চট্টগ্রাম বন্দরে ফি বৃদ্ধি, আন্তঃজেলা কনটেইনার পরিবহন বন্ধ
চট্টগ্রাম বন্দরে ভারী যানবাহন প্রবেশ ফি ৫৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৩০ টাকা করায় আন্তঃজেলা রুটে কনটেইনার পরিবহন বন্ধ হয়ে গেছে। গত ১৫ অক্টোবর থেকে নতুন মাসুল কার্যকর হওয়ার পর থেকেই এই অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। শনিবার (১৮ অক্টোবর) সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্দর এলাকায় কোনো ভারী যান প্রবেশ না করার ঘোষণা দিয়েছে ট্রেইলার মালিক সমিতি।
বন্দর কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ১৭ অক্টোবর রাতে চট্টগ্রাম আন্তঃজেলা মালামাল পরিবহন সংস্থা ও ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির কার্যালয়ে এক জরুরি সভা হয়।
সভা শেষে নেতারা সিদ্ধান্ত নেন, গেট পাস ফি বাড়ানোর এ আদেশ প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত কোনো যানবাহন বন্দরে প্রবেশ করবে না।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ১৩ অক্টোবর অফিস আদেশ নম্বর ২২৩/২৫-এর মাধ্যমে ৫৭.৫০ টাকার গেট পাসের পরিবর্তে ২০০ টাকা ও ৩০ টাকা ভ্যাটসহ মোট ২৩০ টাকা নির্ধারণ করে। পরিবহন মালিকরা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত তাদের ওপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।
শনিবার সকাল ১১টায় বন্দরে গিয়ে দেখা যায়, সকাল ৬টা থেকে কোনো ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান বা ট্রেইলার বন্দরে ঢুকছে না।
ফলে জাহাজ থেকে পণ্য খালাস স্বাভাবিক থাকলেও কনটেইনার জমে থাকতে শুরু করেছে। এ অবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হলে বন্দরে কনটেইনার জট তৈরি হয়ে পণ্য খালাস ও ডেলিভারি মারাত্মকভাবে ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় আমদানিকারকেরা মাত্র ৮টি কনটেইনার নিতে পেরেছেন, যেখানে সাধারণ দিনে এই সংখ্যা ৬০০ থেকে ৯০০।
চট্টগ্রাম প্রাইম মুভার ও ফ্ল্যাটবেড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেন বলেন, ‘এটা ধর্মঘট নয়, মালিকেরা স্বেচ্ছায় গাড়ি চালানো বন্ধ রেখেছেন।
৫৭ টাকার গেট পাস ২৩০ টাকা করা অযৌক্তিক। শ্রমিক নাকি মালিক— কে এই বাড়তি ফি দেবে, সেটাও এখনো নির্ধারণ হয়নি।’
তিনি জানান, চট্টগ্রাম থেকে ভারী যান যখন ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় যায়, তখন তাদের নির্দিষ্ট লাইন খরচ থাকে। তেলের দাম বাড়লে সেটি সমন্বয় করা হয়। নতুন ফি কার্যকর হওয়ায় সেটি হিসাবের বাইরে চলে গেছে।
তিনি আরো বলেন, ‘১৪ অক্টোবর রাত থেকেই ট্রেইলার চলাচল বন্ধ আছে। বিষয়টি নিয়ে বন্দর নিরাপত্তা পরিচালকের সঙ্গে কথা হয়েছে, চেয়ারম্যান ঢাকায় থেকে ফিরলে আবার আলোচনা হবে।’
পরিবহন মালিকদের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন অন্তত ১০ হাজার পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল করে। এর মধ্যে প্রায় সাত হাজার ট্রেইলার, কাভার্ড ভ্যান ও ট্রাক বন্দরের পণ্য পরিবহন করে। এক দিন পরিবহন বন্ধ থাকলে সড়কে যানজট তৈরি হয়, যা স্বাভাবিক হতে কয়েক দিন সময় লাগে।
বেসরকারি কনটেইনার ডিপোগুলোর সংগঠন বিকডার মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার বলেন, ‘দেশের ১৯টি ডিপো থেকে প্রতিদিন দুই হাজারের বেশি রপ্তানি কনটেইনার বন্দর এলাকায় যায়। এখন ট্রেইলার বন্ধ থাকায় রপ্তানি কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এতে জাহাজে পণ্য ওঠানো বিলম্বিত হচ্ছে এবং শিডিউল বিপর্যয় ঘটছে।’
তিনি আরো জানান, ‘রপ্তানিপণ্য সময়মতো জাহাজে না উঠলে ক্রেতার কাছে পৌঁছতে দেরি হয়। এতে ব্যবসায়ীরা ডিসকাউন্ট বা শিপমেন্ট বাতিলের ঝুঁকিতে পড়েন।’
দেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ৯০ শতাংশই পরিচালিত হয় আমদানি-রপ্তানির প্রধান গেটওয়ে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় বন্দর কার্যক্রমে অচলাবস্থার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।


