শিরোনাম

South east bank ad

কয়লা মাপার যন্ত্র নেই, রাজস্ব ফাঁকি

 প্রকাশ: ১২ জানুয়ারী ২০২২, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   ক্রয়-বিক্রয়

বিডিএফএন টোয়েন্টিফোর.কম

আগের মতোই চলছে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের দুই স্থলবন্দর। ওজন মাপার যন্ত্র নেই। চোখের আন্দাজ আর ভারতীয় শুল্ক বিভাগ থেকে লিখে দেওয়া ওজনকে সত্য মেনে রাজস্ব আদায় করেন বাংলাদেশের শুল্ক কর্মকর্তারা। ফলে রাজস্ব ফাঁকির পুরনো অভিযোগ থেকে বের হতে পারছে না এই দুই বন্দর।

এই দুই স্থলবন্দরের মধ্যে গোবরাকুড়া বড়। ছোট বন্দরটি কড়ইতলি। এক বছর আগে এই দুই বন্দর সরেজমিন ঘুরে যে চিত্র দেখা গেছে তা থেকে বের হতে পারেনি বন্দর দুটি।

গোবরাকুড়া বন্দর দিয়ে গত বছর কয়লা আমদানি করা হয়েছে ৩৫ হাজার ৮০৬ টন। রাজস্ব আদায় হয়েছে সাত কোটি ৭৫ লাখ ২৯ হাজার টাকা। অভিযোগ আছে, কয়লা আমদানিকারক আর শুল্ক কর্মকর্তাদের যোগসাজশে এই সময়ে সোয়া পাঁচ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয়।

কিভাবে এই ফাঁকির ঘটনা ঘটে, জানতে চাইলে বন্দরসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, প্রতিটি ট্রাকে ২০-২২ টন কয়লা ভারত থেকে আসে। কিন্তু শুল্ক আদায় হয় গড়ে প্রতি ট্রাকে ১২ টন কয়লা ধরে। এতে আমদানিকারক প্রতিটি ট্রাকে প্রায় আট টন কয়লার রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছেন। টাকার অঙ্কে তা ১৭ হাজার ৩২২ টাকা।

এই একই প্রক্রিয়ায় চলছে আট মাইল দূরে অবস্থিত কড়ইতলি বন্দর। গত বছর এই বন্দর দিয়ে কয়লা এসেছে ২৩ হাজার টন। এখানেও প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ আছে। এতে বেশি লাভবান হচ্ছেন এই বন্দর দিয়ে কয়লা নিয়ে আসা ব্যবসায়ীরা।

প্রতিদ্বন্দ্বী কয়লা ব্যবসায়ীদের দাবি, শুল্ক ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ পাওয়ায় এই দুই স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি করা কয়লা কিছুটা কম দামে বিক্রি করে দ্রুত লাভবান হচ্ছেন এক শ্রেণির ব্যবসায়ী। এতে বিপদে পড়ছেন যথাযথ শুল্ক দিয়ে অন্য স্থলবন্দর ও সমুদ্রবন্দর দিয়ে আমদানি করা কয়লা ব্যবসায়ীরা। আবার মান দেখার সুযোগ না থাকায় নিম্ন মানের কয়লাও ঢুকছে এই দু্ই বন্দর দিয়ে। মূলত ইটভাটায় এসব কয়লা ব্যবহার করা হয়।

সম্প্রতি গোবরাকুড়া বন্দরে গিয়ে দেখা যায়, ভারত থেকে কয়লা নিয়ে ঢুকছে একটার পর একটা ট্রাক। প্রবেশপথে দায়িত্বরত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা ট্রাকে কোনো অবৈধ মালপত্র আছে কি না, তা তল্লাশি করে দেখছেন। এরপর কয়লার চালানের কাগজপত্র দায়িত্বরত কাস্টমস ও ভ্যাট কর্মকর্তাকে দেখিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে ট্রাকগুলো। কোনো ট্রাকের কয়লা মাপা হয়নি। গত ৪ জানুয়ারি এই প্রক্রিয়ায় অর্ধশত ট্রাক কয়লা নিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে গোবরাকুড়া স্থলবন্দর দিয়ে।

ট্রাক থেকে কয়লা নামানোর কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা জানান, তাঁদের হিসাবে প্রতি ট্রাকে ২০-২২ টন কয়লা ধরে। তাঁরা দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে তা ট্রাক থেকে নামান।

বর্তমানে প্রতি টন কয়লা থেকে ২১৬৫.২৫৭ টাকা রাজস্ব পায় সরকার। সেই হিসাবে প্রতি ট্রাকেই ১৭ হাজার ৩২২ টাকার বেশি রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছেন অসাধু আমদানিকারকরা।

তবে কয়েকজন আমদানিকারক দাবি করেছেন, বন্দরে ওজন মাপার স্কেল না থাকায় প্রায় সময় এলসিতে উল্লেখ করা পরিমাণের চেয়ে কম কয়লা পান তাঁরা। আর ভারত থেকে আসা ট্রাকগুলো সে দেশেই ওজন করে এপারে পাঠানো হয়। তাই কখনোই বেশি আনার সুযোগ নেই।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, কিছুদিন আগেও কড়ইতলি বন্দরের নিয়ন্ত্রণ ছিল এমপি জুয়েল আরেং এবং হালুয়াঘাট উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আলী আজগরের হাতে। গত বছর করোনায় আক্রান্ত হয়ে আলী আজগর মারা যাওয়ার পর জুয়েল আরেংয়ের একক নিয়ন্ত্রণে চলে যায় বন্দর। তিনি গোবরাকুড়া স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতিও।

বন্দর থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আমদানিকারক জানান, গোবরাকুড়া আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সদস্য তিন শতাধিক। কিন্তু এখন সক্রিয় আছেন মাত্র।

BBS cable ad

ক্রয়-বিক্রয় এর আরও খবর: