আইনজীবি হওয়ার স্বপ্ন অধরাই রইল ফাহাদ হোসেনের
মোঃ লিহাজ উদ্দিন, (পঞ্চগড়) :
প্রত্যেক মানুষের জীবনে কিছুনা কিছু স্বপ্ন থাকে। স্বপ্ন বিহীন মানুষ পাওয়া দায়। এরকম স্বপ্ন নিয়ে আইনজীবী হওয়ার প্রত্যয় নিয়ে পড়াশোনা করতে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে পাড়ি জমান উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের ফাহাদ হোসেন প্রামাণিক (২৭)। তবে দুর্বৃত্তের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে অকালে প্রাণ হারান তিনি। ফাহাদ ফিরেছেন লাশ হয়ে। খালি হয়ে গেছে আশায় বুক বাঁধা মা–বাবার কোল। অধরাই রইল ফাহাদের স্বপ্ন। ফাহাদ পঞ্চগড় শহরের উত্তর জালাসী এলাকার ব্যবসায়ী নাজমুল হক প্রামাণিকের ছেলে। গতকাল সোমবার রাতে হত্যাকাণ্ডের এক মাস পর তাঁর লাশ পৌঁছায় বাড়িতে। ফাহাদের লাশ আসবে বলে সন্ধ্যা থেকেই পাড়া–প্রতিবেশী ও স্বজনেরা ভিড় করছিলেন তাঁদের বাড়িতে। আজ জানাজা শেষে তাঁর লাশ দাফন করা হয়। ফাহাদের পরিবারের লোকজন বলেন, গত ১২ সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ্যের ব্রিস্টল শহরে একটি বাড়িতে দুর্বৃত্তের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে খুন হন ফাহাদ। পরদিন পুলিশ ওই বাড়ির একটি কক্ষ থেকে ফাহাদসহ দুজনের উদ্ধার করে।
১৫ সেপ্টেম্বর পঞ্চগড় জেলা প্রশাসন ও পুলিশের মাধ্যমে ফাহাদের খুন হওয়ার বিষয়টি জানতে পারেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে পুলিশ ইতিমধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে বলে জানা গেছে।
পরিবারের সদস্যরা বলেন, পঞ্চগড় বিষ্ণু প্রসাদ (বিপি) সরকারি উচ্চবিদ্যালয় থেকে ২০০৯ সালে এসএসসি পাস করেন ফাহাদ। এরপর ঢাকার ভূঁইয়া একাডেমি থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। উচ্চশিক্ষা অর্জন করে ভালো আইনজীবী হওয়ার স্বপ্ন ছিল তাঁর। পরে ব্যারিস্টার অ্যাট ল ডিগ্রি নিতে ২০১৮ সালে যুক্তরাজ্যে চলে যান ফাহাদ। পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি জরুরি কোভিড–সেবা বিভাগে একটি চাকরিও করছিলেন।
ফাহাদের বড় বোন নিলুফা ইসলাম বলেন, সর্বশেষ গত ৭ সেপ্টেম্বর তাঁর সঙ্গে মুঠোফোনে ফাহাদের কথা হয়েছিল। অত্যন্ত সহজ–সরল মনের মেধাবী ছেলে ছিল ফাহাদ। বিদেশে থাকলেও দেশের কারও অসুস্থতার কথা শুনলে তাঁর ভাই সর্বাত্মক সহযোগিতা করার চেষ্টা করত। এভাবে ফাহাদের জীবন শেষ হয়ে যাবে, তা ভাবতেই পারছেন না।
মঙ্গলবার সকাল ১০টায় পঞ্চগড় শহরের দারুল উলুম মাদ্রাসা মাঠে ফাহাদের দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর বেলা সাড়ে ১১টায় সদর উপজেলার চাকলা হাট ইউনিয়নের নেকিপাড়া এলাকায় তৃতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়। এর আগে গত শুক্রবার যুক্তরাজ্যের ব্রিকলেন জামে মসজিদে ফাহাদের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে লাশটি বাংলাদেশে প্রেরণ করে।