শিরোনাম

South east bank ad

সবজি রফতানিতে ৪৪৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি, সিংহভাগই আলু

 প্রকাশ: ২৮ জুন ২০২৫, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   আমদানী/রপ্তানী

সবজি রফতানিতে ৪৪৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি, সিংহভাগই আলু

বিশ্ববাজারে বাংলাদেশে উৎপাদিত সবজির চাহিদা সবসময়ই বেশি। বিশেষ করে প্রবাসী বাংলাদেশী অধ্যুষিত দেশগুলো এ তালিকায় শীর্ষে রয়েছে। কিন্তু গত দুই অর্থবছরে সবজিতে রাসায়নিকের উপস্থিতি, পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি ও স্থানীয় বাজারে সবজির মূল্যবৃদ্ধির কারণে রফতানির গতি ছিল নিম্নমুখী। তবে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিপরীত চিত্র দেখা গেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে যেখানে মাত্র ১৪ হাজার ২০২ টন সবজি রফতানি হয়েছে, সেখানে চলতি অর্থবছরে এর পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬৩ হাজার ৩৪৪ টনে। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪৪৬ শতাংশ। তবে এর মধ্যে ৬৪ দশমিক ৭৫ শতাংশই আলু।

চট্টগ্রাম উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের (সমুদ্রবন্দর) তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরে সবজি জাতীয় পণ্য রফতানি হয়েছে মোট ৬৪ হাজার ৩৪৪ টন। এর মধ্যে আলুর পরিমাণ ৪১ হাজার টন, তাজা সবজি (ফুলকপি, টমেটো, মিষ্টি কুমড়া, বাঁধাকপি, কচু ইত্যাদি) ২১ হাজার ৯৪ টন ও হিমায়িত সবজি ১ হাজার ২৫০ টন।

এর আগে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তাজা সবজি ১ হাজার ৬৬৯ টন, হিমায়িত শাকসবজি ১ হাজার ৪০৬ টন এবং আলু ১১ হাজার ১২৭ টনসহ মোট সবজি রফতানি হয় ১৪ হাজার ২০২ টন। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে আলু রফতানি বেড়েছে ৩৬৮ শতাংশ ও তাজা শাকসবজি ১ হাজার ২৬৩ শতাংশ। তবে হিমায়িত সবজির রফতানি কমেছে প্রায় ১১ শতাংশ।

অন্যদিকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে তাজা শাকসবজি ৩ হাজার ১৭৬ টন, হিমায়িত শাকসবজি ১ হাজার ১৮৭ টন এবং আলু ২৯ হাজার ৫৬০ টনসহ মোট ৩৩ হাজার ৯২৩ টন সবজি রফতানি হয়। ২০২১-২২ অর্থবছরে তাজা শাকসবজি ৫ হাজার ৫৮২ টন, হিমায়িত শাকসবজি ২ হাজার ২৮ টন এবং আলু রফতানি হয়েছিল ৫৩ হাজার ২৪ টনসহ মোট ৬০ হাজার ৬৩৪ টন।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, চার বছর আগেও দেশ থেকে বছরে ৫০ হাজার টনের বেশি আলু রফতানি হতো। কিন্তু কনটেইনারের ভাড়াসহ সমুদ্রপথের ব্যয় বৃদ্ধির কারণে রফতানির খরচ বেড়েছে। এ কারণে গত দুই অর্থবছরে আলু রফতানিতে ধাক্কা খেয়েছেন ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে খুচরা বা পাইকারি মূল্য ব্যাপক মাত্রায় বেড়ে যাওয়ায় রফতানিতে আগ্রহ দেখাননি ব্যবসায়ীরা। তবে চলতি অর্থবছরে আলুর দাম মোটামুটি ক্রয়যোগ্য হওয়ায় রফতানিকারকরা নতুন করে আশার আলো দেখছেন। সবজির বাজারও গত কয়েক বছরের তুলনায় গত ১০-১১ মাস স্থিতিশীল থাকায় রফতানিতে বড় ধরনের উল্লম্ফন দেখা গেছে।

বাংলাদেশ থেকে সবজিজাতীয় পণ্যের মধ্যে রফতানির শীর্ষে রয়েছে আলু, দ্বিতীয় অবস্থানে আছে বাঁধাকপি। এছাড়া মিষ্টি কুমড়া, মরিচ, ফুলকপি, টমেটো, কচু, শিম, কাঁকরোল, পটোল, মুখীকচুসহ বিভিন্ন সবজি ও শাক রফতানি করা হয়। এসব পণ্যের কিছু ফ্রোজেন করে ইউরোপ, আফ্রিকাসহ বিভিন্ন দেশে আর তাজা সবজি সাধারণ কনটেইনারে করে পাঠানো হয়। দেশের পার্বত্য অঞ্চল, চট্টগ্রাম, যশোর, রাজশাহী, চুয়াডাঙ্গা রংপুর, ঠাকুরগাঁও, মেহেরপুর, নরসিংদীসহ বিভিন্ন জেলা থেকে রফতানির জন্য সবজি সংগ্রহ করা হয়।

মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর, শ্রীলংকা, সৌদি আরব, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে আলু রফতানি করা হচ্ছে। তবে বিশ্ববাজারে চীন, ভারত, রাশিয়ার মতো উৎপাদনকারী দেশ কম মূল্যে আলু সরবরাহ করায় পিছিয়ে পড়েছে বাংলাদেশ। অথচ এক দশক আগেও বিশ্ববাজারে মোট আলু রফতানির সিংহভাগ যেত বাংলাদেশ থেকে।

চট্টগ্রাম উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপপরিচালক ড. মোহাম্মদ শাহ আলম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে চলতি অর্থবছর আলুসহ অন্যান্য শাকসবজি রফতানি কয়েক গুণ বেড়েছে। মূলত অর্থবছরের শুরু থেকেই আলু ও সবজি রফতানিতে বিভিন্ন সহায়তা প্রদান এবং বিশ্ববাজারে পণ্যের গুণগতমান তুলে ধরায় রফতানি বেড়েছে। স্থানীয় বাজারে শীতকালীন সবজি ও আলুর দাম নিম্নমুখী হওয়ায় রফতানিকারকরা আগ্রহ দেখিয়েছেন।’

রফতানিকারকরা বলছেন, বাংলাদেশ থেকে লাল জাতের ছাড়াও ডায়মন্ড, গ্রানুলা ও ক্যারেটের মতো আলু মধ্যপ্রাচ্যে রফতানি হয়। গত দুই অর্থবছরে যেসব আলু রফতানি করা হয়েছে সেগুলোর ক্রয়মূল্য ছিল কেজিপ্রতি ২৫ টাকার ওপরে। বিদেশে রফতানি করতে হলে আলু বা সবজি ২০ টাকার নিচে কিনতে হয়। এর সঙ্গে কনটেইনারের ভাড়া, সমুদ্রপথের ব্যয় ধরে মূল্য নির্ধারণ করা হয়। তবে স্থানীয় বাজারে সবজির দাম ও পরিবহন ব্যয় অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় রফতানি কমিয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তবে চলতি অর্থবছর পাইকারি বাজারে ২০ টাকা বা তারচেয়েও কম দামে আলু পাওয়া গেছে। এ কারণে ব্যবসায়ীরা সবজি জাতীয় পণ্যের রফতানি বাড়িয়েছেন।

চট্টগ্রাম ফ্রেশ ফ্রুটস ভেজিটেবল অ্যান্ড প্রোডাক্টস এক্সপোর্টার্স গ্রুপের সভাপতি মাহবুব রানা বণিক বার্তাকে বলেন, ‘স্থানীয় বাজারে আলু বা সবজির দাম কম থাকায় ব্যবসায়ীরা এবার গত দু-তিন অর্থবছরের তুলনায় বেশি রফতানি করেছেন। দেশের বাজারে কম দামে সবজি কিনতে না পারলে বিদেশী বায়ারদের চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ সম্ভব নয়। বিমানের কার্গোর ভাড়া বৃদ্ধির পাশাপাশি সমুদ্রপথের খরচও বেড়েছে ধাপে ধাপে। রিফার কনটেইনারের (তাপমাত্রা-সংবেদনশীল) বা সাধারণ কনটেইনারের ভাড়াও বাড়তি। এ কারণে সবজির দাম বেশি পড়ছে।’

ভারত আকাশ কিংবা সমুদ্রপথ ব্যবহার করে বাংলাদেশের চেয়ে অর্ধেক খরচে সবজি রফতানি করে বলেও জানান তিনি। মাহবুব রানা বলেন, ‘ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এক কেজি আলু পাঠাতে আমাদের ভাড়া গুনতে হয় সাড়ে ৬০০-৭০০ টাকা। সেখানে ভারত বিমান ভাড়া দেয় মাত্র ২৫০-৩০০ টাকা। বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা ৩০০-৪০০ টাকা পর্যন্ত কেজিপ্রতি সর্বোচ্চ ভাড়া দিতে পারবেন। এছাড়া সমুদ্রপথের ভাড়াও বাড়তি।’ সরকার যদি বিষয়গুলোর দিকে নজরদারি বাড়ায় তাহলে কয়েক গুণ বেশি সবজি রফতানি হবে বলেও মনে করেন এ রফতানিকারক।

BBS cable ad

আমদানী/রপ্তানী এর আরও খবর: