তৈরি পোশাকশিল্পে বন্ড সুবিধার অপব্যবহার ও এর প্রতিকার
বিডিএফএন টোয়েন্টিফোর.কম
কয়েক দিন আগে আমাদের দেশের রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্পে বন্ড সুবিধার অপব্যবহার নিয়ে একটি দৈনিক পত্রিকার সম্পাদকীয় কলামে উল্লেখিত মন্তব্যের প্রতি আমার দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। মন্তব্যটি এরূপ- ‘সরকারের উচিত হইবে বন্ড সুবিধা গ্রহণকারী এবং তদারকি কর্তৃপক্ষের উভয়ের ব্যাপারে সতর্ক পদক্ষেপ লওয়া। এইভাবে একটি দেশ চলিতে পারে না, চৌর্যবৃত্তি বা অনিয়ম কমবেশি পৃথিবীর সকল দেশেই রহিয়াছে, কিন্তু জবাবদিহিতামুক্ত পরিবেশ বোধ করি আর কোথাও খুঁজিয়া পাওয়া যাইবে না।’ রপ্তানির উদ্দেশ্যে প্রদত্ত কাঁচামাল আমদানির শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়ার ফলেই বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্প দ্রুত প্রসার লাভ করেছে এবং দেশের জন্য মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা আনতে পারছে। কিন্তু একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীর অপকর্ম ও অনিয়মের কারণে সৃষ্ট নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির জন্য এ খাতের ব্যবসায়ীদের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। নিঃসন্দেহে এটি সবার জন্য বিব্রতকর।
মূলত গত শতাব্দীর আশির দশকে বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনবিআরের যৌথ কার্যক্রম ও পদক্ষেপ অর্থাৎ সরকারের নীতি-সহায়তার কারণে পোশাক খাত বর্তমান অবস্থানে আসতে পেরেছে। পোশাক খাত থেকেই এখন দেশের রপ্তানি আয়ের ৮৫ শতাংশ আসে। মধ্যবিত্ত ও গরিবের কর্মসংস্থানের দিক থেকেও পোশাক খাত শীর্ষে। যে দুটি সরকারি নীতি-সহায়তা তৈরি পোশাক খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে সেগুলো হচ্ছে, শুল্কমুক্ত কাঁচামাল আমদানি করে বন্ডেড ওয়্যারহাউসে রাখার সুবিধা এবং বিলম্বে দায় পরিশোধসহ ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি সুবিধা। এ দুটি সুবিধা প্রাপ্তির কারণে বড় অঙ্কের পুঁজি ছাড়াই গার্মেন্ট কারখানা প্রতিষ্ঠা করে উৎপাদনে যাওয়া সম্ভব হয়েছে, ফলে বিপুলসংখ্যক শিক্ষিত উদ্যোক্তা সৃষ্টি হয়েছে, যারা রপ্তানি বাজার খোঁজার ক্ষেত্রেও পারদর্শিতা দেখিয়েছে। ক্রমান্বয়ে সরকার আরও অনেক সুযোগ-সুবিধা দিয়ে এ খাতকে প্রসারের পথ সুগম করেছে। এ শিল্প উদ্যোক্তাদের কর হারও তুলনামূলকভাবে অন্যান্য শিল্পের চেয়ে কম। যেখানে ন্যূনতম করপোরেট করহার ৩০ শতাংশ, সেখানে এ শিল্পের করহার ১০-১২ শতাংশ। এ শিল্পে রয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে নগদ সহায়তা এবং ব্যাংক কর্তৃক স্বল্প সুদে ঋণ সহায়তা। বন্দর ব্যবহারের ক্ষেত্রেও রয়েছে অগ্রাধিকার।
এতসব নীতি-সহায়তা ভোগ করা সত্ত্বেও একশ্রেণির গার্মেন্ট উদ্যোক্তা বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করে আসছে। এরা বিনা শুল্কে বিদেশ থেকে কাপড় এনে খোলাবাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে। পুরান ঢাকার ইসলামপুরে বন্ডের বিদেশি কাপড়ের রমরমা ব্যবসা। শুধু কাপড়ই নয়, তৈরি পোশাকশিল্পের সহযোগী এক্সেসরিজ প্রস্তুতকারীদেরও অনেকে শুল্কমুক্ত আমদানিকৃত দ্রব্যাদি (যেমন- বিভিন্ন ধরনের কাগজ, প্লাস্টিক, পলিমার ইত্যাদি) খোলাবাজারে বিক্রি করে দেয়। এদের একটি বড় মার্কেট রয়েছে ঢাকার নয়াবাজারে। অভিযোগ রয়েছে, এসব অনিয়মের সঙ্গে কাস্টমস ও ব্যাংক কর্মকর্তা এবং তৈরি পোশাক খাতের বিভিন্ন অ্যাসোসিয়েশনের (যেমন- বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিজিএপিএমইএ) একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা জড়িত।
সাধারণত শুল্কমুক্তভাবে আমদানিকৃত কাঁচামাল বন্দরের কাস্টম কমিশনারেটে খালাস করার পর এগুলো সরাসরি নির্ধারিত বন্ডেড ওয়্যারহাউসে যাওয়ার কথা। বন্দর কাস্টমস কমিশনারের অফিস আমদানির তথ্য বন্ড কমিশনারেট অফিসে প্রেরণ করবে। ওয়্যারহাউসের রেজিস্টার ও পাস বইতে লিপিবদ্ধ করার পর রপ্তানির উদ্দেশ্যে পোশাক প্রস্তুতে এসব কাঁচামাল ব্যবহৃত হবে। কিন্তু তা না করে অসাধু ব্যবসায়ীরা বন্দর কাস্টমস অফিস থেকে সরাসরি বাজারে এনে গোপনে বিক্রি করে দেয়। বন্ড ব্যবস্থা চালুর প্রথমদিকে পণ্যের প্রাপ্যতা অর্থাৎ বন্ড লাইসেন্সে নির্ধারিত পরিমাণ পোশাক তৈরিতে কী পরিমাণ কাঁচামাল (কাপড় ও অন্যান্য এক্সেসরিজ) ব্যবহৃত হবে তা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট নির্ধারণ করে দিত। শিল্পের ব্যাপক বিস্তৃতির কারণে দ্রুততার সঙ্গে পণ্যের প্রাপ্যতা বা ইউডি (ইউটিলাইজেশন ডকুমেন্টস) দেওয়ার সুবিধার্থে গার্মেন্ট ব্যবসায়ীদের দাবি অনুযায়ী ইউডি দেওয়ার ক্ষমতা বর্তমানে দেওয়া হয়েছে তৈরি পোশাক খাতের ট্রেডবডি বিজিএমইএ’র ওপর। একইভাবে ইউপি (ইউটিলাইজেশন পারমিট) দেওয়ার ক্ষমতা চাচ্ছে বিজিএপিএমইএ, যদিও এক্সেসরিজ প্রস্তুতকারক অ্যাসোসিয়েশনে এ ক্ষমতা এখনো দেওয়া হয়নি। তবে এ খাতেও অনিয়ম থেমে নেই।
ইউডি ইস্যুর চেয়েও এর সংশোধনী দেওয়ার কারণেই অনিয়ম ও দুর্নীতি বেশি হচ্ছে। বর্তমানে ইউডি প্রদান ডিজিটাল বা অনলাইন ব্যবস্থায় করা হলেও ইউডি সংশোধন অনলাইনে করা হয় না। ফলে বন্ড অফিস তাৎক্ষণিক তথ্যাদি জানতে পারে না। প্রশাসনিক দক্ষতা ও জনবলের অভাবে বন্ড কমিশনারেট যথাযথ অডিট করা ও পাস বই চেক কিংবা ওয়্যারহাউস সরেজমিন পরিদর্শন করে রপ্তানির উদ্দেশ্যে গার্মেন্ট প্রস্তুতে আমদানিকৃত মালামাল ব্যবহৃত হলো কিনা তা নিয়মিত দেখতে বা যাচাই করতে পারে না।
বন্ড সংক্রান্ত এনবিআরের আইন-কানুনে কোনো ঘাটতি আছে বলে মনে হয় না। লাইসেন্স প্রাপ্তি, নবায়ন ও বাতিলের বিষয়ে কাস্টমস আইন অত্যন্ত কঠিন। কিন্তু প্রভাবশালী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের প্রভাব এবং নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি কর্তৃপক্ষের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে কঠিন আইন ও পদ্ধতি সহজ হয়ে যায়।
প্রতিবছর বন্ড সুবিধা দিয়ে সরকার হাজার হাজার কোটি টাকা শুল্ককর অব্যাহতি দিয়ে থাকে। একশ্রেণির উদ্যোক্তা একদিকে এসব সুবিধা গ্রহণ করে সরকারের রাজস্ব কম দিচ্ছে, অন্যদিকে অবৈধভাবে বাজারে বিক্রি করে লাভবান হচ্ছে। রপ্তানির ভুয়া কাগজপত্র তৈরি হচ্ছে। অনেক সময় দেখা যায় ফ্যাক্টরি বন্ধ, কোনো উৎপাদন নেই, অথচ বন্ধ কারখানার নামে কাঁচামাল আমদানি করে বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে। বিষয়টি এতই ওপেন সিক্রেট হয়ে গেছে যে, একশ্রেণির অসাধু উদ্যোক্তা ব্যবসায়ী অনিয়মকেই নিয়মে পরিণত করেছে। গার্মেন্টশিল্পে ব্যবহারের জন্য সুতা আমদানির ব্যবস্থাও রয়েছে। একই উপায়ে আমদানিকৃত সুতাও বাজারে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। এসব অবৈধ সুতা সিরাজগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী ও বাবুরহাট প্রভৃতি স্থানে বিক্রি হচ্ছে।
বন্ডের অপব্যবহারের ফলে আমদানিকৃত কাপড় ও সুতা তুলনামূলকভাবে সস্তায় পাওয়া যায়। সেজন্য দেশে তৈরি কাপড়ের মিল ও স্পিনিং মিলের তৈরি সামগ্রী বিক্রি হচ্ছে না বা প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছে না। সম্ভাবনাময় দেশীয় কাপড় ও সুতাশিল্প এভাবে মার খাচ্ছে। অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, শ্রমিক বেকার হচ্ছে।
বন্ড সুবিধার অপব্যবহারে যে কাপড় ও সুতা বাজারে বিক্রি করা হয় তার ফলে সরকার শুল্ককর থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অন্যদিকে ইসলামপুর, সদরঘাট, নয়াবাজার প্রভৃতি যেসব স্থানে বন্ডের মাধ্যমে আমদানিকৃত কাপড় ও কাগজ বিক্রি হয় সেসব ব্যবসায়ী ভ্যাটও ফাঁকি দেয়। আবার অবৈধভাবে বন্ড অপব্যবহারকারীরা মানি লন্ডারিংয়ের সঙ্গে জড়িত বলেও শোনা যাচ্ছে। ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎ করে বিদেশে পলায়নকারী কেউ কেউ বন্ড সুযোগ অপব্যবহারকারী বলেও অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।
সরকার বন্ড ব্যবস্থা আধুনিকীকরণ ও স্বচ্ছতা আনয়নের জন্য ২০১৭ সালে ‘বন্ড ম্যানেজমেন্ট অটোমেশন’ প্রকল্প গ্রহণ করে। ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে দুই বছরের জন্য এ প্রকল্প চালু হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হওয়ায় প্রকল্পটি ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে এনবিআর ও এর বন্ড কমিশনারেট অফিসের লাইসেন্সিং অর্থাৎ লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন, বাতিল প্রভৃতি অনলাইনভিত্তিক করা হবে। সংশ্লিষ্ট ট্রেডবডি বা ক্ষেত্রবিশেষে বন্ড কমিশনারেট কর্তৃক ইস্যুকৃত ইউপি বা ইউডি এবং পরে এদের সংশোধনীও অনলাইনভিত্তিক হবে। কোম্পানির ব্যাংক লেনদেন, আমদানি-রপ্তানি সবকিছুর তথ্য বন্ড কমিশনারেট অনলাইনে পাবে, যাতে আমদানিকৃত কাঁচামালের পরিমাণ ও ব্যবহার সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়। এ প্রকল্প কৃতকার্যতার সঙ্গে বাস্তবায়িত হলে উদ্যোক্তা কোম্পানি, ট্রেডবডি ও বন্ড কমিশনারেটগুলোর তথ্যের গরমিল থাকবে না।
ইউডি এবং ইউপি ও এদের সংশোধনীর মাধ্যমে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত কাঁচামাল আমদানিই বন্ড অনিয়মের মূল কারণ। দেখা যায়, অনেক বড় বড় উদ্যোক্তার গার্মেন্টের কাপড়ও ইসলামপুর বা সদরঘাটের বাজারে পাওয়া যায়। এরা রপ্তানির জন্য নির্ধারিত তৈরি পোশাক প্রস্তুতের পর অবশিষ্ট কাপড় যা ইউডি এবং সংশোধনীর মাধ্যমে অতিরিক্ত বরাদ্দ নিয়ে আমদানি করছে সেগুলো অবৈধভাবে বিক্রি করে দেয়। অনিয়মকেই এরা নিয়মে পরিণত করেছে।
বন্ড ব্যবস্থা ডিজিটাইজেশন ছাড়াও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং কাস্টমস কমিশনারেটগুলোকে নজরদারিতে কঠোর হতে হবে। ২০১৯ সালে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেট যুগপৎভাবে অভিযান পরিচালনা করে ট্রাকসহ বন্ডের কাপড়, কাগজ বা অন্য কাঁচামাল বাজারে বিক্রির জন্য নেওয়ার পথে আটক করা শুরু করে। পরে ইসলামপুর, সদরঘাট প্রভৃতি বাজারের ব্যবসায়ীদের গোডাউন থেকেও অবৈধভাবে বিক্রীত বন্ডের কাপড় উদ্ধার করে। একইভাবে নয়াবাজার থেকে কাগজ এবং নারায়ণগঞ্জ ও সিরাজগঞ্জ থেকে সুতা উদ্ধার করে এবং চোরাচালানের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। বন্ড কমিশনারেটগুলোর অভিযান ও প্রতিরোধমূলক কার্যকলাপে বন্ড সুবিধার অপব্যবহার অনেকাংশে কমে গিয়েছিল। ফলে দেশীয় কাপড় ও সুতা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন বাড়ে এবং তারা লাভবান হন। এনবিআর ও বন্ড অফিসের নজরদারি ও অভিযান বন্ধ হওয়ার পর বর্তমানে আবার লাগামহীনভাবে বন্ডের মাধ্যমে আমদানিকৃত কাপড় ও অন্যান্য দ্রব্যাদি বিক্রি হচ্ছে।
গার্মেন্ট কারখানাগুলোর প্রয়োজনে বিদেশ থেকে সুতা আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এখানেও প্রয়োজনের অতিরিক্ত সুতা আমদানি হয়। তা ছাড়া ৩০ কাউন্টের সুতার স্থলে ৮০ কাউন্ট সুতা আমদানি করে। যার মূল্য প্রথমোক্ত কাউন্টের সুতার চেয়ে আড়াই গুণ বেশি। একদিকে শুল্ক ফাঁকি, অন্যদিকে এ সুতা অধিক মূল্যে বাজারে বিক্রি করা হয়। সুতার অবৈধ চোরাচালানে বাজার সয়লাব। দেশীয় সুতা বিক্রি হয় না, ফলে স্পিনিং মিল বন্ধ হচ্ছে। নজরদারি না থাকায় কাপড়ের মতো সুতার অবৈধ বাজার রমরমা। আমাদের দেশের একশ্রেণির ব্যবসায়ীর দেশপ্রেমের বিরাট ঘাটতি রয়েছে। কৃত অপরাধের জন্য মামলা হলে আসামিরা উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে পুনরায় আগের কাজে ফিরে আসে। আইনের মারপ্যাঁচে রাজস্ব আদায় প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হয়, আবার সরকারি কর্তৃপক্ষ আইন বিষয়ে গাফিলতি বা অবহেলা করলে অপরাধীরা পার পেয়ে যায়।
উল্লিখিত অব্যবস্থা ও অনিয়ম দূর করতে না পারলে সরকারি রাজস্বের হাজার হাজার কোটি টাকা শুল্ককর অব্যাহতির কোনো সুফল তো পাওয়া যাবেই না, বরং আরও কর ফাঁকি, রপ্তানি হ্রাস এমনকি ভুয়া রপ্তানি কিংবা রপ্তানি তথ্য গোপন করে মানি লন্ডারিংয়ের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এ অবস্থায় অটোমেশনের মাধ্যমে যথাশিগগির সরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অভিন্ন নেটওয়ার্কে আনতে হবে। অটোমেশনে বিলম্ব কাম্য নয়। তা ছাড়া এনবিআর কর্মকর্তাদের কাছে অটোমেশন শতভাগ গ্রহণযোগ্য ও অংশীদারিত্ব থাকতে হবে। স্থল ও সমুদ্রবন্দরের কাস্টম অফিসগুলোতে সুতা যাচাই করার অত্যাধুনিক মেশিন, কনটেইনার স্ক্যানার ইত্যাদি স্থাপন করে শুল্কায়ন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনতে হবে। সর্বোপরি সরকারি অফিসের কর্মচারীদের পেশাদারিত্ব, সততা ও দেশপ্রেমের সঙ্গে কাজ করে কড়া নজরদারির মাধ্যমে বন্ড সুবিধার অপব্যবহার রোধ করতে হবে।
কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের জনবল বৃদ্ধি করে নজরদারি, অডিট, পরিদর্শন ইত্যাদি নিয়মিত সম্পাদন করতে হবে। ঢাকা বন্ড কমিশনারেটকে সম্প্রসারিত ও বিভক্ত করে দুটি অফিস করার বিষয়টি অনুমোদিত হলেও এর বাস্তবায়ন বিলম্বিত হচ্ছে। ঢাকা বন্ড উত্তর ও বন্ড দক্ষিণ এ দুটি অফিস স্থাপিত হলে ওপরের কাজগুলো সঠিকভাবে সম্পন্ন করা যাবে, ফলে বন্ধ কারখানার নামে কাঁচামাল আমদানি কিংবা রপ্তানি না করেও ভুয়া রপ্তানি দেখিয়ে কাঁচামাল বাজারে বিক্রি হ্রাস পাবে। প্রয়োজনে কাস্টমস আইন যুগোপযোগী করে অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। অনির্দিষ্টকাল অনিয়ম ও দুর্নীতি চলতে দেওয়া যায় না।