South east bank ad

৬ দফা বাঙালির মুক্তির সনদ যার পথ ধরেই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আসে স্বাধীনতা

 প্রকাশ: ০৭ জুন ২০২০, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   সাক্ষাতকার

তমাল পারভেজ: ১৯৬৬ সালের ৭ই জুনের ঐতিহাসিক ঘটনায় উন্মেষ ঘটে একটি নতুন জাতিরাষ্ট্রের অভ্যুদয়ের সূচনালগ্নের আভার! ১৯৬৬ সালের এই দিনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত ঐতিহাসিক ছয় দফা আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সূচনা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শোষণ ও বৈষম্য নীতির বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক ছয় দফা প্রস্তাব পেশ করেন। আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দফা উত্থাপন করা হয় লাহোর প্রস্তাবের সাথে মিল রেখে ২৩ মার্চ। ছয় দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ১৯৬৬ সালের ৭ জুন আওয়ামী লীগের ডাকে পূর্ববাংলায় হরতাল চলাকালে পুলিশ ও ইপিআর নিরস্ত্র মানুষের ওপর গুলি চালায়। এতে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে মনু মিয়া, মুজিবুল হকসহ অনেকে শহীদ হন। গ্রেপ্তার হন হাজার হাজার মানুষ। সন্ধ্যায় কারফিউ জারি করা হয়। ছয় দফা বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ হিসেবে পরিচিত। ঐতিহাসিক ছয় দফার মধ্য দিয়েই বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন স্বাধীনতা সংগ্রামে রূপ নেয়। ছয় দফার দাবিসমূহ: ১) প্রথম দফা হলো— দেশের শাসনতান্ত্রিক কাঠামো এমনি হতে হবে যেখানে পাকিস্তান হবে একটি ফেডারেশনভিত্তিক রাষ্ট্রসংঘ এবং তার ভিত্তি হবে লাহোর প্রস্তাব। সরকার হবে পার্লামেন্টারী ধরনের। আইন পরিষদের (Legislatures) ক্ষমতা হবে সার্বভৌম। এবং এই পরিষদও নির্বাচিত হবে সার্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে জনসাধারনের সরাসরি ভোটে। ২) কেন্দ্রীয় (ফেডারেল) সরকারের ক্ষমতা কেবল মাত্র দু’টি ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকবে- যথা, দেশরক্ষা ও বৈদেশিক নীতি। অবশিষ্ট সকল বিষয়ে অঙ্গ-রাষ্ট্রগুলির ক্ষমতা থাকবে নিরঙ্কুশ। ৩) তৃতীয় দফা, পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য দুটি পৃথক মুদ্রা-ব্যবস্থা চালু করতে হবে, যা পারস্পরিকভাবে কিংবা অবাধে উভয় অঞ্চলে বিনিময়যোগ্য। এ ক্ষেত্রে দুঅঞ্চলে স্বতন্ত্র বা পৃথক পৃথক স্টেট ব্যাংক থাকবে এবং মুদ্রার পরিচালনা ক্ষমতা থাকবে আঞ্চলিক সরকারের হাতে। অথবা এর বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে একটি মুদ্রা-ব্যবস্থা চালু থাকতে পারে এই শর্তে যে, একটি কেন্দ্রীয় সংরক্ষণ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে, যার অধীনে দুই অঞ্চলে দুটি রিজার্ভ ব্যাংক থাকবে। তাতে এমন বিধান থাকতে হবে যেন এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে সম্পদ হস্তান্তর কিংবা মূলধন পাচার হতে না পারে। বিশেষ করে পূর্ব পাকিস্তান থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে মূলধন পাচার বন্ধ করার জন্য সংবিধানে কার্যকর ব্যবস্থা থাকতে হবে। ৪) চতুর্থ দফা, সকল প্রকার রাজস্ব ধার্য ও আদায়ের ক্ষমতা থাকবে অঙ্গরাজ্যগুলোর হাতে। কেন্দ্রীয় তথা প্রতিরক্ষা ও বৈদেশিক বিষয়ের ব্যয় নির্বাহের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে প্রয়োজনীয় রাজস্বের যোগান আঞ্চলিক তহবিল থেকে সরবরাহ করা হবে। সংবিধানে নির্দেশিত বিধানের বলে রাজস্বের এই নির্ধারিত অংশ স্বাভাবিকভাবেই ফেডারেল তহবিলে জমা হয়ে যাবে। এতে সাংবিধানিক বিধানে এমন নিশ্চয়তা থাকবে যে, কেন্দ্রীয় সরকারের রাজস্বের প্রয়োজন মেটানোর ব্যাপারটি এমন একটি লক্ষ্যের সাথে সংগতিপূর্ণ হতে হবে যেন রাজস্বনীতির উপর নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা নিশ্চিতভাবে প্রাদেশিক সরকারের হাতে থাকে। ৫) পঞ্চম দফায় বৈদেশিক বাণিজ্য বিষয়ে নিম্নরূপ সাংবিধানিক বিধানের সুপারিশ করা হয়, (ক) ফেডারেশনভুক্ত প্রত্যেকটি অঙ্গরাজ্যের বহির্বাণিজ্যের পৃথক পৃথক হিসাব রক্ষা করতে হবে। (খ) বহির্বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা অঙ্গরাজ্যগুলোর এখতিয়ারে থাকবে এবং অঙ্গরাজ্যের প্রয়োজন অঙ্গরাজ্য কর্তৃক ব্যবহূত হবে। (গ) কেন্দ্রের জন্য প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা সমান হারে অথবা সর্বসম্মত নির্দিষ্ট হারে অঙ্গরাজ্যগুলো মিটাবে। (ঘ) অঙ্গরাজ্যের মধ্যে দেশজ দ্রব্য চলাচলের ক্ষেত্রে শুল্ক বা করজাতীয় কোনো বাধা থাকবে না। (ঙ) সংবিধানে অঙ্গরাজ্যগুলোকে বিদেশে নিজ নিজ বাণিজ্য প্রতিনিধি দল প্রেরণের এবং স্ব স্ব স্বার্থে বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদনের ক্ষমতা দিতে হবে। ৬) আঞ্চলিক সংহতি ও শাসনতন্ত্র রক্ষার জন্য শাসনতন্ত্রে অঙ্গ-রাষ্ট্রগুলিকে স্বীয় কর্তৃত্বাধীনে আধা সামরিক বা আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠন ও রাখার ক্ষমতা দিতে হবে। ছয় দফার আড়ালে ‘স্বাধীনতা’র একদফা দাবীর আন্দোলনকে কেন্দ্র করে পশ্চিমের পাঞ্জাবী নেতারা যতই দমন-পিড়ন করতে থাকে, যতই বাঙালিকে শাসন ও শোষণের জালে বন্দী করতে তৎপর হয়ে ওঠে বাঙালি ততই চুড়ান্ত লড়াইয়ের দিকে এগিয়ে যায় । ছয় দফা আন্দোলনের ধারাক্রমেই রচিত হয় আইয়ুবের বিদায়ের গনঅভ্যুত্থান। আইয়ুবের পতনের মাধ্যমেই বাংলার মানুষের লালিত আশা আকাংখা পুরণেরই যেন বাস্তব ভিতও তৈরী হয় । সারা দেশব্যাপী তীব্র ছাত্র গণ-আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার এবং এরই মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হয়ে ক্রমেই হয়ে ওঠেন বাঙালি জাতির মহান ত্রাতা ও জনগণের বন্ধু তথা বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সত্তরের নির্বাচনের বিজয়ের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির স্বায়ত্তশাসনের আকাঙ্খাকে চুড়ান্ত স্বাধীনতার পথে নিয়ে যান । ১৯৬৬ তে শুরু হওয়া স্বায়ত্বশাসনের দাবী ক্রমেই বাঙালির এক দফা দাবী স্বাধীনতায় রূপান্তিরিত হয়। যার ফলশ্রুতিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর নেতৃত্বে ১৯৭১-এর মহান মক্তিযুদ্ধে লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত হয় বহু কাঙ্খিত স্বাধীনতা । ৬দফা হলো বাঙালি জাতি মুক্তির চেতনার বীজ! ৬দফা থেকে একদফায় উত্তরণ ! স্বায়ত্তশাসনের দাবী থেকে স্বাধীনতায় রূপান্তর এক ধারাবাহিক সংগ্রামের ফসল! বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শী নেতৃত্বের ফলেই তা ফলবান হতে পেরেছে। আর এসবই সম্ভব হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শী ও প্রজ্ঞাময় সফল নেতৃত্বের ফলে! তিনি ধাপে ধাপে বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের অন্দোলনকে স্বায়ত্তশাসন আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা আন্দোলনে রূপান্তরিত করে বাঙালি জাতির সব চেয়ে আরাধ্য স্বাধীনতাকে উপহার দেন ! এখানেই তিনি অনন্য ও অপ্রতিদ্বন্দী ! তাই তিনি বাঙালি জাতির মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ! ৭ জুনের পথ ধরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। আজ আমাদের মুক্তির সংগ্রামের কান্ডারী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছি। তমাল পারভেজ সাধারন সম্পাদক,বঙ্গবন্ধু পরিষদ,রাশিয়া। চেয়ারম্যান,এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক
BBS cable ad

সাক্ষাতকার এর আরও খবর: