অর্থবছরের সাত মাসে ২৮.৯ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) বিশ্ববাজারে বাংলাদেশ থেকে পণ্য রফতানি হয়েছে ২ হাজার ৮৯৬ কোটি ৯৫ লাখ ২০ হাজার বা ২৮ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারের। এর মধ্যে ২ হাজার ৩৫৫ কোটি ২০ লাখ ২০ হাজার ডলারের পোশাক রফতানি হয়েছে। যা মোট রফতানির ৮১ দশমিক ২৯ শতাংশ। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) গতকাল এ পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের সাত মাসে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় বাংলাদেশ থেকে মোট পণ্য রফতানির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১ দশমিক ৬৮ শতাংশ। গত অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে পণ্য রফতানির অর্থমূল্য ছিল ২ হাজার ৫৯৩ কোটি ৮৯ লাখ ডলার। ওই সময়ে পোশাক রফতানির অর্থমূল্য ছিল ২ হাজার ১০২ কোটি ৭৯ লাখ ৩০ হাজার ডলার। এ হিসেবে সাত মাসে পোশাক রফতানির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ শতাংশ।
জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন তীব্র হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের শিল্পাঞ্চলগুলোর পোশাক কারখানায় ব্যাহত হয় উৎপাদন। আগস্টে গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে নিয়মিত বিরতিতে অস্থিরতা ও অসন্তোষ দেখা দেয় শিল্প অধ্যুষিত এলাকাগুলোয়। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে শিল্প এলাকাগুলোয় এ পরিস্থিতি বহাল ছিল কম-বেশি মাত্রায়। তার পরও পোশাক রফতানির ওপর ভর করেই প্রায় ১২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে রফতানি খাত।
ইপিবির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, অর্থমূল্য বিবেচনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে বাংলাদেশ থেকে রফতানি হওয়া শীর্ষ পণ্যগুলো হলো পোশাক, কৃষিপণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইল এবং পাট ও পাটজাত পণ্য। দেশের মোট রফতানির ৮৯ দশমিক ৩১ শতাংশই ছিল এসব পণ্য। আর মোট রফতানিতে সবচেয়ে বড় অবদান রাখা পণ্য পোশাকের অবদান ছিল ৮১ দশমিক ২৯ শতাংশ।
পোশাক রফতানিকারকরা বলছেন, প্রবৃদ্ধির পরিসংখ্যান আশাব্যঞ্জক, তবে তা শিল্পের চ্যালেঞ্জগুলোর সম্পূর্ণ প্রতিফলন নয়। বিশেষ করে মূল্য ও ব্যয়ের চাপের মতো বেশকিছু বিষয় বিবেচনা ও বিশ্লেষণ প্রয়োজন। যেমন বাজারভিত্তিক কর্মদক্ষতা, পণ্য ও বাজার কেন্দ্রীভবন।
বাংলাদেশী পোশাকের বড় বাজার পশ্চিমা দেশগুলো। আর একক দেশ হিসেবে সবচেয়ে বড় গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র। পোশাক রফতানিকারকরা বলছেন, ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ‘চায়না প্লাস ওয়ান’ কৌশলের (ভূরাজনৈতিক ঝুঁকি এড়াতে শুধু চীনের ওপর নির্ভর না করে অন্য দেশ থেকেও পণ্য আমদানির মাধ্যমে উৎসে বৈচিত্র্যায়ণের কৌশল) প্রভাব বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্রের বাজার নিয়ে বাংলাদেশ আগে থেকেই সুবিধাজনক অবস্থানে ছিল। এখন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে কানাডার পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপের পর মার্কিন পণ্যেও পাল্টা শুল্কারোপের ঘোষণা দিয়েছে কানাডা সরকার। ধারণা করা হচ্ছে কানাডাকে অনুসরণ করে মেক্সিকো ও চীন একই ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে। বড় অর্থনীতির দেশগুলোর শুল্ক লড়াই বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের রফতানি প্রবৃদ্ধির জন্য সম্ভাবনা হিসেবে দেখছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।
বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বণিক বার্তাকে বলেন, ‘গত বছর বৈশ্বিক বাণিজ্য উল্লেখযোগ্যভাবে সংকুচিত হয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে, যা তীব্র মূল্য প্রতিযোগিতার দিকে নিয়ে গেছে। আসন্ন বাণিজ্য যুদ্ধের মাঝে বাংলাদেশী তৈরি পোশাক খাতে কিছু সম্ভাবনা তৈরি হলেও ব্যবসা পরিচালনার জন্য বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সমাধান জরুরি। এর মধ্যে জ্বালানি নিরাপত্তা এবং আর্থিক ও ব্যাংক খাতের স্থিতিশীলতা অন্যতম।’
আগের অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে পোশাক রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হওয়ার পাশাপাশি কৃষিপণ্য রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে, যার হার ২১ দশমিক ৩৫ শতাংশ। এ পণ্য খাত অর্থবছরের ছয় মাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ রফতানি খাত ছিল। সাত মাসে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে কৃষি পণ্য রফতানি। আলোচ্য সময়ে তৃতীয় সর্বোচ্চ রফতানি খাত হলো চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। এ পণ্য রফতানিতে প্রবৃদ্ধির হার নেতিবাচক বা ঋণাত্মক ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ। হোম টেক্সটাইল পণ্য রফতানিও কমেছে ১ দশমিক ১৭ শতাংশ। আর পাট ও পাটজাত পণ্যের রফতানি কমেছে ৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ। প্রবৃদ্ধি বিবেচনায় শীর্ষ পাঁচ রফতানি পণ্যের তিনটিই ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।
একক মাস হিসেবে চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৪৪৩ কোটি ৬০ লাখ ২০ হাজার ডলারের পণ্য রফতানি করেছে বাংলাদেশ। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে রফতানির অর্থমূল্য ছিল ৪১৯ কোটি ৬৯ লাখ ৮০ হাজার ডলার। এ হিসেবে চলতি বছরের জানুয়ারিতে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ। গত সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর এই চার মাসে ধারাবাহিকভাবে দুই অংকের প্রবৃদ্ধি ছিল রফতানি খাতে।