ডিসির সহযোগিতায় ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত সিয়াম পেল নতুন জীবন
বিডিএফএন টোয়েন্টিফোর.কম
সিয়াম হোসেন। বয়স ১০ বছর। দেখে বোঝার উপায় নেই সে ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত। মাঝে মধ্যে যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে দুই হাত দিয়ে মাথায় আঘাত করতো। অসংলগ্ন আচরণ ছিল তার। আবার কখনো কখনো মাথার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়তো। কথা না বলে চুপ করে থাকতো। দারিদ্র্যের কারণে ছেলেটির তেমন চিকিৎসা করাতে পারেননি বাবা-মা। তবে ছেলেকে সুস্থ করার জন্য সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করে গেছেন।
তবুও সুস্থ না হওয়ায় বিষয়টি নাটোরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) শামীম আহমেদের নজরে আনলে তিনি শিশুটির চিকিৎসার দায়িত্ব নেন। চিকিৎসা করিয়ে তাকে নতুন জীবন দেন। পাশাপাশি তার পরিবারকেও মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
সিয়াম নাটোর সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়িয়া উত্তর পটুয়াপাড়া এলাকার গোলাপ হোসেন ও রানী বেগম দম্পতির ছেলে। তাদের তিন সন্তানের মধ্যে সিয়াম মেজো।
জানা যায়, ২০২১ সালে যখন আর সিয়ামের চিকিৎসার খরচ বহন করা সম্ভব হচ্ছিল না তখন তার চিকিৎসার জন্য সাহায্য চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে যান বাবা-মা। তাদের মুখে ছেলে সিয়ামের ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত হওয়ার সব কিছু শুনে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ। পরে তিনি ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত শিশু সিয়ামের চিকিৎসার দায়িত্ব নেন। ছয় মাস আগে ঢাকার পিজি হাসপাতালে তার মাথায় তিনটি অস্ত্রোপচার করা হয়। বর্তমানে সিয়াম সুস্থ রয়েছে।
সিয়ামের বাবা দিনমজুর। তিনি অন্যের বাড়িতে পুকুরের পাহারাদার হিসেবে কাজ করতেন এবং এক ছেলে ও দুই মেয়েসহ পাঁচ সদস্যের পরিবার নিয়ে সেখানেই বসবাস করতেন। কিন্তু ছেলের চিকিৎসার জন্য ঢাকায় অবস্থানকালে সেই কাজটিও হারাতে হয়। সেই সঙ্গে মাথা গোঁজার ঠাঁইটিও চলে যায়। বিষয়টি জানার পর জেলা প্রশাসক প্রধানমন্ত্রীর উপহারের একটি ঘরও প্রদান করেন পরিবারটিকে। তারা শিগগিরই নতুন ঘরে উঠবেন বলে জানান সিয়ামের মা রানী বেগম।
স্থানীয়রা জানান, যখন সিয়ামের বয়স চার বছর তখন ব্রেইন টিউমার ধরা পড়ে। দারিদ্র্যের কারণে ছেলেটির তেমন চিকিৎসা করাতে পারেননি বাবা-মা। তবে তারা ছেলেকে সুস্থ করার জন্য সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করে গেছেন। পাঁচ বছর ধরে ছেলেটির চিকিৎসার খরচ যোগাতে গিয়ে পরিবার যখন দিশেহারা হয়ে পড়েন, তখনই তাদের পাশে দাঁড়ান জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ।
সিয়ামের বাবা গোলাপ হোসেন বলেন, জন্মের সময় সিয়ামের কোনো সমস্যা দেখা যায়নি। তবে চার বছর বয়সে তার চলাচল দেখে বুঝতে পারি সে স্বাভাবিক নয়। পরে তাকে একাধিক চিকিৎসক দেখাই। চিকিৎসক এটিকে ব্রেইন টিউমার বলে চিহ্নিত করে চিকিৎসা দেন। ইতোমধ্যে চিকিৎসা করে অনেক টাকা ব্যয় হয়ে গেছে। এতে কোনো উন্নতি না হওয়ায় জেলা প্রশাসকের কাছে হাজির হই এবং তিনি আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। সিয়ামকে চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ করে তুলেছেন। আমাদের থাকার জন্য একটি বাড়িও দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ডাক্তাররা বলেছেন সিয়ামের এ অবস্থা মেনে নিতে হবে। সে পুরোপুরি সুস্থ হবে না, মাঝে মাঝে ডাক্তার দেখাতে হবে। এমতাবস্থায় জেলা প্রশাসক স্যার চলে গেলে তখন সিয়ামের কী হবে?
শিশুটির মা রানী বেগম বলেন, সিয়াম হওয়ার আগ মুহূর্তে জানতে পেরেছিলাম স্বাভাবিক হবে না। তবুও জন্মের পর বেশ ভালোই ছিল। যখন তার বয়স চার বছর, তখন থেকেই রোগের দেখা। সে চোখে ঝাপসা দেখতো। অনেক কষ্টে অপারেশন করার পর চোখ দুটো ফিরে পেয়েছে। কিন্তু ধরা পড়েছে ব্রেইন টিউমার। পাঁচ বছর ছেলেটির চিকিৎসার জন্য অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু সুস্থ হয়নি।
জেলা প্রশাসকের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে রানী বেগম বলেন, জেলা প্রশাসক স্যার ফেরেশতার মতো আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। তিনি না থাকলে হয়তো আমাদের সিয়াম এখন সুস্থ থাকত না। তিনি আমাদের জন্য যা যা করেছেন তা ভুলবার নয়। তিনি একজন মানবিক মানুষ। তার দীঘায়ু ও সুস্থতা কামনা করি।
সিয়ামের নানা নূর মোহাম্মদ বলেন, আমার নাতির জন্য ডিসি স্যার যা করেছেন তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। যা আমাদের মতো গরিব মানুষের পক্ষে সম্ভব ছিল না। তিনি একজন মহৎ মানুষ। প্রশংসা করে তাকে ছোট করতে চাই না। আমরা সারা জীবন স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব।
তিনি আরও বলেন, এখন সিয়াম অনেকটাই সুস্থ আছে। তবে আবার তাকে ডাক্তার দেখাতে হবে। প্রতিদিন তার অনেক টাকার ওষুধ লাগে।
নাটোরের জেলা প্রশাসক শামীম হোসেন বলেন, আমি নিজে থেকেই এ উদ্যোগ নিয়েছিলাম। সিয়ামের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা আগেও করা হয়েছিল, এখনো করা হচ্ছে। সিয়ামের পরিপূর্ণ চিকিৎসার জন্য যা যা প্রয়োজন তা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে করা হবে।
তিনি আরও বলেন, অসহায় মানুষের পাশে জেলা প্রশাসন সব সময় থাকবে।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা পোস্টে ‘ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত শিশুটির চিকিৎসায় ডিসির উদ্যোগ’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এক বছরের ব্যবধানে সিয়াম এখন সুস্থ রয়েছে।