South east bank ad

কারখানা চালু রেখে মানুষের চাহিদা পূরণ করুন —প্রধানমন্ত্রী

 প্রকাশ: ২১ নভেম্বর ২০২২, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   মন্ত্রনালয়

কারখানা চালু রেখে মানুষের চাহিদা পূরণ করুন —প্রধানমন্ত্রী

কারখানা চালু রেখে মানুষের চাহিদা পূরণের চেষ্টা অব্যাহত রাখতে দেশের শিল্প মালিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের কারণে অনেক দেশই অর্থনৈতিক মন্দার ঘোষণা দিয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত আমি বলতে পারি, বাংলাদেশ এত খারাপ অবস্থায় নেই। আমি দেশের শিল্পপতিদের প্রতি অনুরোধ জানাব, তারা যেন কারখানার কার্যক্রম চালু রেখে অন্তত নিজের দেশের মানুষের চাহিদা পূরণের প্রচেষ্টা করেন। কারণ আপনাদের জন্য অনেক সুযোগ-সুবিধা আওয়ামী লীগ সরকার করে দিয়েছে।

গতকাল বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) আওতাধীন ৫০টি শিল্প ও অবকাঠামোর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন তিনি।

আওয়ামী লীগ সরকার ব্যবসায়ীদের ব্যবসাবান্ধব নানা সুযোগ-সুবিধা করে দিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন আর সেই দিন নেই যে আপনাদের কোনো কাজ পেতে হাওয়া ভবনের পাওনা পরিশোধ করতে হয় বা এখানে সেখানে ছোটাছুটি করতে হয়। আমরা দেশকে একটা শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছি। ব্যবসায়ীর ব্যবসার ক্ষেত্র প্রস্তুত করা, সব ধরনের সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা আমরা করে দিচ্ছি।

বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানগত সুবিধা, আঞ্চলিক যোগাযোগ, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিশাল বাজারের প্রসঙ্গ তুলে ধরে অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় বিনিয়োগে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান জানান বেজা গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এখন থেকে যে দেশ আসবে, আমরা তাদের জন্য আলাদা জায়গা দেব। যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন করে দিয়েছি। পদ্মা সেতু হওয়ার পর দক্ষিণাঞ্চলে একেবারে অল্প সময়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।

সড়কপথের পাশাপাশি নৌপথ, রেলপথ, আকাশপথের উন্নয়নেও সরকার কাজ করে যাচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়ক চার লেন করেছি। তবে এখন মনে হচ্ছে এটা ছয় লেন করলেই ভালো হতো। আগামী দিনে এ পথ আরো উন্নত করার প্রত্যাশা আমাদের আছে। ঢাকা থেকে যেন রেলপথে আরো অল্প সময়ের মধ্যে চট্টগ্রামে পৌঁছানো যায়, সেজন্য রেললাইনের নতুন একটি অ্যালাইনমেন্টও আমরা চিন্তা করছি। কভিড-১৯ মহামারী ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক চাপ কমে গেলেই এ কাজগুলো আমরা করতে পারব।

দেশকে আরো এগিয়ে নেয়ার প্রত্যয় জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, নতুন শিল্পাঞ্চলগুলোর সব ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা আমরা করে দিচ্ছি। যেমন অগ্নিনির্বাপণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বা সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন সংস্থা, তারাও সক্রিয়ভাবে সেখানে কাজ করছে, অবকাঠামো উন্নয়নে আমরা কাজ করছি।

চাকরির পেছনে না ঘুরে তরুণদের উদ্যোক্তা হওয়ার পরামর্শ দেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, অন্য লোকের চাকরির সুযোগ করে দেন। নিজের মাস্টার নিজেই হোন, আমাদের যুবসমাজের প্রতি এটাই আমার আহ্বান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের কৃষিপ্রধান অর্থনীতি। কিন্তু শিল্পায়ন ছাড়া একটা দেশের উন্নতি হতে পারে না, কর্মসংস্থান তৈরি হয় না। আমাদের কৃষিও যেমন অব্যাহত রাখতে হবে, পাশাপাশি আমাদের শিল্পায়নও করতে হবে। সে কথা চিন্তা করে আমরা বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন খাত উন্মুক্ত করে দিয়েছি। পাশাপাশি তাদের উৎসাহিত করার ব্যবস্থাও করেছি। কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর দিকেও আমরা বিশেষ দৃষ্টি দিয়েছি। কারণ খাদ্য হচ্ছে মানুষের সব থেকে বড় চাহিদা। আমরা দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছি।

টানা তিন মেয়াদ সরকারে থাকার কারণে দেশে কর্মসংস্থান, উৎপাদন, রফতানি, মাথাপিছু আয় ও ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে বলে মনে করেন সরকারপ্রধান।

কৃষির পাশাপাশি দেশের উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের স্বার্থে শিল্পায়নের ওপর জোর দেয়া হলেও যেখানে সেখানে কারখানা তৈরি করে ফসলি জমি নষ্ট করতে দেয়া হবে না বলে আবারো জানান সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, শিল্পায়ন শুধু বাংলাদেশের একটি অঞ্চলভিত্তিক নয়, প্রতিটি এলাকায় যেন হতে পারে সে ব্যবস্থা নিয়েছি। শুধু তা-ই নয়, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার জন্য খাদ্যের ব্যবস্থা করতে কৃষি নিয়ে গবেষণা করছি। যার মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন বাড়িয়েছি। খাদ্য উৎপাদনের পাশাপাশি শিল্পাঞ্চলও করতে হবে। তবে যেখানে সেখানে যেন শিল্প-কারখানা গড়ে না ওঠে। কৃষিজমি, তিন ফসলি জমি কোনোভাবেই নষ্ট করা যাবে না।

যেখানে শিল্পাঞ্চল গড়ে উঠবে সেখানে স্থানীয়দের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে ব্যবসায়ীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, যেসব শ্রমিক কাজ করবেন, তাদের ভালো-মন্দও দেখতে হবে। তাদের জন্য ভালো আবাসন ব্যবস্থা করতে হবে, তাদের পরিবারের সুযোগ-সুবিধা দেখতে হবে।

একই দিন ভারতের আসাম বিধানসভার স্পিকার বিশ্বজিৎ দাইমারি গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাতে আগামী বছর পাইপলাইনের মাধ্যমে ভারত থেকে জ্বালানি তেল আমদানি শুরু হবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বাংলাদেশ পাইপলাইনের মাধ্যমে তেল আমদানি করতে চায়। আশা করছি, আগামী বছর এ প্রক্রিয়া শুরু করা যাবে।

বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম জানান, ১৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন (আইবিএফপিএল) প্রকল্পের লক্ষ্য ভারত থেকে বাংলাদেশে তেল পণ্য রফতানি করা। এছাড়া করোনাকালে বন্ধ হয়ে যাওয়া সীমান্ত অঞ্চলের বিভিন্ন অংশে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বর্ডার হাটগুলো আবার চালু হবে বলেও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

BBS cable ad

মন্ত্রনালয় এর আরও খবর: