South east bank ad

কারা আসছেন নতুন ইসিতে

 প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   নির্বাচন কমিশন

বিডিএফএন টোয়েন্টিফোর.কম

বিদায়ের পথে কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন (ইসি)। মাত্র দুই মাস মেয়াদ আছে এই নির্বাচন কমিশনের। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি বিদায় নেবেন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা। এর পরই সাংবিধানিক সংস্থাটিতে দায়িত্ব নেবেন নতুন ব্যক্তিরা, যাদের অধীনে হবে আগামী সংসদ নির্বাচন। তবে কারা আসছেন নতুন ইসিতে তা নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। নতুন নির্বাচন কমিশনারদের সম্ভাব্য তালিকার শীর্ষে রয়েছে সাবেক আমলা, বিচারপতি, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাদের নাম। এদিকে বিগত সময়ের মতো এবারও সার্চ কমিটির মাধ্যমে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের আভাস দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এ জন্য আগামী জানুয়ারিতে সার্চ কমিটি গঠন করা হবে। সার্চ কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে সংশ্লিষ্ট দফতরে। নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, আগামী সংসদ নির্বাচন সবার জন্য চ্যালেঞ্জ। এ জন্য নিরপক্ষে নির্বাচন কমিশন গঠন করা প্রয়োজন, যারা সঠিকভাবে নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।

নতুন ইসিতে কারা আসছেন? বিষয়টি নিয়ে সরগরম হয়ে উঠছে রাজনীতির মাঠ। বর্তমান নির্বাচন কমিশন নিয়ে নানা বিতর্ক থাকায় নতুন কমিশন কেমন হবে তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে বিভিন্ন মহলে। নতুন ইসি গঠনে আইন তৈরি নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে বক্তব্য দিচ্ছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সার্চ কমিটির মাধ্যমেই এবারও ইসি গঠন হবে। তবে নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়ে সাধারণ মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। গ্রাম-গঞ্জের চায়ের আড্ডার আলোচনায় এখন নির্বাচন কমিশন। কেননা চলমান ইউপি নির্বাচন নিয়ে নানা বিতর্ক হওয়ায় নতুন ইসি গঠন নিয়ে সাধারণ মানুষের আগ্রহ বেশি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, নতুন নির্বাচন কমিশনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের সম্ভাব্য তালিকায় সাবেক আমলা, বিচারপতি, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাদের নাম রয়েছে। নতুন সিইসি হিসেবে কাকে নিয়োগ দেওয়া হতে পারে এ তালিকায়ও উঠে এসেছে বেশ কয়েকজনের নাম। একটি সূত্র জানিয়েছে, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য সাবেক সচিব, অতিরিক্ত সচিব, সাবেক জেলা জজ, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাদের প্রাথমিক তালিকা তৈরি হয়েছে। তালিকা ধরে তাদের অতীত ইতিহাস যাচাই-বাছাই চলছে। এর মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) পদে এক ডজন নাম নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। কমিশনার পদের জন্য ২০-২৫ জনের নাম আলোচনায় রয়েছে। তবে নির্বাচন কমিশনার পদে বিগত দুটি কমিশনের মতোই এবারও একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা, একজন সাবেক জেলা জজ, সিভিল প্রশাসনের সাবেক একজন কর্মকর্তা ও একজন নারী সদস্য নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নির্বাচন কমিশন গঠনের এখতিয়ার রাষ্ট্রপতির; সংবিধানে বলা আছে, একটি আইনের অধীনে তিনি এ নিয়োগ দেবেন। তবে বিগত সময়ের মতো এবার সার্চ কমিটির মাধ্যমে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের আভাস দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এ জন্য আগামী জানুয়ারিতে সার্চ কমিটি গঠন করা হবে। এরপর গঠন হবে নতুন নির্বাচন কমিশন। তবে সার্চ কমিটি নির্বাচন কমিশন ঠিক করে দেবে না, তারা রাষ্ট্রপতিকে সহায়তা করতে কিছু নাম বাছাই করে দেবে। রাষ্ট্রপতি তা থেকে নিয়োগ দেবেন। স্বাধীনতার পর ১২ জন সিইসি ও ২৭ জন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ পেয়েছেন।

কমিশনের গঠন প্রক্রিয়া সম্পর্কে সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনারকে লইয়া বাংলাদেশের একটি নির্বাচন কমিশন থাকিবে এবং উক্ত বিষয়ে প্রণীত কোন আইনের বিধানাবলি-সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগদান করিবেন।’ সংবিধানের আলোকে রাষ্ট্রপতি সব সময় সিইসি ও ইসি নিয়োগ দিলেও ২০১২ সালে কমিশন হয় সার্চ কমিটির মাধ্যমে।

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করে ২০১২ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি একটি সার্চ কমিটি গঠন করেন। তাদের মনোনীত ব্যক্তিদের মধ্য থেকে নিয়োগ দেন নতুন কমিশনের সদস্যদের। এর পর ২০১৭ সালে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদও একই পদ্ধতি অনুসরণ করেন। তবে ২০১২ সালে চার সদস্যের সার্চ কমিটির পরিবর্তে ২০১৭ সালে ছয় সদস্যের কমিটি করেছিলেন রাষ্ট্রপতি। ওই কমিটিতে দুই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে নেওয়া হয়েছিল।

নিরপেক্ষ ইসি চান বিশেষজ্ঞরা : নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আইন তৈরি করে নির্বাচন কমিশন গঠন করলে ভালো হতো। তবে বিগত সময়ে দুটি সার্চ কমিটির মাধ্যমে যে ইসি গঠন হয়েছিল, তারা ভালো কিছু করতে পারেনি। তিনি বলেন, ‘আমরা এমন নির্বাচন কমিশন চাই, যারা অন্তত নিজেদের সাংবিধানিক দায়িত্বটুকু পালন করবে। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের আমলে নির্বাচনের নতুন মডেল দেখা যাচ্ছে। তা হচ্ছে বুথ দখল। বর্তমান কমিশন শুধু মুখে বলে, কাজের কাজ কিছুই করে না। তাই নতুন ইসির কাছে প্রত্যাশা বেশি কিছু নেই।’ নতুন ইসি গঠনের বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আইন তৈরি করে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা প্রয়োজন ছিল। তাহলে যোগ্য ব্যক্তিরা নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ পেত।

তিনি বলেন, ‘সার্চ কমিটির মাধ্যমে আগে যেমন ইসি হয়েছে। আগামীতেও তেমনি ইসি হবে। তবে আমাদের চাওয়া হচ্ছে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন, যারা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে, যারা সরকারের অনুগত হবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে সুষ্ঠু-গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয় না। আমরা নির্বাচন নিয়ে যে সংকটের মধ্যে রয়েছি, নতুন ইসি যেন সেই সংকট উত্তরণের জন্য কাজ করে।’

যেভাবে গঠন হয় হুদা কমিশন : নতুন ইসি গঠন প্রশ্নে রাষ্ট্রপতি ২০১৬ সালের ১৮ ডিসেম্বর থেকে ২০১৭ সালের ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত ৩১টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করেন। অধিকাংশ দলের সুপারিশ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি ইসি গঠনের সুপারিশ তৈরির জন্য ২০১৭ সালের ২৫ জানুয়ারি ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করেন। ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সিইসি ও অন্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য ১০ জনের নাম সুপারিশ করার সময়সীমা দেওয়া হয় সার্চ কমিটিকে। ১০ জনের নামের তালিকা চূড়ান্ত করতে সার্চ কমিটি নিজেদের মধ্যে চার দফা বৈঠক করে। প্রথম বৈঠকে কার্যপরিধি ঠিক করার পাশাপাশি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে অংশ নেওয়া ৩১টি রাজনৈতিক দলের কাছে সর্বোচ্চ পাঁচটি করে নাম নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। দ্বিতীয় বৈঠকে ২৬টি রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে পাওয়া ১২৫টি নাম থেকে ২০ জনের সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি এবং তৃতীয় বৈঠকে ওই তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের সম্পর্কে যাচাই-বাছাই ও বিচার-বিশ্লেষণ করা হয়। সর্বশেষ বৈঠকে ১০ জনের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়। নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে ১০ জনের নাম চূড়ান্ত করার পর ২০১৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের হাতে সেই তালিকা তুলে দেয় সার্চ কমিটি। এরপর ওই দিন নতুন ইসি গঠন করেন রাষ্ট্রপতি। পরে ১৫ ফেব্রুয়ারি শপথ নেন সিইসি কে এম নূরুল হুদাসহ নতুন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সদস্যরা। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন এ কমিশনের অন্য সদস্যরা হলেন মাহবুব তালুকদার, রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী। সেই হিসাবে আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি তাদের মেয়াদ পাঁচ বছর পূর্ণ হবে।

BBS cable ad

নির্বাচন কমিশন এর আরও খবর: