৮শে এপ্রিল ব্যবসায় প্রবেশ করেন। সেই বছরের ১৬ মে তিনি কম্পিউটারে কম্পোজ করা বাংলা সাপ্তাহিক পত্রিকা আনন্দপত্র প্রকাশ করেন। ১৯৮৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর তিনি প্রকাশ করেন বিজয় বাংলা কীবোর্ড ও সফটওয়্যার। সেটি প্রথমে মেকিন্টোস কম্পিউটারের জন্য প্রণয়ন করেন। পরে ১৯৯৩ সালের ২৬ মার্চ তিনি উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের জন্যও বিজয় বাংলা কীবোর্ড ও সফটওয়্যার প্রকাশ করেন। তিনি আনন্দ প্রিন্টার্স এবং আনন্দ মুদ্রায়ণের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ইতিপূর্বে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির নির্বাহী পরিষদের সদস্য, কোষাধ্যক্ষ ও সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার এন্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস বেসিস) এর প্রতিষ্ঠাতা সহ-সভাপতি ও পরিচালক এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার ক্লাবের সভাপতি ছিলেন। ২০০৮-০৯ সময়কালে তিনি দ্বিতীয় বারের মতো বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ২০১০-১১ সালে তিনি তৃতীয় বারের মতো বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১২-মে-১৩ সময়কালে তিনি এই সমিতির পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১ জুন ২০১৩ থেকে ৩১ মার্চ ২০১৪ পর্যন্ত তিনি আবার চতুর্থবারের মতো বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে (২০১৪-১৫-১৬) তিনি বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির উপদেষ্টা। তিনি প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্সসহ বিভিন্ন সংস্থায় যুক্ত আছেন।

২০০৭ সালের ২৬ মার্চ তিনি ডিজিটাল বাংলাদেশ ধারণা সম্পর্কে প্রথম নিবন্ধ লেখেন এবং তার দ্বারাই ২০০৮ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার লিপিবদ্ধ হয়। বাংলা ভাষায় তিনি কম্পিউটার বিষয়ে অনেকগুলো বই লিখেছেন এবং তিনি নবম ও দশম শ্রেণীর কম্পিউটার বিষয়ক পাঠ্যপুস্তক মাধ্যমিক কম্পিউটার শিক্ষা বইটির লেখক। উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের “তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি” বই-এর লেখক তিনি। এছাড়াও উচ্চ মাধ্যমিক কম্পিউটার শিক্ষা, প্রাথমিক কম্পিউটার শিক্ষা, মাল্টিমিডিয়া ও অন্যান্য প্রসঙ্গ ছাড়াও তার লেখা কম্পিউটারে প্রকাশনা, মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, মাইক্রোসফট এক্সেল ও তার সম্পাদিত কম্পিউটার অভিধান বিষয়ক বই ও রয়েছে। তার প্রথম উপন্যাস নক্ষত্রের অঙ্গার ২০০৫ সালে প্রকাশিত হয়েছে। সুবর্ণে শেকড় নামে আরেকটি উপন্যাস তিনি লিখছেন। এছাড়াও কম্পিউটার কথকতা, ডিজিটাল বাংলা, একুশ শতকের বাংলা, বাঙ্গালী ও বাংলাদেশ, ডিজিটাল বাংলাদেশ এবং একাত্তর ও আমার যুদ্ধ তার লেখা বইগুলোর অন্যতম। বাংলাদেশ টেলিভিশনের ‘ব্যবসায় তথ্যপ্রযুক্তি’, ‘কম্পিউটার’ ও ডিজিটাল বাংলাদেশ টক শো-এর মাধ্যমে এবং এটিএন বাংলার ‘কম্পিউটার প্রযুক্তি’ এবং চ্যানেল আই এর ‘একুশ শতক’ অনুষ্ঠানের সহায়তায় ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমেও তিনি কম্পিউটারকে সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয় করে তুলেন।

তথ্যপ্রযুক্তিতে বিশেষ অবদান রাখা এবং বিজয় বাংলা কীবোর্ড তৈরীর জন্য দৈনিক উত্তরবাংলা পুরস্কার, পিআইবির সোহেল সামাদ পুরস্কার, সিটিআইটি আজীবন সম্মাননা ও আইটি এ্যাওয়ার্ড, বেসিস আজীবন সম্মাননা পুরস্কার, বেস্টওয়ে ভাষা-সংস্কৃতি পুরস্কার, বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমন্বয় পরিষদ সম্মাননা, বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটি ও সিলেট শাখার সম্মাননা বিশ্বমেধাসম্পদ সংস্থার আবিষ্কারক-উদ্যোক্তার স্বীকৃতি এবং অর্থনৈতিক ও মানবিক উন্নয়ন সংস্থার নেত্রকোণার গুনীজন সম্মাননা (প্রযুক্তিবিদ হিসেবে) এবং এসোসিও ৩০ বছর পূর্তি সম্মাননাসহ ২০টি পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। এছাড়াও তার রয়েছে অসংখ্য শুভেচ্ছা সম্মাননা।

BBS cable ad

অটোমোবাইল এর আরও খবর: