South east bank ad

যৌন হয়রানীসহ নানা অপকর্মের অভিযোগে কৃষি বিভাগের চেয়ারম্যানের পদ থেকে সাময়িক অব্যহতি

 প্রকাশ: ২৬ জানুয়ারী ২০২২, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   অটোমোবাইল

মেহের মামুন, (গোপালগঞ্জ):

ছাত্রীকে যৌনসহ নানা অপকর্মের অভিযোগে গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) সহকারী অধ্যাপক এইচএম আনিসুজ্জামানকে কৃষি বিভাগের চেয়ারম্যানের পদ থেকে সাময়িক অব্যহতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

গত মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারী) এ সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গত (২৩ ফেব্রুয়ারী) কৃষি বিভাগের শিক্ষার্থীদের নানা অভিযোগের ভিত্তিতে এই আদেশ দেয়া হয়েছে বলে জানাগেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো: মোরাদ হোসেনে স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে কৃষি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো: মোজাহার আলীকে বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০০১ এর ২৫(৩) ধারা মোতাবেক কৃষি বিভাগের চেয়ারম্যানের অতিরিক্ত দায়িত্ব অর্পণ করা হয় ৷

ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো: মোরাদ হোসেন জানান, “এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে৷ তাদের তদন্ত রিপোর্টের প্রেক্ষিতে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হবে৷”

সম্প্রতি শিক্ষক এইচ এম আনিসুজ্জামানের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে অনৈতিক প্রস্তাব, পরীক্ষার ফলাফলে অনিয়মসহ নানান অভিযোগ ওঠে। এ নিয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে তোলাপাড় সৃস্টি হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কৃষি বিভাগের শিক্ষার্থীরা জানান, সম্প্রতি এক ছাত্রীকে কৃষি বিভাগের শিক্ষক এইচ এম আনিসুজ্জামানের অনৈতিক প্রস্তাব সম্বলিত একটি অডিও ফাঁস হয়। এরপর গত ২৩ জানুয়ারি শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রাণী, পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস, পরীক্ষার নম্বরপত্রে গড়মিল করা, উত্তরপত্রে ইচ্ছা মাফিক নাম্বার বসানো, শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় ফেল করানোর হুমকিসহ হিসাব-নিকাশে অসমতার অভিযোগ এনে আনিসুজ্জামানের অব্যাহতি চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের কাছে তারা একটি অভিযোগ দায়ের করেন।

গত (২৪ জানুয়ারি) বিকেলে অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের শাস্তির দাবিতে ক্যাম্পাসে মিছিল ও শোডাউন করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ, শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের দাবির মুখে শিক্ষক এইচ এম আনিসুজ্জামানকে সভাপতির পদ থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয় বলে না প্রকাশে অনিচ্ছিুক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে।

যৌন হয়রানীর অভিযোগ যেন পিছু ছাড়ছে না গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) শিক্ষকদের নামে। সাবেক ভিসি থেকে শুরু করে বেশ কয়েকজন শিক্ষকের নামে এমন অভিযোগ রয়েছে গত কয়েক বছর থেকে। প্রতিটি অভিযোগ তদন্তের জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু কোন কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনই আলোর মুখ দেখেনি। নেয়া হয়নি কোন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা। আর তাই একের পর এক এমন অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে শিক্ষকদের নামে এমন মন্তব্য সাধারন শিক্ষার্থী ও অভিজ্ঞমহলের।

কৃষি বিভাগের চেয়ারম্যান সহকারী অধ্যাপক এইচএম আনিসুজ্জামানের এক ছাত্রীর সাথে এমনই একটি কুরুচিপূর্ণ ফোনালাপের অডিও সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। ২০১৯ সালে ওই বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ উঠতে থাকে। শিক্ষক হিসেবে ওই বিভাগে যোগদানের আগে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস সহকারি হিসেবে কমর্রত ছিলেন।

তবে প্রভাবশালী মহলের সাথে সুসম্পর্ক থাকায় কর্মচারী থেকে কৃষি বিভাগের শিক্ষক আর সেই সুবাদে বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান বলে গুঞ্জন রয়েছে। এ কারণে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে। তবে ছাত্রীর সাথে কুরুচিপূর্ণ ফোনালাপ ওই শিক্ষকের কিনা সেটা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ রয়েছে যে, এটি তারই নাকি ফোনালাপ।

ছাত্রীর সাথে ওই শিক্ষকের আপত্তিকর ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার পর উঠে আসে একের পর এক অভিযোগ। ওই ফোনালাপে তিনি একাধিকবার ওই ছাত্রীর সাথে একাকি সময় কাটানোর জন্য জোর করতে থাকেন। তবে ছাত্রী বারবার অসম্মতি জানালে তিনি ভয়ভীতি দেখাতে থাকেন। তাছাড়া ওই ছাত্রীকে পরীক্ষার আগে প্রশ্ন দেওয়াসহ নাম্বার বাড়িয়ে দেয়ার কথা উঠে আসে ওই ফোনালাপে। তাছাড়া তার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের সাথে বৈষম্যপূর্ণ আচরণ ও অনেকের পরীক্ষার উত্তরপত্রে নাম্বার বাড়ানো কমানোর অভিযোগ রয়েছে।

এরই মধ্যে ওই বিভাগীয় চেয়ারম্যানের নানা অনৈতিক ও অসঙ্গতিপূর্ণ কাজে শিক্ষার্থীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তবে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা বেশির ভাগই পরীক্ষার ফলাফল ও সার্টিফিকেটের জন্য বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছেন। তার ভয়ে সাধারন শিক্ষার্থীরা মুখ খুলতে চান না।

এর আগে ২০২১ সালে সেপ্টেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য (রুটিন দায়িত্ব) ও বর্তমান বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো: শাহজাহান এর বিরুদ্ধে তার সাবেক গৃহকর্মী যৌন হয়রানি ও শ্লীলতাহানির অভিযোগ আনে। ২০১৮ সালের ২২ এপ্রিল স্বয়ং বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসার ড. খোন্দকার নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে এক নারীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগের ভিডিও ভাইরাল হয়। ২০১৭ সালের ১২ ফেব্রুয়ারী হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানীর অভিযোগ করেন একই বিভাগের এক ছাত্রী। এছাড়া ২০১৯ কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগীয় প্রধান মো: আক্কাস আলীর বিরুদ্ধে ওই বিভাগের দুই ছাত্রীকে যৌন হয়রানীর অভিযোগ ওঠে।

এ বিষয়ে প্রক্টর ড. রাজিউর রহমান বলেন, ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে নৈতিক স্থলন, অর্থ আতœসাতসহ নানাবিধ অভিযোগ উঠেছে। আমি শুনেছি এসব অভিযোগ তদন্তের স্বার্থে কৃষি বিভাগের চেয়ারম্যান সহকারি অধ্যাপক এইচএম আনিসুজ্জামানকে বিভাগীয় চেয়ারম্যানের পদ থেকে সাময়িক অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। একই সাথে কৃষি বিভাগের ডীন ড. মো: মোজাহার আলীকে পরবর্তি নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত ওই বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত শিক্ষক আনিসুজ্জামানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করে সংবাদ কর্মীদেরকে বলেন, এগুলো সম্পূর্ণ বানোযয়াট। ভাইরাল হওয়া অডিও-র কন্ঠ তার না দাবী করে তিনি বলেন, এটা সম্পূর্ণ শক্রুতামূলক, উদ্দেশ্য প্রণোদিত। তিনি আরো বলেন, কিছু দিন আগে শিক্ষক সমিতির নির্বাচন ছিলো। আমি নির্বাচনে অংশগ্রহন করেছিলাম। রাজনৈতিকভাবে হেয় করার জন্য প্রতিপক্ষ এ কাজটা করেছে।

এ বিষয়ে অধ্যাপক ড. মো. মোজাহার আলী বলেন, পত্র-পত্রিকায় খবর আসা এবং শিক্ষার্থীদের আবেদনের বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে এইচ এম আনিসুজ্জামানকে সভাপতির পদ থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তবে তদন্তের পরে অভিযোগ প্রমাণিত না হলে তাকে পুনরায় সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, এ পর্যন্ত বশেমুরবিপ্রবির সাবেক উপাচার্যসহ ১২ জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেল।

BBS cable ad

অটোমোবাইল এর আরও খবর: