আবারো রেকর্ড ভাঙল স্বর্ণের দাম

যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানদের বাজেট বরাদ্দ নিয়ে মতপার্থক্যের জেরে গতকাল থেকে মার্কিন সরকারের অনেক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। এর মধ্য দিয়ে দেশটিতে শুরু হয়েছে দীর্ঘ ও জটিল অচলাবস্থা। যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি এ ‘শাটডাউনে’ হাজারো ফেডারেল কর্মীর চাকরি এখন ঝুঁকির মুখে পড়েছে। অন্যদিকে মার্কিন শ্রমবাজারের দুর্বল পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ (ফেড) শিগগিরই সুদহার কমাবে—এমন প্রত্যাশা আরো জোরালো হয়েছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। ফলে আপৎকালীন বিনিয়োগ হিসেবে আবারো বেড়েছে স্বর্ণের চাহিদা। এর প্রভাবে গতকাল আবারো রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চে পৌঁছেছে মূল্যবান ধাতুটির দাম। খবর রয়টার্স।
স্পট মার্কেটে গতকাল লেনদেনের একপর্যায়ে স্বর্ণের দাম আউন্সপ্রতি পৌঁছায় ৩ হাজার ৮৭৫ ডলার ৩২ সেন্টে, যা এখন পর্যন্ত রেকর্ড সর্বোচ্চ। গতকাল একই সময়ে ডিসেম্বরে সরবরাহের চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের ফিউচার মার্কেটে স্বর্ণের দাম দশমিক ৪ শতাংশ বেড়ে আউন্সপ্রতি দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৮৮৭ ডলার ৪০ সেন্টে।
এছাড়া গতকাল ডলারের বিনিময় হার সূচক এক সপ্তাহের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমে যায়। এতে অন্যান্য মুদ্রা ব্যবহারকারীদের জন্য স্বর্ণ আমদানি তুলনামূলক সস্তা হয়ে ওঠে। ওয়াল স্ট্রিটে মার্কিন পুঁজিবাজারের ফিউচার্স সূচকগুলোও এদিন ছিল নিম্নমুখী।
অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক এবিসি রিফাইনারির বৈশ্বিক বাজার বিভাগের প্রধান নিকোলাস ফ্রাপেল বলেন, ‘ডলারের দুর্বল বিনিময় হার, যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি অচলাবস্থা ও ভূরাজনৈতিক অনিশ্চয়তা—সব মিলিয়েই স্বর্ণের দাম বাড়ছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘মূল্যবান ধাতুটির দাম আউন্সপ্রতি ৩ হাজার ৯০০ ডলারের ওপরে যেতে পারে। এমনকি তা ৪ হাজার ডলারও ছুঁতে পারে।’
কংগ্রেস ও হোয়াইট হাউজ বাজেট নিয়ে একমত হতে না পারায় যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি অনেক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। এতে হাজারো ফেডারেল কর্মীর চাকরি ঝুঁকির মুখে পড়েছে। পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক তথ্য প্রকাশও দেরি হতে পারে। শুক্রবার প্রকাশ হওয়ার কথা ছিল বহুল আলোচিত ‘নন-ফার্ম পেরোলস রিপোর্ট’।
এর আগে মঙ্গলবার প্রকাশিত জব ওপেনিং অ্যান্ড লেবার টার্নওভার সার্ভে প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রে কর্মসংস্থানের সুযোগ সামান্য বাড়লেও নিয়োগ কমেছে। এতে শ্রমবাজারসংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন, ফেড অক্টোবরেই সুদহার ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমাতে পারে। ডিসেম্বরে আরো এক দফা সুদহার কমার সম্ভাবনাও রয়েছে। এছাড়া এডিপি ন্যাশনাল এমপ্লয়মেন্ট রিপোর্ট প্রকাশ হলে শ্রমবাজার সম্পর্কে অতিরিক্ত তথ্যও পাওয়া যাবে।
ডয়চে ব্যাংকের মূল্যবান ধাতুবিষয়ক বিশ্লেষক মাইকেল সুয়ে বলেন, ‘ডলারের ঊর্ধ্বগতি, ফেডের অপ্রত্যাশিত কড়াকড়ি নীতি কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক সংস্কার স্বর্ণের দামের ঊর্ধ্বমুখী ধারা বাধাগ্রস্ত করতে পারে।’
ভূরাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে স্বর্ণকে নিরাপদ বিনিয়োগ মাধ্যম হিসেবে বেছে নিচ্ছেন অনেকে। এ কারণে চলতি বছর এখন পর্যন্ত স্বর্ণের দাম বেড়েছে ৪৭ শতাংশের বেশি। সুদবিহীন সম্পদ হওয়ায় নিম্ন সুদহার পরিস্থিতিতে এর চাহিদা আরো শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
অন্য ধাতুর মধ্যে গতকাল স্পট মার্কেটে রুপার দাম দশমিক ৫ শতাংশ বেড়ে আউন্সপ্রতি পৌঁছেছে ৪৬ ডলার ৯০ সেন্টে, যা ১৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। তবে প্লাটিনামের দাম দশমিক ৭ শতাংশ কমে আউন্সপ্রতি দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫৬৩ ডলার ৫০ সেন্টে। একই সময়ে প্যালাডিয়ামের দাম দশমিক ৯ শতাংশ কমে আউন্সপ্রতি পৌঁছেছে ১ হাজার ২৪৫ ডলার ৪৩ সেন্টে।