চায়ের উৎপাদনে ধস প্রতিদিন ক্ষতি হচ্ছে প্রায় ১০ লাখ টাকা
সিলেটের লাক্কাতুরা চা বাগানের শ্রমিক লাভলি দাস। দুই কন্যা সন্তান ও স্বামীসহ চার পরিবারের সদস্য তার। স্বামী ও স্ত্রী দুজনই কাজ করেন রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ন্যাশনাল টি কোম্পানির লাক্কাতুরা চা বাগানে। গত ১০ সপ্তাহ ধরে বেতন না পাওয়ায় অনেকটাই মানবেতর জীবন পার করছেন তিনি। বর্তমানে মানুষের বাড়িতে কাজ করে কোনোরকমে দিন পার করছেন তারা। দুই কন্যা সন্তানের পড়াশুনার খরচ, পরিবারের খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে।
এমনই অবস্থা সিলেটের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ন্যাশনাল টি কোম্পানির ১২টি চা বাগানের বেশিরভাগ শ্রমিকদের। গত ১০ সপ্তাহ ধরে বেতন না পাওয়ায় আন্দোলন করছেন শ্রমিকরা। শ্রমিকরা কর্মবিরতিতে থাকায় বন্ধ হয়ে গেছে এসব বাগানের উৎপাদন। এতে সরকার যেমন রাজস্ব হারাচ্ছে তেমন হুমকির মুখে পড়েছে এই চা শিল্প। তাই দ্রুত বেতন পরিশোধ করে সম্ভাবনাময়ী এই শিল্পকে ক্ষতি থেকে রক্ষার দাবি জানিয়েছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।
শ্রমিকরা বলছেন, বেতন না পাওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে চলা দায় হয়ে পড়েছে। আর বাগান কর্তৃপক্ষ বলছে, শ্রমিকদের বেতন দ্রুত পরিশোধে কাজ করছেন তারা।
জানা গেছে, সারাদেশে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ন্যাশনাল টি কোম্পানির ফাঁড়ি বাগানসহ ১৬টি চা-বাগান রয়েছে। এরমধ্যে সিলেট বিভাগে এনটিসির বাগান রয়েছে ১২টি। এসব বাগানে প্রায় ১৫ হাজার শ্রমিক কাজ করলেও গত দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে তারা কোনো মজুরি পাচ্ছে না। এতে মানবেতর জীবনযাপন করছেন শ্রমিক ও পরিবারের সদস্যরা। বেতন-ভাতা না পেয়ে গত ১১ অক্টোবর থেকে কর্মবিরতি পালন করছে শ্রমিকরা। শুধুমাত্র সিলেট জেলাতেই রয়েছে তিনটি চা বাগান। এরমধ্যে লাক্কাতুরা চা বাগাদ, দলদলি চা বাগান ও কেওয়াপাড়া চা বাগান। এই তিনটি বাগানইন ন্যাশনাল টি কোম্পানির আওতাধীন।
সিলেটের লাক্কাতুরা চা বাগানের শ্রমিক লাভলি দাস বলেন, আমরা আমাদের বেতন দেওয়ার দাবি নিয়ে অনেক আন্দোলন করেও আমরা আমাদের মজুরি পাচ্ছি না। এটা নিয়ে আমরা খুব বেশি সমস্যায় দিন পার করছি। এমনকি কাউকেই আমরা পাশে পাচ্ছি না। কোনো মহলই আমাদের বেতন কবে পাবো এই বিষয়েও কোনো নিশ্চয়তা পাচ্ছি না। আমরা কাজ করছি কিন্তু আমরা বেতন পাচ্ছি না। এমনটা কোনো জায়গাতেই নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেটের বাগানগুলোতে থেকে প্রতিদিন প্রায় ২০ হাজার কেজি তাজা পাতা উত্তোলন হয়। এসব চা পাতা থেকে দৈনিক ৫ হাজার কেজি চা উৎপাদন হয়। এই হিসেবে প্রতিদিন প্রায় ১০ লাখ টাকা ক্ষতি হচ্ছে বাগানগুলোর। এতে সরকার হারাচ্ছে বিশাল অংকের রাজস্ব। পাশাপাশি হুমকিতে পড়েছে চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রাও।
লাক্কাতুরা চা বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সদস্য নিরেন গোয়ালা জানান, ১০ সপ্তাহের বকেয়া বেতন, প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা ১৩ মাস ধরে ভবিষ্যৎ ফান্ডে জমা না হওয়া, প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা না পাওয়া ও ভাঙাচোরা ঘরবাড়ি সংস্কার করে না দেওয়ায় কর্মবিরতি পালন করছে শ্রমিকরা।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন সিলেটের সভাপতি রাজু গোয়ালা বলেন, শ্রমিকরা বেতন ভাতা না পাওয়ার কারণে আন্দোলন করছেন। বর্তমানে চা উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। ছয় সপ্তাহ কাজ করার সময় মজুরি আজ-কাল দিবেন বলে কালক্ষেপণ করেন। বেতন না থাকার কারণে একযোগে সিলেটের ১২টি চা বাগানে আন্দোলনের নামেন শ্রমিকরা। আমরা চাই না এই শিল্পটা অচল হোক। আমরা চাই শিল্পটা চালু থাকুক। শিল্পটা চালু থাকলে সরকারও রাজস্ব পাবে পাশাপাশি শ্রমিকরা বাঁচবে। বর্তমানে বাজারে যে উর্ধ্বগতি এমনিতি ১৭০ টাকা মজুরি দিয়ে চলা মুশকিল তার উপরে যদি মজুরি বন্ধ থাকে তাহলে এটা খুবই কষ্টদায়ক।
সিলেটের লাক্কাতুরা চা বাগানের ব্যবস্থাপক মো. আক্তার শাহেদ বলেন, কৃষি ব্যাংকের ঋণ জটিলতায় শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধে সমস্যা হচ্ছে। তবে দ্রুত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।