ই-কমার্স : নির্ধারিত সময়ে পণ্য দিতে ব্যর্থ হলে গুনতে হবে জরিমানা
অনলাইনে বিক্রয়ের জন্য প্রদর্শিত পণ্যের সম্পূর্ণ মূল্য পরিশোধের পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ডেলিভারি সংস্থার কাছে পণ্য হস্তান্তর করতে হবে। অগ্রিম মূল্য পরিশোধের পর ক্রেতা-বিক্রেতা একই শহরে হলে সর্বোচ্চ পাঁচ দিনের মধ্যে পণ্য পৌঁছাতে হবে। ভিন্ন শহর বা গ্রামে হলে সর্বোচ্চ দশ দিনের মধ্যে পণ্য ডেলিভারি দিতে হবে। অনলাইনে পণ্য বা সেবা বিক্রয়ের জন্য বা প্রসারের জন্য কোনো ধরনের লটারি বা এ জাতীয় কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া ভার্চুয়াল ওয়ালেট তৈরি করা যাবে না। এমন নির্দেশনা দিয়ে সম্প্রতি ‘ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা-২০২১’ এর খসড়া তৈরি করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বর্তমানে দেশে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের তৈরি করা শর্তের মাধ্যমে ব্যবসা চালাচ্ছে। এর ফলে অগ্রিম মূল্য পরিশোধের পরেও পণ্যের জন্য মাসের পর মাস অপেক্ষা করাচ্ছে কোনো প্রতিষ্ঠান। আবার টাকা ফেরত পেতেও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। পণ্য বিক্রিতে নানা প্রলোভনে প্রতারিত হচ্ছে ভোক্তা। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগের পাহাড় জমেছে। অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের তৈরি করা নীতিমালার মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করার ফলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। দুই পক্ষে আপস করেই ছেড়ে দিতে হচ্ছে। কোনো শাস্তি দেওয়া যাচ্ছে না। ‘ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা’ চূড়ান্ত হলে তারা আর নিজেদের মতো করে ব্যবসা করতে পারবে না। সরকারি নির্দেশিকা মেনেই ব্যবসা পরিচালনা করতে হবে।
নতুন নির্দেশনা জারি হলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন সংশোধন করতে হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার ইত্তেফাককে বলেন, আইন সংশোধনের প্রয়োজন হবে না। কারণ পণ্য যথাযথভাবে দেওয়া না হলে বিদ্যমান আইনেই শাস্তির বিধান রয়েছে।
উল্লেখ্য, দেশে বর্তমানে ডিজিটাল ব্যবসা চলছে জাতীয় ডিজিটাল কমার্স (সংশোধিত) নীতিমালা, ২০২০-এর আওতায়। কিন্তু এর আওতায় কোনো কোম্পানি কীভাবে পরিচালিত হবে সেই নির্দেশনা নেই। এই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো। নিজেদের মতো করে ব্যবসা করে যাচ্ছে তারা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, জাতীয় ডিজিটাল কমার্স (সংশোধিত) নীতিমালা ২০২০ অনুসারেই ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা-২০২১ প্রণয়ন করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে খসড়ার ওপর সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মতো চাওয়া হয়েছে। শিগিগরই এটি চূড়ান্ত করা হবে।
খসড়ায় বলা হয়েছে, ক্রেতা ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ব্যাংক, মোবাইল ব্যাংকিং বা নগদ যে কোনো মাধ্যমে অগ্রিম মূল্য পরিশোধ করলে এবং বিক্রেতা কোনো কারণে নির্ধারিত সময়ে পণ্য সরবরাহ করতে ব্যর্থ হলে মূল্য পরিশোধের সাত দিনের মধ্যে ক্রেতার পুরো টাকা ফেরত দিতে হবে। আর ফেরত দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো চার্জ বা মাশুল লাগলে তা মার্কেটপ্লেস বা বিক্রেতাকে বহন করতে হবে। মূল্য ফেরতের বিষয়টি ক্রেতাকে ফোন, ই-মেইল বা অন্য কোনো মাধ্যমে জানাতে হবে। নির্ধারিত সময়ে অর্থ ফেরত না পেলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বা সংশ্লিষ্ট আদালতে মামলা করতে পারবেন ক্রেতা। এক্ষেত্রে পণ্য মূল্যের সমপরিমাণ বা সর্বোচ্চ দ্বিগুণ জরিমানা করা হবে।
পণ্য সরবরাহে দায় দায়িত্ব বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের। এক্ষেত্রে মালামাল সুরক্ষার জন্য বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ডেলিভারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রয়োজনীয় চুক্তি সম্পাদন করবে। দেশের বাইরের পণ্য হলে ‘রেডি টু শিপ’ অবস্থায় নেই এমন পণ্যের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশের বেশি অগ্রিম নেওয়া যাবে না। তাছাড়া বিদেশি পণ্য হলে প্রযোজ্য কাস্টমস ডিউটি ও আমদানি পর্যায়ে অন্য যে কোনো শুল্ক সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে এবং কাস্টমারকে প্রমাণস্বরূপ কপি প্রেরণ করতে হবে।