South east bank ad

হাসপাতালে জনবল সংকটে স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত

 প্রকাশ: ৩০ জানুয়ারী ২০২২, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   অটোমোবাইল

এম, নুরুন্নবী, (ভোলা):

ভোলার তজুমদ্দিনে ৩১ সয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবল সংকটে দীর্ঘদিন স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হচ্ছে। এবিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে বেশ কয়েকবার চিঠি দিয়েও কোন সুরাহা হয়নি। হাসপাতালটি ৫১ সয্যায় উন্নীত হলেও এক বছরেও কার্যক্রম চালু করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।

সুত্রে জানা গেছে, মেঘনা উপকুলের এই জনপদে প্রায় দেড় লক্ষ লোকের বসবাস। এরমধ্যে সোনাপুর, মলংচড়া ও চাঁদপুর এই তিনটি ইউনিয়নের বৃহদাংশ মেঘনা নদীতে বিভক্ত রয়েছে। বিচ্ছিন্ন এই দ্বীগুলোতে প্রায় ৫৫ হাজার মানুষের বসবাস রয়েছে।

এই বিশাল জনগোষ্ঠির চিকিৎসার একমাত্র কেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। হাসপাতালে পর্যাপ্ত ডাক্তার ও লোকবল সংকটের কারনে এই উপজেলার অধিকাংশ মানুষই চিকিৎসাসেবার জন্য জেলা সদরে চলে যায়। অনেক ক্ষেত্রে চরাঞ্চলের নিম্ন আয় ও হতদরিদ্র মানুষ বাধ্য হয়েই স্থানীয় ফার্মেসী বা গ্রাম্য ডাক্তারের কাছে যেতে দেখা যায়। এরপরও কেউ কেউ বাধ্য হয়েই এখানে আসেন বলে অভিযোগ অনেকের।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের করনীক তথ্যে জানা গেছে, ৩১ সয্যা বিশিষ্ট এ হাসপাতালটি ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠা হয়। বিভিন্ন শ্রেণি ভিত্তিক ১৫০ টি পদ থাকলেও ৬২ পদ শুন্য রয়েছে দীর্ঘদিন। এতে প্রথম শ্রেনির ১৫ টি পদ থাকলেও কর্মরত ডাক্তারের সংখ্যা ৬ জন জন।

সেক্ষেত্রে গাইনী, শৈল্য বিঃ, এ্যানেসথেসিয়া, ইউনানী, আবাসিক মেডিকেল অফিসার, ডেন্টাল সার্জন ও ইউনিয়ন সেন্টারের সহকারী সার্জনের ৫ জনের মধ্যে ৩ টি পদ শুন্য রয়েছে। এছাড়াও দুই দিন আগে একজন মেডিকেল অফিসার যোগদান করলেও তিনি আবার ভোলা সদর হাসপাতালে কোভিড ইউনিটে প্রেষণে চলে যান। অন্যদিকে আগামী মার্চের প্রথম সপ্তাহে আরো দুই মেডিকেল অফিসার এমডি প্যাথেলজি কোর্সের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেলে চলে যাবেন। সেক্ষেত্রে ডাক্তার থাকবেন মাত্র ৩ জন !

দ্বিতীয় শ্রেনির ৩১ টি পদ থাকলেও শুন্য রয়েছে ১৭ টি পদ। নার্সিং সুপারভাইজারের ২ টি পদই শুন্য রয়েছে দীর্ঘদিন। এছাড়াও সিনিয়ন স্টাফ নার্সের ২৫ জনের স্থলে আছে মাত্র ১০ জন! যার ফলে হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগীদেও প্রয়োজনীয় সেবা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।

তৃতীয় শ্রেনির ৮৫ টি পদেও মধ্যে কর্মরত আছে ৫৬ জন। স্বাস্থ্য সহকারীর ৩২ পদেও বিপরীতে জনবল আছেন ২৪ জন। স্যাকমোর সাত পদের মধ্যে ৬টিই শুন্য, মেডিকেল টেকনোলজিস্টেও ৬ পদের মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র ৩ জন। ফার্মাসিষ্ট ২ জনের মধ্যে একটি শুন্য, অফিস সহকারীর ৩ জনের মধ্যে কেউ কর্মরত নেই। স্টোর কিপার, সহকারী সেবক পদ অনেকদিন ধরে শুন্য আছে। স্বাস্থ্য পরিদর্শকের দুটি পদই শুন্য, সিএইচসিপি ১টি পদ শুন্য।

এছাড়াও চতুর্থ শ্রেনির ১৯ জনের মধ্যে আটটি পদই শুণ্য। অফিস সহায়ক, ওয়ার্ডবয় ও কুক পদে ২টি করে শুন্য রয়েছে। পরিচ্ছন্নতাকর্মি আছে ৫ জনের মধ্যে আছে চার জন।

স্থানীয় মানুষের দাবীর প্রেক্ষিতে ভোলা-৩ (লালমোহন-তজুমদ্দিন) আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ¦ নুরুন্নবী চৌধূরী শাওনের একক প্রচেষ্টায় প্রায় ৪ বছর আগে হাসপাতালটি ৩১ থেকে ৫১ সয্যায় উন্নীত হয়। ২০১৯ সালের মধ্যে ভবন নির্মান, চিকিৎসা সামগ্রী ও প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র সরবরাহ সম্পন্ন হয়। করোনার প্রকোপ শুরু হলে ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে ভবনটি প্রাথমিক কার্যক্রমে ব্যবহার শুরু হলেও এখন পর্যন্ত ৫১ সয্যারর কার্যক্রম চালু করা যায়নি। স্থানীয়দের দাবী, ৫১ সয্যার হাসপাতালটি দ্রæত চালু করলে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত হবে।

ব্যবসায়ী কামাল উদ্দিন জানান, তার ছেলের (৩) জ¦র নিয়ে বেশ কিছুদিন আগে হাসপাতালে যায়। কিন্ত ডাক্তার তাকে যথাযথ চিকিৎসা করতে পারেনি বলে তার অভিযোগ। সে আরো অভিযোগ করে, ছেলের অবস্থা খারাপ দেখলে ডাক্তারের সাথে আবার যোগাযোগ করে। ডাক্তার তার ছেলেকে ভোলা সদর হাসপাতালে রেফার করে দেন। পওে জানতে পারেন, ওই ডাক্তার শিশু বিশেষজ্ঞ না হয়েও ডাক্তার শুণ্যতার কারনে বাধ্য হয়ে সব রোগী দেখেন।

দিনের পর দিন ডাক্তারের পদ শুন্য থাকায় রোগীরা প্রয়োজনীয় সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। প্রতিদিন আউটডোওে রোগীর চাপ লেগেই থাকে। যার ফলে চাপ সামলাতে যেমন হিমসীম কর্মকর্তারা তেমনি ভোগান্তিতেও পরছেন সাধারন মানুষ।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার সোহেল কবির জানান, ডাক্তার ও লোকবল সংকটে প্রতিদিনের কার্যক্রমে অনেক প্রভাব পরছে।

একজনের কাজ আরেক জনকে দিয়ে করানো হচ্ছে। কিন্তু ডাক্তারের শুন্যতা থেকেই যাচ্ছে। আমরা একাধিকবার কর্তৃপক্ষের কাছে জনবল সংকটের বিষয়ে চিঠি লিখে জানিয়েছি। এখনো সংকট সমাধান হয়নি। এছাড়াও ৫১ সয্যা চালুর বিষয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে এখনো কোন নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। করোনার কারনে এক্ষেত্রে কিছুটা দেরী হচ্ছে বলে মনে করতে পারি।

BBS cable ad

অটোমোবাইল এর আরও খবর: