‘ঘুষ নয়’ ‘হাদিয়া’ নেন ফুলবাড়িয়া মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার
মো: আব্দুস ছাত্তার, (ফুলবাড়িয়া) :
মানুষ বদলায়, কারণে অকারণে বদলায়। এটি একটি উপন্যাসের ডায়ালগ। কিন্তু এটিই বাস্তব। ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো: আবুল কালাম আজাদ ঘুষের কৌশল পরিবর্তন করে হাদিয়ায় অফিস করছেন বলে জানা গেছে।
নারী শিক্ষা উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের জন্য উপজেলা পর্যায়ে উপবৃত্তি কার্যক্রম চালু করে সরকার। তার জন্য প্রথমে উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা পরে সেটি সময়ের প্রয়োজনে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হিসাবে পদায়ন করা হয়। সেই অফিসে কাজের পরিধিও বাড়ানোর ধারাবাহিকতায় শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার একজন সদস্য। তাঁর কাছে আরও একটি বিশেষ ক্ষমতাও আছে, সেটি হল নিয়োগ হওয়ার পর পদ শুন্য করা। সেটিতে তিনিই সর্বেসর্বা। নিয়োগ বোর্ডের সদস্য হিসাবে তাঁকে দিতে হত নির্ধারিত একটি এমাউন্ট। নিয়োগ হওয়ার পর এমপিওভুক্ত হতে পদ শুন্য করতে হয়। তা না হলে এমপিও আবেদন করা সম্ভব হয় না। সেখানেও গুনতে হয় নজরানা। অর্থাৎ এক নিয়োগে দুইবার দিতে হয় উৎকোচ।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আবুল কালাম আজাদ প্রথম ২৩-৪-২০০৮ হতে ২৫-৫-২০১৪ পর্যন্ত এবং দ্বিতীয় দফায় ৭-৭-২০১৯ হতে ফুলবাড়িয়ায় চাকুরি করছেন। ওই সময় তিনি সকল নিয়োগে নির্ধারিত এমাউন্ট টার্গেট দিতেন। কিন্তু দ্বিতীয় মেয়াদে ফুলবাড়িয়ায় যোগদান করে তিনি ঘুষের অপর নাম দিয়েছেন হাদিয়া। যেহেতু তিনি দাওয়াতের কাজের সাথে জড়িত সেহেতু শিক্ষকদের বুঝিয়েছেন ঘুষ নেওয়া ঠিক না, আপনারা আমাকে হাদিয়া দিলে আমি না করতে পারি না। উনার হাদিয়া সম্পর্কে উপজেলার সকল প্রতিষ্ঠান প্রধান অবগত বিধায় তাকে দ্বিতীয়বার কষ্ট করতে হয়নি। এনিয়ে ভোক্তভোগি প্রতিষ্ঠান প্রধান, শিক্ষক ও কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রতিবেদকের সাথে সাক্ষাতকার দিয়েছেন।
একাধিক প্রতিষ্ঠান প্রধান বলেন, সহকারী প্রধান থেকে প্রধান শিক্ষক বা সুপার হওয়ার সুযোগ হলেও টাকা কম গুণতে হয়নি আমাদের। স্কেল সংশোধনেও আমাদের হাদিয়া গুনতে হয়েছে। কেউ কেউ প্রতিবাদ করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে।
সদ্য নিয়োগপ্রাপ্তরা জানিয়েছেন, শিক্ষক নিয়োগে আমাদের হয়রানির শেষ নেই। হাদিয়া নিয়ে কষাকষি করলে পদ শুন্য হয় না, দেই দিচ্ছি এরকম তালবাহানা। তিন মাস পর পর এমপিও’র আবেদন করার সুযোগ পাওয়া যায়, এক মাস পিছিয়ে গেলেই ৩মাস পিছিয়ে যায় বেতন। যার কারণে আমাদের খুশি করে হাদিয়া দেওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই? আর শিক্ষা অফিসার কম্পিউটার সম্পর্কে তেমন দক্ষ না থাকায় দোকানের অপারেটরের উপর নির্ভরশীল। অনেক সময় দোকানের অপারেটরের হয়রানির শিকার হই আমরা। কেননা তার সাথে (দোকানি) যোগাযোগ থাকতে পারে। অফিসের অনেক গোপনীয় কাজ সেগুলোও দোকান থেকে করাতে হয়।
নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারীরা জানিয়েছেন, শিক্ষক নিয়োগের চেয়ে আমাদের নিয়োগে খরচ বেশি। কারণ আমরা সরাসরি তাঁর সাথে কথা বলতে পারি না। যার জন্য প্রতিষ্ঠান প্রধানদের মাধ্যমে উর্ধ্বতন কর্তাদেরও ম্যানেজ করতে হয়। আছে চাকরি হারাবার ভয়।
শিক্ষকরা আরও জানান, বর্তমানে প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে আয়া, নৈশ্য প্রহরি, গার্ড ও সহকারী লাইব্রেীয়ানের পদ সৃষ্টি করায় হাদিয়ার রমরমা। কিন্তু এগুলো দেখার কেউ নেই। বর্তমানে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ এনটিআরসিএ দিলেও এমপিও আবেদন ও তালিকা তারই (মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার) হাতে। হাদিয়া না পেলে কাগজপাতির ঝামেলা থেকেই যায়। ভোগান্তি কমেনি বরং বেড়েছে। হাদিয়া/উৎকোচ/নজরানা/বকশিষ মুক্ত ফুলবাড়িয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস গড়তে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন শিক্ষক সমাজ।
এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো: আবুল কালাম আজাদ’র বক্তব্য নেওয়ার একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও, সুইচ অফ পাওয়া যায়।