South east bank ad

খেলনা শিল্পের রফতানি বাড়াতে প্রয়োজন নীতিসহায়তা

 প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   আমদানী/রপ্তানী

খেলনা শিল্পের রফতানি বাড়াতে প্রয়োজন নীতিসহায়তা

বর্তমানে বৈশ্বিক খেলা শিল্পের বাজার ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি হলেও বাংলাদেশ রফতানি করে মাত্র ৭৭ মিলিয়ন ডলারের পণ্য। তবে প্রয়োজনীয় নীতিসহায়তার অভাব, কাঁচামাল আমদানিতে উচ্চ শুল্কহার, বন্ডেড সুবিধার অনুপস্থিতি, অপ্রতুল অবকাঠামো ও টেস্টিং সুবিধার অপর্যাপ্ততাসহ বিভিন্ন কারণে এ শিল্পের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না।

রাজধানীর মতিঝিলে গতকাল ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) মিলনায়তনে ‘রফতানি বহুমুখীকরণ: খেলনা উৎপাদন শিল্পে উদ্ভাবন ও রফতানির সম্ভাবনা’ শীর্ষক এক ফোকাস গ্রুপ আলোচনায় এ কথা জানান এ খাতের ব্যবসায়ীরা। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এ সভার আয়োজন করে।

চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদের সভাপতিত্বে আলোচনায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য (কাস্টমস: নীতি ও আইটি) মুহাম্মদ মুবিনুল কবীর এবং বাংলাদেশে ব্রিটিশ হাইকমিশনের ডেপুটি ডেভেলপমেন্ট ডিরেক্টর মার্টিন ডওসন বিশেষ অতিথি ছিলেন। এ সময় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ প্লাস্টিক গুডস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিজিএমইএ) সভাপতি ও জালালাবাদ পলিমারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামীম আহমেদ।

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, ‘রফতানি পণ্যের বহুমুখীকরণের বিষয়টি বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ। অথচ বিগত বছরগুলোয় আমাদের রফতানি গুটিকয়েক পণ্যের ওপর অধিকমাত্রায় নির্ভরশীল ছিল।’

ডিসিসিআই সভাপতি উল্লেখ করেন, ‘খেলনা সামগ্রী রফতানির বৈশ্বিক বাজারের আকার ১০২ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার, যা ২০৩০ সালে দেড়শ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে। অথচ এ খাতে আমাদের রফতানির পরিমাণ মাত্র ৭৭ মিলিয়ন ডলার।’ আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের অনুপস্থিতি, টেস্টিং সুবিধার অপ্রতুলতা, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশাধিকারের সীমাবদ্ধতা, ব্যবহৃত কাঁচামালে আমদানিনির্ভরতা ও আমদানি পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্কারোপ, প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর সীমাবদ্ধতা এবং সহায়ক নীতিমালার অভাবে এ খাতের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না বলেও দাবি করেন তিনি।

স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণের পরবর্তী সময়ে তৈরি পোশাকের পাশাপাশি সম্ভাবনাময় অন্য খাতের ওপর নজর দিতে হবে বলে মনে করেন এনবিআার সদস্য মুহাম্মদ মুবিনুল কবীর। তিনি বলেন, ‘এ লক্ষ্যে এনবিআর সংশ্লিষ্ট নীতিমালা সহজীকরণ ও বন্ডেড সুবিধা দেয়ার কাজ করে যাচ্ছে। ২০২৩ সালে প্রণীত ট্যারিফ নীতিমালা অনুসারে রাজস্ব বিভাগ শুল্কারোপ করে। এ ক্ষেত্রে বিদেশী দাতা সংস্থাগুলোর কিছু সুপারিশ থাকে, যা মেনে চলতে হয়।’

অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে কোনো নীতিসহায়তা পরিবর্তনের তেমন সুযোগ নেই, তবে আগামী বছরে বাজেট প্রণয়নে এ খাতের প্রয়োজনীয় নীতিসহায়তা দেয়ার বিষয়টি সরকারের বিবেচনার সুযোগ রয়েছে বলে তিনি জানান।

এনবিআর সদস্য আরো বলেন, ‘গত ৪০ বছর ধরে তৈরি পোশাক খাতে সহায়তা দেয়া হলেও এ খাতের সক্ষমতা কতটুকু বেড়েছে তা নিয়ে চিন্তার সময় এসেছে। তাই খেলনা শিল্পের উদ্যোক্তাদের প্রণোদনা প্রাপ্তির চেয়ে নিজেদের দক্ষতা ও সক্ষমতা বাড়ানো এবং পণ্যের উদ্ভাবনী কার্যক্রমে বেশি মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

সভায় ব্রিটিশ হাইকমিশনের ডেপুটি ডেভেলপমেন্ট ডিরেক্টর মার্টিন ডওসন বলেন, ‘বাংলাদেশে উৎপাদিত খেলনা পণ্য রফতানির প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। ব্রিটিশ সরকার এ খাতে সহযোগিতা করতে বেশ আগ্রহী।’ বিদ্যমান নীতিমালার সংস্কার ও প্রতিবন্ধকতা নিরসন করা সম্ভব হলে যুক্তরাজ্যে এ খাতের পণ্যের রফতানি আরো বহু গুণ বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে বিপিজিএমইএ সভাপতি শামীম আহমেদ বলেন, ‘প্লাস্টিক খাতে বাংলাদেশে প্রায় পাঁচ হাজারের মতো প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যার মধ্যে খেলনা সামগ্রী উৎপাদনের সঙ্গে আড়াই শতাধিক প্রতিষ্ঠান জড়িত। এ খাতে প্রায় ১ দশমিক ৫ মিলিয়ন মানুষ কর্মরত রয়েছেন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ খাত রফতানি করেছে ২৭৬ মিলিয়ন ডলারের পণ্য। অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ বাজারের আকার ছিল প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার।’

তিনি জানান, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১৫ দশমিক ২৩ মিলিয়ন ডলারের খেলনা সামগ্রী রফতানি করে বাংলাদেশ, যা ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা বেড়ে ৭৭ মিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়। এ সময় ৮৮টি দেশে পণ্য পাঠানো হয়। তবে পণ্যের মান নিশ্চিতকরণ, অপ্রতুল অবকাঠমো, গবেষণা কার্যক্রমের অনুপস্থিতি ও নতুন পণ্যের ডিজাইন উদ্ভাবনে পিছিয়ে থাকার মতো বিষয়গুলোর কারণে এ খাতের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না।

আলোচনায় ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহসভাপতি রাজিব এইচ চৌধুরী ও সহসভাপতি মো. সালিম সোলায়মানসহ খেলা শিল্পের সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।

BBS cable ad

আমদানী/রপ্তানী এর আরও খবর: