‘জেদ থেকেই বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে আসা’
বিডিএফএন টোয়েন্টিফোর.কম
ইফতেখায়রুল ইসলাম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার হিসেবে দায়িত্বে আছেন ডিএমপির গুলশান বিভাগে। ছাত্রজীবন থেকেই সহশিক্ষা ও স্বেচ্ছাসেবীমূলক কার্যক্রমে জড়িত থাকায় দেশব্যাপী পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছেন।
প্রশ্ন : ছাত্রজীবন কীভাবে কেটেছে?
ছাত্রজীবন বলতে গেলে প্রাথমিক থেকে স্নাতকোত্তর পর্যন্তকে যদি বিবেচনায় নিই, তা হলে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যন্ত খুব সিরিয়াসলি লেখাপড়া করেছি। উচ্চমাধ্যমিকে চেষ্টা ছিল ভালো করার। স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে গড়পড়তা পড়েছি। ছোটকাল থেকেই ক্লাসে প্রথম সারির ছাত্র ছিলাম। তবে এর বাইরে বিতর্ক, কুইজ, আবৃত্তি, রচনা প্রতিযোগিতা- এসবে আমার নিয়মিত পদচারণা ছিল। লেখাপড়ার পাশাপাশি এই চর্চা আমি স্নাতকোত্তর পর্যন্ত ধরে রেখেছিলাম। ওই অর্থে মন্দ কাটেনি।
প্রশ্ন : ছাত্রজীবন থেকে পেশাজীবনে বিভিন্ন সময় অনেক পুরস্কার ও পদক পেয়েছেন। সে সম্পর্কে জানতে চাই।
ছাত্রজীবন ও পেশাগত জীবনে পুরস্কারের কথা বলতে গেলে অনেক পুরস্কারের কথা চলে আসে। আমি ছেলেবেলা থেকেই শিশু একাডেমি, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ আয়োজিত বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় থানা, জেলা, বিভাগীয় ও জাতীয় পর্যায়ে অংশগ্রহণ করে শতাধিক পুরস্কার লাভ করেছি। আবৃত্তিতে জাতীয় পর্যায়ে প্রথম স্থান অর্জন করেছি একাধিকবার। এ ছাড়া জাতীয় বিতার্কিক হিসেবে পাবলিক স্পিকিংয়ে শ্রেষ্ঠ হয়েছিলাম বিভিন্ন সময়ে। পেশাগত দিক থেকে বললে এই ক্ষুদ্র পেশাগত জীবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রেসিডেন্ট পুলিশ মেডেল লাভ করেছি। কর্মক্ষেত্রে দক্ষতার জন্য দুইবার IGP's Exemplary Good Services Badge অর্জন করেছি। এর বাইরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে সহকারী পুলিশ কমিশনার হিসেবে একাধিকবার শ্রেষ্ঠ সহকারী পুলিশ কমিশনার হয়েছিলাম।
প্রশ্ন : এত পেশা থাকতে বিসিএস ক্যাডার কেন হলেন?
পেশাগত জায়গা থেকে আমার প্রথমেই বিসিএস ক্যাডার হব- এ ধরনের কোনো লক্ষ্য ছিল না! এমনকি বিসিএস পরীক্ষার প্রক্রিয়া নিয়েও জ্ঞাত ছিলাম না। পরিবারের চাপে দেশের বাইরে চলে গিয়ে সেটেলড হওয়ার বিষয় থেকে বাঁচতে দেশে মর্যাদাপূর্ণ কিছু একটা করতে চেয়েছি। ওই সময় বিসিএস ছাড়া আরও অন্য কয়েকটি জায়গায় পরীক্ষা দেওয়ার চিন্তাভাবনা করি। ৩০তম বিসিএস পরীক্ষায় ভাইভা থেকে বাদ পড়ে যাওয়ার পর আমার মধ্যে জেদ চেপে বসে যে, আমাকে বিসিএস ক্যাডার হতে হবে। ওই জেদ থেকেই বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে আসা। তবে আমি মনে করি, সবারই কয়েকটি পরিকল্পনা থাকা উচিত। একটি না হলে যেন আরেকটি বেছে নেওয়ার চেষ্টা করতে পারি, ওই লক্ষ্য ঠিক রাখা উচিত।
প্রশ্ন : পেশাগত দায়িত্বের বাইরে বিভিন্ন মানবিক সেবামূলক কাজ করছেন। এগুলো করার পেছনে নিশ্চয় বড় উদ্দেশ্য রয়েছে-
সমাজসেবামূলক কাজগুলো আমার আত্মার খোরাক জোগায়। খুব ছোটকাল থেকে সংগঠন চর্চা করতাম। আমার পরিবারে সেবামূলক কাজে সবার কমবেশি অংশগ্রহণ ছিল। বলতে পারেন পরিবার থেকেই এ শিক্ষা। মা-বাবাকে নিজের সাধ্যমতো করতে দেখেছি। আমার মা-বাবা বেঁচে নেই। আমি অনেকের মধ্যে নিজের পিতা-মাতাকে খুঁজে বেড়ানোর চেষ্টা করি। নিজ থেকে ইচ্ছা করে সব বয়স্ক মানুষের সঙ্গে পরিচিত হই। আমার সঙ্গে তাদের বেঁচে থাকা পর্যন্ত একটা সম্পর্ক থেকে যায়। এটি আমার আত্মাকে সন্তুষ্টি দেয়। আমার মনে হয়, আমি হয়তো নিজের মা-বাবার জন্যই করছি। আর অন্যদের ক্ষেত্রে ভাবনা যেটি কাজ করে, সেটি হলো যে ছেলে বা মেয়ে বিপদগ্রস্ত- ওই জায়গায় হয়তো আমিও থাকতে পারতাম। তাই তাদের নিজের ভাইবোনের মতো একটু ভালবাসা দেওয়ার চেষ্টা করি। আমার সামর্থ্য সীমিত। কিন্তু অন্তর মহান স্রষ্টা প্রসারিত করে দিয়েছেন। ওই বোধ থেকেই পাশে থাকার ক্ষুদ্র চেষ্টা করি।
প্রশ্ন : যারা বিসিএস ক্যাডার হতে চান, তাদের প্রতি পরামর্শ কী?
ক. লেগে থাকতে হবে। নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করতে হবে। নিজের সামর্থ্য, দুর্বলতা বুঝে নিজেকে তৈরি করতে হবে। বিগত সময়ের প্রশ্ন দেখে ধারণা নিয়ে ওই অনুসারে নিজেকে তৈরি করতে হবে। খ. কখনই বিসিএসকে একমাত্র স্বপ্ন বানানো যাবে না। লাখো শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছেন, টিকে থাকছেন মাত্র ২ হাজার থেকে ৩ হাজার। এই যে বাকি যারা বিসিএস ক্যাডার হতে পারলেন না, তাদের স্বপ্ন কি তা হলে থেমে যাবে? তাই প্রত্যেকেরই যেন কয়েকটি পরিকল্পনা থাকে। বিসিএস না হলে দ্বিতীয়, তৃতীয় প্রচেষ্টা কী হবে- সেটি যেন আগেই পরিকল্পনায় থাকে শিক্ষার্থীদের।
প্রশ্ন : অনেক তরুণ আপনাকে অনুসরণ করেন। আপনার মতো জনপ্রিয় হতে চান। এটা কীভাবে দেখেন?
আমি জানি না ঠিক কতজন তরুণ আমাকে অনুসরণ করেন। আমি সব সময় বিশ্বাস করি, মানুষের নিজের প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা থাকা খুবই জরুরি। জনপ্রিয়তার বিষয়টি খুব আপেক্ষিক! কেউ জনপ্রিয় মানেই তিনি দুর্দান্ত আর অন্যরা নন, এটি তা বোঝায় না। নিজের কাছে নিজের জনপ্রিয় থাকা খুব জরুরি। জনপ্রিয় হওয়ার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ নিজ কৃতকাজে সন্তুষ্টি ও একজন পরিপূর্ণ ভালো মানুষ হওয়ার চেষ্টা করা। আমরা কেউই সম্পূর্ণ নই, আমাদের কমতি রয়েছে। আমাদের মধ্যে যেন চেষ্টা থাকে নিজ অবস্থান থেকে সমাজে কিছুটা হলেও অবদান রাখার। একজন সম্মানিত নাগরিকের যে গুণাবলি থাকা জরুরি, সেটি ধারণ করার চেষ্টা যেন আমাদের মধ্যে থাকে। জনপ্রিয় হওয়ার চেয়ে নিজ ও নিজের আশপাশে ভূমিকা রাখার চেষ্টা মানুষকে মহান করে তোলে।