South east bank ad

রাজনীতি এখন বিনিয়োগে সরাসরি প্রভাব ফেলছে

 প্রকাশ: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   কর্পোরেট

রাজনীতি এখন বিনিয়োগে সরাসরি প্রভাব ফেলছে

রাজনীতি এখন বিনিয়োগে সরাসরি প্রভাব ফেলছে। এ পরিস্থিতিতে বৈশ্বিক অর্থনীতি, পৃথক অর্থনীতি, আঞ্চলিক অর্থনীতি ও আঞ্চলিক বাণিজ্য ব্লকগুলোর উচিত তাদের পথ নির্ধারণ করা—কীভাবে তারা এ পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক রাজনীতির প্রেক্ষাপটে চলবে, কীভাবে এ পরিবর্তিত পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে নিজেদের পরিচালিত করবে।

রাজধানীর একটি হোটেলে গতকাল ‘বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের অগ্রগতি’ শীর্ষক এক সম্মেলনে এ কথা বলেন বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ। যৌথভাবে এ সম্মেলনের আয়োজন করে সার্ক চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এসসিসিআই) ও ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)। এ সময় ‘ইমার্জিং ট্রেডস ইন গ্লোবাল পলিটিকস অ্যান্ড ইমপ্লিকেশনস ইন দ্য গ্লোবাল ইকোনমিক অর্ডার’ ও ‘ইনক্রিজিং সাউথ এশিয়া ইকোনমিক কো-অপারেশন: অপশনস ফর ইনহ্যান্সিং কনেক্টিভিটি, ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট’ শীর্ষক দুটি পৃথক সেশন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।

সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘সার্ক যে উচ্চাশা নিয়ে তৈরি হয়েছিল, তা রাজনীতির কারণে কাজে লাগাতে পারিনি। অথচ ইউরোপীয় ইউনিয়নের দিকে তাকান, সেখানে পণ্য ও সেবার মুক্ত চলাচল রয়েছে, যা সত্যিই একটি আঞ্চলিক সংযোগ হিসেবে কাজ করছে। কিন্তু আমরা এ কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছি। এটি মূলত সার্কভুক্ত দেশের সরকারগুলোর রাজনৈতিক ইচ্ছার কারণে, ব্যবসায়ীদের জন্য নয়।’

তিনি বলেন, ‘পুনরায় সার্কের কার্যক্রম চালু করা দরকার, সেটি নিজেদের প্রয়োজনেই। সার্ককে সফল করতে হলে শক্তিশালী রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকতে হবে। পাশাপাশি শক্তিশালী বোঝাপড়া ও এই অঞ্চলের উন্নতির জন্য কাজ করার প্রেরণা থাকতে হবে। না হলে এটি অবমূল্যায়িতই থেকে যাবে।’

এসসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘বৈশ্বিক রাজনীতি ও অর্থনৈতিক পরিবর্তন এখন বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। ইউক্রেন ও মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি বিশ্বব্যাপী জ্বালানি এবং খাদ্য সরবরাহে সমস্যা সৃষ্টি করেছে। এছাড়া অনেক দেশ এখন সুরক্ষাবাদের পথে হাঁটছে। এর প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতি সব হিসাব-নিকাশ পাল্টে দিয়েছে।’

আঞ্চলিক বাণিজ্যকে সহজ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ব্যবসা-বাণিজ্যে অটোমেশন আনতে হবে ও ডিজিটাল বাণিজ্য কাঠামো গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি আমাদের আঞ্চলিকভাবে চিন্তা করতে হবে। পারস্পরিক সংযোগ তৈরি হলে জ্বালানি, পরিবহনসহ সব ধরনের ব্যয় কমে আসবে। আঞ্চলিক বাজার গড়ে উঠবে। ফলে পুরো অঞ্চলই অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হবে।’

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আন্তঃবাণিজ্যের অনুপাত প্রায় ৫ শতাংশ। বাকি ৯৫ শতাংশ হয় এ অঞ্চলের বাইরে। অথচ এটি এমন অঞ্চল যেখানে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ২৫ শতাংশের বেশি বসবাস করছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘সার্ক এগোয়নি, কিন্তু এর সদস্যরা বিমসটেকেও আছে। সেটিও তেমন কাজ করছে না। এ আঞ্চলিক জোটগুলোকে কাজে লাগানো যায়। বিনিয়োগের কথা বললে, সার্কভুক্ত দেশগুলোর বৈদেশিক বিনিয়োগ পরিস্থিতি ও অন্য সংস্থাগুলোর মধ্যে বিশাল পার্থক্য রয়েছে। আন্তঃআঞ্চলিক বিনিয়োগ বিভিন্ন কারণে সীমাবদ্ধ। এ ক্ষেত্রে কাঠামোগত প্রতিবন্ধকতা, প্রাতিষ্ঠানিক জটিলতা, রাজনৈতিক উত্তেজনা ও পারস্পরিক অবিশ্বাস রয়েছে। প্রশাসনিক ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার জটিলতাও বিনিয়োগ প্রক্রিয়াকে জটিল করে তুলেছে। অথচ উন্মুক্ত বাণিজ্যের যুগে আন্তঃদেশীয় সম্পর্কের বিকল্প নেই।’

বৈশ্বিক রাজনৈতিক শক্তিতে পরিবর্তন আসছে উল্লেখ করে পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ বলেন, ‘এর ফলে আঞ্চলিকতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি অর্থনীতি, অবকাঠামো, সংযোগ ও রাজনীতি সব ক্ষেত্রেই দৃশ্যমান। পাশাপাশি সুরক্ষাবাদও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি শুধু বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নয়, বরং অর্থনৈতিক সম্পর্ক, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, ডিজিটাল দুনিয়া ও অর্থায়নে প্রবেশাধিকার—সব ক্ষেত্রেই সুরক্ষাবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর পেছনে কাজ করছে অভ্যন্তরীণ রাজনীতি। এছাড়া রয়েছে জলবায়ুবিষয়ক রূপান্তর, যা অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে প্রভাব ফেলছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘সুরক্ষাবাদ, জনতাবাদ, জনসংখ্যাগত পরিবর্তন ও আঞ্চলিকতার প্রভাবে ২০২৫ সালের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি গত ৩৪ বছরের গড়ের চেয়ে অনেক কম। উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি আরো কম। বিশ্বব্যাপী জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২০২৫ সালে ২ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে কমে ২ দশমিক ৩ শতাংশে নামার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে, যা ২০২৬ সালে ২ দশমিক ৪ শতাংশে নেমে আসবে। এর সঙ্গে যদি বাণিজ্য নীতির অনিশ্চয়তা যোগ হয়, তবে বৈশ্বিক জিডিপি আরো দশমিক ৮ শতাংশ কমবে। আর মার্কিন শুল্ক যুক্ত হলে মোট ক্ষতি হবে ১ দশমিক ৩ শতাংশ।’

BBS cable ad

কর্পোরেট এর আরও খবর: