ঠাকুরগাঁওয়ে সব হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে ক্ষতিগ্রস্তরা!
ফরিদুল ইসলাম রঞ্জু, (ঠাকুরগাঁও):
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জামালপুরের পাইকপাড়া গ্রামে ভয়াবহ আগুনে অর্ধশতাধিক ঘর পোড়ার ঘটনায় পুরো এলাকায় চলছে শোকের মাতম। উত্তরের তীব্র শীতে খোলা আকাশের নিচে ঠাঁই নিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।
আজ (২০ জানুয়ারি) বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় ঘটনাস্থলে জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ দেখতে এসে ভিড় করছে।
অনেকে আবার বাসা থেকে নিজেদের ব্যবহৃত শীতবস্ত্র ও শুকনো খাবার দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে থাকার চেষ্টা করছে। আগুনের ভয়াবহতায় সর্বস্ব হারানো পরিবারগুলোর কান্নায় সেখানকার পরিবেশ ভারি হয়ে উঠেছে।
স্বজনদের জড়িয়ে ধরে ক্ষণে ক্ষণে কেঁদে উঠছেন দিনমুজুর নেকো মিয়ার স্ত্রী শিরিন আক্তার। কাঁদতে কাঁদতে আবার জ্ঞানও হারিয়ে ফেলছেন। জ্ঞান আসা মাত্রই আবার কাঁদছেন। শিরিনের মতো কাঁদছে ক্ষতিগ্রস্ত সকলে।
ক্ষতিগ্রস্ত শিরিন আক্তার বলেন, কনকনে শীতে তেমন মাঠে কাজ মেলেনি। বাড়িতে পালিত তিনিটি গাভীর দুধ বিক্রি করে তার সংসার ও সন্তানের লেখাপড়ার খরচ চলতো। কিন্তু এ মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তার ৩টি গরু ও ৩টি ছাগল আগুনে পুড়ে কয়লা হয়ে যায়।
সকালেই পার্শ্ববর্তী একটি ক্ষেতে তার গবাদিপশুগুলো মাটি চাপা দেওয়া হয়েছে।৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী লিমা আক্তার কান্নায় ভেঙে পড়ে জানায়, আমার নতুন বইগুলো পুড়ে গেছে। আমার বাবার জামানো টাকা, আমাদের কাপড়চোপড় সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
এদিকে আগুনের সূত্রপাত নিয়ে স্থানীয়দের মিশ্র মতামত জানা গেছে। তারা বলছেন কেউ আগুন ধরিয়ে দিতে পারে, আবার কেউ বলছে চুলা থেকে আগুন লাগতে পারে। অনেকে আবার বলছেন বৈদ্যুতিক শটসার্কিট থেকে আগুন লেগেছে।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও ফায়ার সার্ভিসের ইনচার্জ ফরহাদ হোসেন বলেন, আগুন লাগিয়ে দেওয়ার কোনো আলামত আমরা পাইনি। যখন আগুন জ্বলছিলো তখন বিদ্যুৎ সচল ছিলো ওই গ্রামে।
আমরা ধারণা করছি কোনো চুলা থেকে এ আগুনের সূত্রপাত ঘটেছে।
ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, রাতেই ওই গ্রামের ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ ও শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। সকাল থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের নামের তালিকা ও ক্ষতির পরিমাণ তালিকাভুক্তির কাজ চলছে। আমরা সরকারিভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।