টাকা পাচার বন্ধ হওয়ায় রিজার্ভ বাড়ছে: হুসনে আরা শিখা
টাকা পাচার বন্ধ হওয়ায় ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে রেমিট্যান্সে। আর রেমিট্যান্স বৃদ্ধি কারণে রিজার্ভ বাড়ছে বলে ডেইলি বাংলাদেশকে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন মুখপাত্র হিসেবে মনোনীত হন নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখা। দেশের রিজার্ভ বৃদ্ধিসহ নানা বিষয়ে ডেইলি বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলেছেন এই মুখপাত্র। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক তাসলিমা আক্তার-
বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সম্প্রতি বাড়ার কারণ কী?
হুসনে আরা শিখা: বিভিন্ন প্রয়োজনে রিজার্ভ থেকে টাকা খরচ হচ্ছিল। ব্যাংকগুলোকে বিপদ মোকাবিলা করার জন্য টাকা দিচ্ছিলাম। না দিয়েও উপায় ছিল না। সম্প্রতি আমারা ফরেন কারেন্সি মার্কেট চালু করেছি। ওখান থেকে ডলার কেনাবেচা করা যাচ্ছে। সেই কেনাবেচা করা ডলার দিয়ে আমরা দায় শোধ করতে পারছি। দ্বিতীয়ত রেমিট্যান্স বেড়েছে। আশাব্যাঞ্জকভাবে গত এক বছরে আমাদের রেমিট্যান্স হার ঊর্ধ্বমুখী ছিল। গত এক মাসে প্রায় ৯০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য করছি। যেখানে এক্সচেঞ্জ রেট স্টেবল রয়েছে এবং রেমিট্যান্স বাড়ছে। সবমিলে এ দুই কারণে রিজার্ভ বাড়ছে।
এখন কি টাকা পাচার বন্ধ আছে?
হুসনে আরা শিখা: এটা আসলে বলাই যায়। রেমিট্যান্স অফিসিয়াল চ্যানেলে না আসার কারণ ছিল আন-অফিসিয়ালভাবে ট্রান্সফার; অর্থাৎ হুন্ডির কথা বারবার আসছিল। হুন্ডির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল টাকা পাচার। দেশ থেকে টাকা অন্য জায়গায় চলে যাচ্ছে। এখান থেকে ডলার হয়ে অন্য দেশে চলে যাচ্ছে। এখন পাচার বন্ধ হওয়ায় রেমিট্যান্সে ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এতে রিজার্ভ বাড়ছে।
অর্থ পাচার পুরোপুরি বন্ধে কীভাবে কাজ করছেন?
হুসনে আরা শিখা: পাচার বন্ধে কঠোর হওয়ার জন্য যে আইনি প্রক্রিয়া রয়েছে, তা আমাদের হাতে রয়েছে। আমরা মনে করি না পাচার এখনো চলমান আছে। পাচার বন্ধের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বিএফআইইউ সক্রিয় আছে, তা অতীতেও ছিল। তবে অতীতে বিএফআইইউ বিভিন্ন কারণে শক্তি প্রয়োগ করতে পারেনি। তবে আমরা মনে করি বিএফআইইউ এখন যথাযথভাবে কাজ করতে পারছে। পাচার বন্ধের ইনডাইরেক্ট বেনিফিট কিন্তু পাচ্ছি রেমিট্যান্স বৃদ্ধির মাধ্যমে।
পাচারকৃত অর্থ ফেরত পাওয়ার উপায় কী?
হুসনে আরা শিখা: আইনি প্রক্রিয়ায় বিএফআইইউ এন্টি মানি লন্ডারিং এক্ট এর মাধ্যমে পাচারকৃত টাকা ফেরত আনার বিষয়ে বর্ণনা করা আছে। তবে আইনি প্রক্রিয়াগুলো খুবই দুর্বল হয়। কোর্ট প্রসেসের মাধ্যমে ফেরত আনতে গেলে অনেক সময় লেগে যাবে। আমরা যেটা মনে করছি, কোর্ট প্রসেসের মধ্যে ইন্টারভেনশন করে অর্থাৎ স্পেশাল কোনো মেটালিজম করে এ প্রক্রিয়া বেগবান করব। একই সঙ্গে বিশ্বব্যাংক, বিভিন্ন দেশের সরকারকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। অর্থাৎ যেসব দেশে টাকা পাচার হয়েছে- যেমন ইউকে, ইউএসএ, কানাডা সরকারকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। একইভাবে বিশ্বব্যাংকের কাছে থেকে টিএ কম্পনেন্ট নিয়ে লিগ্যাল প্রসেস করে ইন্টারভেনশন করে টাকা দ্রুত দেশে আনতে পারি সে চেষ্টা করছি।
পাচারকৃত অর্থ ফেরাতে চেষ্টা করছেন, কিন্তু এখন পর্যন্ত কী সুফল পেয়েছেন?
হুসনে আরা শিখা: আমরা এখনো এটা শুরু করতে পারিনি। এটা এমন নয় যে, বলার সঙ্গে সঙ্গে চলে আসবে। এখনো টাস্কফোর্স তৈরি হয়নি, বিশ্বব্যাংকের টিএ সহায়তা এখনো হাতে আসেনি, সেগুলো আসতে হবে। আমরা মেটানিজম ডেভেলপ করছি এবং কোর্ট প্রসেসের মাধ্যমে ইন্টারভেনশনের দরকার হবে। কাজেই কবে আসবে বা এখন চলে আসছে কিনা- এ প্রশ্ন করার ক্ষেত্রে আমাদের সময় দিতে হবে।
বিদেশি ঋণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এক্ষেত্রে করণীয় কী?
হুসনে আরা শিখা: এটা বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু আতঙ্কিত হওয়ার কারণ দেখছি না। এ ঋণের পরিশোধ সূচিটা খুব পরিষ্কার। কাজেই এটা নিয়ে খুব বেশি আতঙ্কের কিছু নেই।